বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সায়মন সাদিক। ২০১২ সালে পরিচালক জাকির হোসেন রাজুর ‘জ্বী হুজুর’ সিনেমায় মাধ্যমে অভিনয়ে পা রাখেন তিনি। এরপর একই নির্মাতার ‘পোড়ামন’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। ধীরে ধীরে এই নায়ক হয়ে ওঠেন নির্মাতাদের আস্থার প্রতীক। তাঁর আট বছরের ক্যারিয়ারে ২৩টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে আরও ৯টি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
১৯৮৫ সালের ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ সদরের কলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের দেয়া নাম সাদিক মোহাম্মদ সাইমন হলেও চলচ্চিত্রে সাইমন সাদিক হিসেবেই পরিচিত।
তিনি বলেন, আমার নাম সাদিক মোহাম্মদ সাইমন। চলচ্চিত্রে সেটা সংক্ষেপ করেছেন আমার ওস্তাদ জাকির হোসেন রাজু স্যার। দিয়েছেন সায়মন সাদিক। সেই নামেই আমি পরিচিত, আর এটাতেই আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অন্য নাম আসার কথা ছিলো। প্রযোজক আব্বাস উল্যাহ শিকদার সাহেব একবার আমার নাম পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজু স্যার বললেন এ নাম পরিবর্তন করার দরকার নেই।
জ্বি হুজুর সিনেমায় অভিনয় শুরু করার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই অভিনেতার। ইদানিং বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার প্রথম ছবি ‘জি হুজুর’, যেটা ২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছিল। কাজ শুরু করেছিলাম ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর। এখন পর্যন্ত আমার মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ২৩ টি। এখন বেশকিছু সিনেমা নিয়ে কাজ করছি। আল্লাহর রহমতে হাতে ৯টি সিনেমা আছে।
একান্নবর্তী পরিবারে বেড়ে ওঠা এই অভিনেতার বাবা সাদিকুল ইসলাম সাদিক এলাকায় পরপর তিন বারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক পরিবার হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে একটু ঝোঁক ছিলো তার।
তিনি বলেন, আমি কোনোদিন ভাবিনি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হবো, চেয়েছি মানুষের কাছে থাকতে। সে জায়গা থেকে বলা চলে আমি কিছুটা হলেও সফল। মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছি বলেই হয়তো আমি আজকের সাইমন। ভালো কিছু সিনেমা করতে চায়। ভালো সিনেমা করলেই দর্শকদের মাঝে, মানুষের মাঝে থাকা যাবে। ভালো মানুষ হওয়া যাবে। মানুষকে নিয়ে চলতে চায়।
চলচ্চিত্রে আসার আগে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সাইমন। এখন আর ব্যবসা করছেন না তিনি। সাইমন বলেন, এখন আর ব্যবসা করছি না। আমার ধ্যান, জ্ঞান, ভালোবাসা শুধুই সিনেমা। আজীবন অভিনয় করে যাবো, এটাই আমার বড় স্বপ্ন। এর চেয়ে বড় স্বপ্ন আর হতে পারে না। অভিনয় প্রত্যেক দিনই স্বপ্নের মতো।
প্রথম সিনেমা জ্বি হুজুর নিয়ে সায়মন বলেন, জ্বি হুজুর সিনেমায় কিন্তু জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর ব্যাপার ছিলো না। ইসলাম কি বলে সেটাকে উপস্থাপন করার দায়িত্ব ছিল হুজুর চরিত্রে। সেখানে সে ইসলামের পক্ষে কথা বলেছে।
রাজনীতিতে জ্বি হুজুরের ব্যবহার নিয়ে বলতেও বাদ রাখেননি বর্তমান সময়ের সুপার হিট এই নায়ক, জানালেন নিজের দৃঢ়তার কথাও। তিনি বলেন, আমি জ্বি হুজুরে বিশ্বাসী নই। রাজনীতিতে যারা জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করতে আসে তারা ওই রকমই। আমি সিনেমায় অভিনয় করতে এসেছি। এখানে জ্বি হুজুরের সুযোগ নেই। আমার যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে পরিচালকরা আমাকে ভালোবেসে, পছন্দ করে কাজ করার সুযোগ দিবেন। প্রযোজকরা আমার পিছনে, পরিচালকের পিছনে লগ্নি করছেন। এখানে আসলে জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করে ইন্ডাস্ট্রি বা নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব না। সেখানে কোয়ালিটি ফার্স্ট। শুধু সিনেমা নয়, যেকোনো জায়গাতেই।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতেও যদি কেউ জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করে উপরে উঠতে চায় বা চেষ্টা করে, একটা সময় তার কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। কারণ এটা এমন এক প্রেক্ষাপট, এমন এক ঐতিহ্য, যেখানে নিজের কোয়ালিটি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো সাবজেক্ট আসবে না। সুতারাং জি হুজুরের কোনো জায়গা এখানে নেই। রাজনীতি বা যেকোনো পেশাতেই জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করে উপরে উঠতে চাইলে ছাকনির তলা দিয়ে আগেই পড়ে যেতে হবে।
সম্প্রতি শাপলা মিডিয়া ১০০টি সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণায় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের মতো সাইমন সাদিকও বেশ উচ্ছ্বাসিত। তিনি বলেন, ১০০টি সিনেমা মানে কিন্তু ১০০টি সিনেমা নয়। এর সঙ্গে জড়িত কতগুলো পরিবার, কতগুলো মানুষ। এছাড়া রয়েছে লাখ লাখ দর্শক; যারা কিনা হলে যায় বিনোদনের জন্যে। আর এই বিনোদনের খোরাকের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো আমাদের চলচ্চিত্র।
তিনি আরও বলেন, একটি সিনেমা হলেও কখন আসবে, মানুষ সেই আশায় থাকে। সেখানে শাপরা মিডিয়া; যারা কিনা এক সঙ্গে ১০০টি সিনেমা প্রযোজনা করতে যাচ্ছে। গুণী পরিচালকরা সিনেমাগুলো বানাবেন। সেখানে কলাকুশলী, শিল্পী থেকে শুরু করে শতশত লক্ষ লক্ষ প্রাণের খোরাক ও অর্থের খোরাক যোগাচ্ছে শাপলা মিডিয়া। সবমিলিয়ে খুবই এসেটমেন্টের দিন চলচ্চিত্রের জন্যে।
শাপলা মিডিয়ার ঘোষণায় চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনেক স্বপ্ন দেখছেন এই অভিনেতা। তিনি বলেন, যেখানে একটি সিনেমা জন্য একজন প্রযোজকও এগিয়ে আসছেন না, সেখানে একটি প্রতিষ্ঠান এক সঙ্গে ১০০টি সিনেমা নির্মাণ করতে যাচ্ছে। শুধু ঘোষণাই দেয়নি, ইতোমধ্যে তারা তারা অনেকগুলো সিনেমার কাজও সম্পন্ন করেছে।
আমার মতো একজন ক্ষুদ্র আর্টিস্টেরও তিনটি সিনেমা রয়েছে। দুইটা সিনেমার কাজ শেষ করেছি। আরও একটি কাজ শুরু হবে। প্যানডামিক সিচুয়েশন বা হলগুলোর দুর্দশার কারণে হয়তো সিনেমাগুলো মুক্তি পাচ্ছে না। সবকিছু মিলিয়ে শাপলা মিডিয়া হচ্ছে আমাদের চলচ্চিত্রের আর্শীবাদ হিসেবে এসেছে।
ভয়েস টিভি/এমএইচ