Home ভ্রমণ অপরূপ সাজে সুন্দরবন, ভ্রমণ পিয়াসুদের ভিড়

অপরূপ সাজে সুন্দরবন, ভ্রমণ পিয়াসুদের ভিড়

by Shohag Ferdaus
সুন্দরবন

সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকায় বইছে হিম হিম হাওয়া। তবে এখনো তীব্র শীত আসেনি উপকূলীয় এলাকায়। হালকা শীতের মধ্যেই এখন পর্যটকরা ছুটছেন সুন্দরবনে। করোনার মহামারিতে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত পহেলা নভেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় সুন্দরবন।

এরই মধ্যে, দেড় মাসে পশ্চিম সুন্দরবন খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন সাত হাজার পর্যটক।

বন বিভাগ বলছে, দীর্ঘদিন মানুষ ঘরবন্দি থাকার পর বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পেয়েই প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ছুটছেন সুন্দরবনে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের তুলনায় এ বছর পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। এ কারণে কমবে রাজস্ব আয়ও।

পশ্চিম সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য অনুমতি নিতে হয় খুলনা বিভাগীয় বন কার্যালয় ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের নীলডুমুর ও মুন্সিগঞ্জ বন অফিস থেকে।

এর মধ্যে সুন্দরবনের কলাগাছিয়া এলাকায় প্রবেশের জন্য নীলডুমুর ও মুন্সিগঞ্জ বন অফিস অনুমতি দেয়। হিরনপয়েন্ট, মান্দারবাড়িয়া, দুবলারচর, কটকা, কুন্নেরদীপ, পুটনি, বঙ্গবন্ধু চর এসব এলাকা পরিদর্শনে অনুমতি দেয় খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়।

সুন্দরবন

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পশ্চিম সুন্দরবন খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চল পরিদর্শন করেছে ৬৫ হাজার ১৪২ জন পর্যটক। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক ৪৪৩ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৫০ টাকা।

কোভিডের কারণে চলতি বছরের ২৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর গেল পহেলা নভেম্বর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে সুন্দরবন। চলতি ২০২০-২১ অর্থ বছরে নভেম্বর মাসে সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন ৬ হাজার ৫৭৭ জন পর্যটক। এর মধ্যে দেশি ৪ হাজার ৯৮ জন পর্যটক, বিদেশি চারজন ও তীর্থযাত্রী ২৪৭৫ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার ৮১০ টাকা।

অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে নভেম্বর মাসে দেশি পর্যটক ছিল ২৬৫৬ জন, বিদেশী ৮৮ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭ লাখ ৪২ হাজার ৩৯৫ টাকা।

সে হিসেবে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরে নভেম্বর মাসে পর্যটকের সংখ্যা ও রাজস্ব আদায় বেড়েছে। এছাড়া ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্চের কলাগাছিয়া ও দোবেকী এলাকা পরিদর্শন করেছেন ৬০২২ জন। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮০ টাকা।

খুলনা বিভাগীয় বন অফিসের অফিস সহকারী আলী হোসেন জানান, সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ ভ্রমণ করতে হলে সাতক্ষীরা রেঞ্চ, খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান ও মোংলার পশুর নদী হয়ে প্রবেশ করতে হয়। তবে পর্যটকরা সাধারণত মোংলার পশুর নদী ও সাতক্ষীরা রেঞ্চের মুন্সিগঞ্জ, নীলডুমুর এলাকা দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। এখন থেকে পাস নিয়ে পশ্চিম ও পূর্ব বন বিভাগ দুই এলাকাই ভ্রমণ করা যায়।

সম্প্রতি সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা আমিনুর রহমান বুলবুল। তিনি বলেন, টানা সাত মাস বন্ধ থাকায় প্রকৃতি যেন সেজেছে নতুন রূপে। প্রকৃতিকে উপভোগ করেছি। তাছাড়া অনেকদিন পর বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পেয়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভ্রমণ পিপাসু মানুষরা ছুটছেন সুন্দরবনে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওসমান গণি জানান, যৌবন ফিরে পেয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবনে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলেন পর্যটকরা। তবে দীর্ঘদিন সেগুলো থেকে মুক্ত ছিল সুন্দরবন। এতে পরিবেশ দূষণও কমেছে।

অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সুন্দরবনে পর্যটকদের সমাগম কমেছে। হতাশ হয়ে পড়েছেন সুন্দরবন উপকূলজীবীরা। সুন্দরবন উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল। তিনি জানান, সুন্দরবনে পর্যটকদের নিয়ে ভ্রমণের জন্য এখানে ২৫০টি ট্রলার রয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ ছিল সুন্দরবনে প্রবেশ। বর্তমানে সুন্দরবনে প্রবেশ উন্মুক্ত হলেও পর্যটকদের সংখ্যা খুবই কম। সপ্তাহে একটিও ভাড়া পাচ্ছেন না ট্রলার মালিকরা। প্রায় ৫০০টি পরিবার জড়িত একাজে। যাদের জীবন জীবিকা পর্যটকদের ওপর নির্ভরশীল। করোনার কারণে বন্ধ থাকা ও বর্তমানে পর্যটক না থাকায় এসব ট্রলার মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছে। অভাব অনটনে কষ্টে আছেন তারা।

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে সংসদীয় কমিটির নির্দেশনায় গত ২৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ বন্ধ হয়ে হয়। টানা সাত মাস বন্ধ থাকার পর গত ১ নভেম্বর সরকারি নির্দেশনায় পর্যটকদের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে এখন অনেকেই সুন্দরবনে ছুটছেন।

তিনি বলেন, সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কলাগাছি ও দোবেকী দুটি পয়েন্ট রয়েছে। এই দুই পয়েন্ট দিয়েই বর্তমানে সুন্দরবনে প্রবেশ করছে পর্যটকরা। সুন্দরবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হচ্ছে। মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহাম্মদ মহসিন জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কম। গত অর্থ বছরে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন। তবে করোনা পরিস্থিতিতে টানা সাত মাস বন্ধ থাকায় চলতি অর্থ বছরে সেই পর্যটক না হওয়ার সম্ভবনা বেশি। পর্যটক না থাকলে রাজস্ব আদায়ও কমে যাবে।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like