নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ‘শিক্ষা বেসরকারি স্কুলনির্ভর হলে, তা পণ্য হয়ে ওঠে। সরকারি পরিষেবা বা নাগরিকের অধিকার থাকে না। এই বিষয়টা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তো বটেই, জাপান, তাইওয়ান, কোরিয়া, চিন সকলেই বুঝেছে। সরকারি স্কুলের নেটওয়র্ক গড়ার কাজটা খুব জরুরি।’ একেবারে প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি যত্নে স্কুলশিক্ষাকে আরও বেশি সর্বজনীন করে তোলার উপরেও জোর দিয়েছেন অমর্ত্য।
ভারতের ২০২০ এর নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে ২৬ সেপ্টেম্বর এক ওয়েবিনারে এ কথা বলেন অমর্ত্য সেন।
প্রতীচী ট্রাস্টের উদ্যোগে আলোচনাচক্রে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘প্রাচীন ভারতের আদর্শ বলতে শুধু সনাতন শিক্ষার কথা মনে রাখব, কিন্তু ভারতের সামগ্রিক ইতিহাসের ধারা উপেক্ষা করব, এটা ঠিক নয়!’
ভারতের ভাবাদর্শের এই বহমানতা প্রসঙ্গে চার্বাক দর্শন থেকে মুসলিম প্রভাবের কথাও মনে করিয়ে দেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, ‘প্রাচীন ভারতে সনাতন ধর্ম যেমন ছিল, তেমনই লোকায়ত বা চার্বাকের পরম্পরাও ছিল। তার মধ্যে ঈশ্বরহীনতা, ধর্মহীনতা বা ধর্মবিরোধিতা এবং সম্পূর্ণ যুক্তিনিষ্ঠ বিশ্লেষণও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া কখনোই সেই আদর্শের একটি ধারার প্রতি একনিষ্ঠ থাকা নয়।’
নয়া শিক্ষানীতির আদর্শে একদেশদর্শিতা প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেন, পশ্চিমি দেশগুলোর স্কুলশিক্ষা শুধু বাইবেলের গসপেল আঁকড়ে বসে থাকা নয়, গ্যালিলিয়োর মতো বিজ্ঞানীদের কথাও তাতে গুরুত্বপূর্ণ। এরই সূত্র ধরে ভারতের বিভিন্ন পরতকে পড়ার গুরুত্বের কথা বলেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ।
তিনি বলেন, ‘এ দেশে মুসলিম প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ। আবার প্রাচীন হিন্দু ভারতেও গোটা দেশ, বিশেষত বাংলা বা আসাম এক রকম ছিল না।’
ভয়েস টিভি/এসএফ