Home জাতীয় দৃষ্টিসীমার দিগন্ত জুড়ে যেভাবে নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

দৃষ্টিসীমার দিগন্ত জুড়ে যেভাবে নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

by Newsroom

ইউরোপ যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু ক্যামেরার চোখে সেসবের দৃশ্য নিশ্চয় অনেকের দেখা হয়েছে। বিশ্বের বড় বড় ব্রিজের মতো কিভাবে নদী শাসন, পিয়ার নির্মাণ, পাইলিং, স্প্যান বসানো, ভায়াডাক্ট, রোড কনস্ট্রাকশন নিয়ে যেভাবে নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু তা নিয়ে আজকের প্রতিবেদন।

যানজটের রাজধানী ঢাকার বাবুবাজার অথবা কেরানীগঞ্জ ব্রিজ অথবা পোস্তগোলা ব্রিজে উঠেই হাফ ছেড়ে বাঁচা। স্বস্তির নিঃশ্বাস। বুক ভরে বাতাস নিন। দুপাশে বাধাহীনভাবে গাড়ি এগিয়ে চলছে। বলা হচ্ছে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এক্সপ্রেসওয়ে। যার দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। তবে এর পুরো সুফল পেতে অবশ্যই পদ্মা সেতুর পুরো নির্মাণ পর্যন্ত অর্থাৎ ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

আমরা যখন রওনা হয়েছি তখন রোদ আর শীত আড়াআড়িভাবে আছড়ে পড়ছে সড়কে। রাস্তার মাঝে ছোট গাছ বাড়ন্ত বয়সে উপনীত হয়েছে।

ঢাকা থেকে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পদ্মা  সেতুর মাওয়া প্রান্তে আমরা। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ২০ ফুট থেকে ৩৫ ফুট ওপরে কাজ চলছে। দুটি স্তরে কাজ চলমান। এর মধ্যে একটি হলো বাইপাস সড়ক অন্যটি মূল সেতুর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ সড়ক।

আরও পড়ুন- দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু

এক সময়ের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। পদ্মার তীর থেকে দেখা যাচ্ছে প্রায় পুরো পদ্মা সেতু। অধিকাংশ ইস্পাতের কাঠামো। স্প্যান বসানো শেষ হতে যাচ্ছে আগামী মাসে। স্প্যান বসানো বাকি মাত্র ৩টি। এরই মধ্যে ৬ হাজার মিটার দৃশ্যমান।

খরস্রোতা পদ্মার বুকে প্রকাণ্ড এক সেতু। বিশ্ব ব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোর সরে যাওয়ার পরেও এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের দুঃসাহসী চ্যালেঞ্জে অনেকটাই এখন বিজয়ী বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়। শুরুতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৬ হাজার কোটি টাকা। তবে এখন প্রকল্প ব্যয় ছাড়িয়ে যাবে ১১ হাজার কোটি টাকা। আর সর্বমোট ব্যয় ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

যেভাবে শুরু

চায়না মেজর ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রস্ট্রাকশন কোম্পানি ২০১৫ সালে ভাসমান ক্রেন রইহাং-৫ নিয়ে আসে। যার সক্ষমতা ছিলো ১ হাজার টন ওঠানো।

নদী শাসন ও পাইলিংয়ের কাজ ছিলো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। নদীশাসন মানে এক কথায় নদীপাড় বিশালকৃতির অসংখ্য ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা। আর পাইলিংয়ের জন্য পদ্মায় গিয়ে প্রকৌশলীরা সবচেয়ে বেশি বেগ পোহাতে হয়েছে। নদীর গভীরে যতই যায় ততই কাদামাটি। বিশ্বের অনেক বিজ্র নির্মাণে একটি নিদিষ্ট গভীরে শক্ত মাটি পাওয়া যায়। কিন্তু পদ্মার ক্ষেত্রে বালি মাটি এবং মাটির স্তর নরম থাকায় বাড়তি ট্যাম বসিয়ে স্ক্রিন গ্রাউটিং করে নরম মাটি শক্ত করা হয়। এমনকি এ কারণে ১২০ মিটার পর্যন্ত গভীরে যেতে হয়েছে।

সাধারণভাবে চিন্তা করলে ৪০ তলা বিশিষ্ট একটি ভবনও হারিয়ে যাবে এই গভীরতায়। সবশেষে পাইলিংয়ের কাজ শেষ হলো। তবে সবক্ষেত্রে যে ১২০ মিটার পাইলিং করতে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়।

যেভাবে বসানো হয় স্প্যান

পাইলিং শেষে শুরু হয় স্প্যান বসানোর কাজ। এই স্প্যান হলো সংযোগ কাঠামো। মানে এক একটি স্প্যানের সংযোগ মূল পিয়ারের ওপর।
এসব স্প্যান বানানো হয়েছে চীনে। এরপর মাওয়া প্রান্তে স্ক্রু নাট বল্টু লাগিয়ে প্রকাণ্ড একটি স্প্যান তৈরি করা হয়েছে।

তিয়ানইয়াহাউ নামের ৩ হাজার ৬ শ টন উঠাতে সক্ষমতা সম্পন্ন একটি ক্রেন নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশে। এরপরে চ্যালেঞ্জিং ছিলো স্থলভাগের সঙ্গে নদীর সংযোগ। এ কারণে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে। ৩৮তম স্প্যান বসানোর সময আমাদের টিম সেখানে উপস্থিত হয়ে যা দেখলো তা ছিলো নিচ থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ওয়াকটকিতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। ক্রেনটি দুপাশের কয়েকটি প্রসারণমান শিকল দিয়ে স্প্যানকে সুক্ষভাবে নড়াচ্ছেন। খুব ধীরে এটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এরপর বাধলো বিপত্তি ভূভাগে হওয়ার কারণে ক্রেনটি পজিশনিং করা কষ্টসাধ্য। একারণে আরও একটি জাহাজ এলো । সেখানে দুটি বড় কর্ড দিয়ে বেধে ধীরে ধীরে ক্রেনটি বাম পাশে নিয়ে যাওয়া হয়।

সময় লাগলো ঘণ্টাখানেক। তারপর ওপরে দুপ্রান্তে জোড়া লাগানোর কাজ। এপ্রান্তে ১৬টি পাইলিংয়ের মজবুত পিয়ার আর ঐপাশে ৭টি পাইলিংয়ের নদীর পিয়ার। দুটোর দুরকম ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ।

দুটো কাছাকাছি আসতেই চীন এবং এদেশীয় প্রকৌশলীরা ছুটলেন। একের পর এক সুউচ্চ লাইন ধরে এগিয়ে চলছেন। ও প্রান্তে ঝালাই শেষে বসলো স্প্যান আর দৃশ্যমান হলো ১৫০ মিটার। মোট ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যানের আর মাত্র বাকি ৩টি। যা ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই শেষ হবে।

রেলসেতু

৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ নির্মিত হবে। তবে এটি শেষ হতে সময় লাগবে ২০২৪ সাল। ২০২১ সালের পুরোটা সময় জুড়ে রেলওয়ে স্লিপার এবং সড়কের স্লাব বসানোর কাজ হবে। তার পর রং করা দুপাশের সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ নানা কাজ। তাই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

সেতু হয়ে গেলে ঠিক কেমন দেখতে পাবেন প্রতিবেদনের ভিডিওতে রয়েছে।

ভয়েস টিভি/ডিএইচ

You may also like