Home প্রযুক্তি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ তৈরি ও উৎক্ষেপণে রাশিয়ার আগ্রহ

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ তৈরি ও উৎক্ষেপণে রাশিয়ার আগ্রহ

by Mesbah Mukul

দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-২’ মহাকাশে পাঠানোর কথা। সেই স্যাটেলাইটটি তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস। প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ তৈরি করে দিয়েছিল— সেই বিষয়টি উল্লেখ করে এরই মধ্যে থ্যালাস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী হারভে ডেরে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল নির্মাণ, প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন কার্যকরী পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন।

গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর লেখা ওই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ডাক গ্রহণ ও বিতরণ শাখায় রিসিভ করা হয় ৫ অক্টোবর। চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট তৈরি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়া স্যাটেলাইট তৈরি, উৎক্ষেপণ, রক্ষণাবেক্ষণে নিজেরাই সক্ষম বলে জানিয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রথমটি কমিউনিকেশন হলেও বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট হবে আর্থ অবজারভেটরি ও মাল্টিপারপাস ভিত্তিক। বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন তা ঠিক করতে সরকার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়। প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটার হাউসকুপারস-কে (পিডাব্লিউসি) চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)। প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে গত বছরের ২ জানুয়ারি একটি চুক্তিও সম্পন্ন হয়।

সংশ্লিষ্ট ‍সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের লাইফ টাইম হবে ১৮ বছরের মতো। দেশের সমুদ্রসীমায় ‘সি রিসোর্স’ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে এই স্যাটেলাইট কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। তারা ভারনারেবল অবস্থায় থাকা সমুদ্র সম্পদ নিয়েও আশাবাদী যে, এই স্যাটেলাইট দিয়ে সেসব পর্যবেক্ষণ করে তা দেশের জন্য নিশ্চিত করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, থ্যালাস আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা আমাদের প্রথম স্যাটেলাইট (বঙ্গবন্ধু-১) তৈরি করে দিয়েছে, একটা ব্যবসা করেছে। আবার করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। থ্যালাস আমাদের স্যাটেলাইট বানিয়ে দিয়েছে, সেসময় কোনও বিকল্প ছিল না। তবে আমরা থ্যালাসের কাজে স্যাটিসফায়েড। আমরা এবার এক্সপ্লোর করে দেখবো। আমরা জেনেছি, রাশিয়া এই খাতে ভালো করছে।

বঙ্গবন্ধু-২ তৈরিতে রাশিয়া এগিয়ে এলে কমার্শিয়াল লোন নিতে হবে না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, জি টু জি (সরকার টু সরকার) পর্যায়ে যেহেতু এটা হবে, ফলে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। ওদের (রাশিয়ার) স্টেট কোম্পানি (সরকারি প্রতিষ্ঠান) এই প্রস্তাব দিয়েছে। এতে করে খরচ অনেক কমে আসবে।

তবে এটা এটা কূটনীতির অংশ বলে মনে করেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি জানান, সরকারের হাতে ১০-১৫টা অপশন রয়েছে। শিগগিরই সংশ্লিষ্টরা বসে এ বিষয়ে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘সব মিলিয়ে রাশিয়া লিডিং (এগিয়ে আছে)।’

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাকাশ গবেষণায় রাশিয়ার সাফল্য বিশ্বের অন্য কোনও দেশের চেয়ে কম নয়। এছাড়া রাশিয়া নিজেরা যেমন স্যাটেলাইট তৈরি তেমনি উৎক্ষেপণের কাজটাও করে। রাশিয়ার স্যাটেলাইট লঞ্চিং প্যাড কাজাখস্তানে অবস্থিত। রাশিয়ায় এটি তৈরি হলে তা হবে ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী। এটি উৎক্ষেপণের জন্য স্যাটেলাইটটি দূর দেশে পরিবহন করতে হবে না। এসব কিছু রাশিয়াকে এগিয়ে রাখছে প্রথম কাতারে বলে মনে করছেন তারা। থ্যালাস স্যাটেলাইট তৈরি করলেও তারা উৎক্ষেপণ করে না। এজন্য তাদের তৃতীয় পক্ষের সহযোগিতা নিয়ে হয়। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইটের বেলায়ও এমন হয়েছে। ফ্রান্সে তৈরি হলেও স্যাটেলাইটটি বিমানে করে তা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে হয়েছে। লঞ্চিং প্যাডটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মাহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার (কেনেডি স্পেস সেন্টার)। আবার যে রকেটে করে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয় সেটি ছিলো একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠানটির নাম স্পেস-এক্স। দেখা যায় ওই স্যাটেলাইটের পেছনে বহুপক্ষের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল। রাশিয়ার হাতে এটি গেলে তা একটি দেশের কাছেই থাকবে।

অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে থ্যালাস লিখেছে, থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেস একমাত্র লিডিং স্যাটেলাইট টেলিকমিউনিকেশন নির্মাতাই নয়, প্রথমসারির আর্থ অবজারভেশন টেকনোলজিস নির্মাতাও। এছাড়া থ্যালাসের বিশেষত্ব হলো অতি উচ্চ রেজুলেশনের লো আর্থ অরবিট অবজারভেশন স্যাটেলাইট তৈরিতে। এই স্যাটেলাইট সরবরাহ করে ভালোমানের ছবি জটিল ডাটা বিশ্লেষণের জন্য। গুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন কৃষি, মৎস্য, নগর পরিকল্পনা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইত্যাদিতে যা কাজে লাগে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, থ্যালাস ফ্রান্সের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। আর রাশিয়ার সরকারি একটা সংস্থা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছে তারা এটা তৈরি করে দেবে। সরকারের আগ্রহ রাশিয়ার প্রতি। তিনি জানান, অনেকগুলো কারণে রাশিয়া এগিয়ে আছে।

এখানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বেশ শক্তিশালী বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, একটা সরকারের পক্ষে আরেকটা সরকারের সঙ্গে কাজ করার অনেক সুবিধা। কাজটা দ্রুত হয়। এরসঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিহিত থাকে।

জানা গেছে, রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান রজোকসমস সরকারকে স্যাটেলাইট বানিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এটি হবে একটি আর্থ অবজারভেটরি স্যাটেলাইট। এটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরে ৩০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করবে। ফলে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লট প্রয়োজন হবে না।

সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট তৈরি করে দেওয়ার ব্যাপারে চীনও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like