Home ভিডিও সংবাদ ভোলার প্রাচীন ঐতিহ্য হায়দার আলী জমিদার বাড়ি

ভোলার প্রাচীন ঐতিহ্য হায়দার আলী জমিদার বাড়ি

by Newsroom

ইতিহাস-ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন ভোলার বোরহানউদ্দিনের হায়দার আলী জমিদার বাড়ি । প্রায় ৩শ’ বছরের প্রাচীন এই বাড়িটি নির্মান করেন জমিদার হায়দার আলী। তাঁর নামানুসারে জমিদার বাড়ির নামকরণ হায়দার মহল। ১৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা বিশিষ্ট এই বাড়ি এখনো জমিদারী ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে আছে।

১১৫৫ সালে জমিদার হায়দার আলী তার জমিদারী শুরু করেন এবং পরবর্তী প্রজন্ম ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জমিদারী ধরে রাখেন। বাড়ির আশেপাশে একটি বড় দীঘি ও বাগান রয়েছে। তৎকালীন কালীগঞ্জ নামের বর্তমানে বোরহানউদ্দিন উপজেলার বড় মানিকা ইউনিয়নে বাড়ি অবস্থিত।

রিয়াজ উদ্দিন আকনের ছেলে হায়দার আলীর ৬ ছেলের মধ্যে দুই ছেলে জমিদারী করে গেছেন। ইতিহাস বলছে, হায়দার আলীর ছেলেদের মধ্যে ইয়াকুব আলী বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে খেলাফত ও কংগ্রেস কর্মী হিসাবে তার বড় ধরনের ভূমিকা ছিলো। তাদের পরবর্তী প্রজন্ম এখানে স্কুল-মসজিদসহ একাধিক স্থাপনা নির্মাণ করেন।

বাড়িটির ইতিহাস সম্পর্কে  জানা যায় ভোলা দ্বীপের গোড়াপত্তনের সময় থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এখানে এসে বসতি গড়ে তোলে। তারই ধারাবাহিকতায় কুমিল্লার জনৈক ইজ্জত উল্লাহ আকন ভোলার স্থানীয় খায়রুল্লাহ বিশ্বাসের মেয়েকে বিয়ে করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

তাঁর একমাত্র ছেলে রিয়াজ উদ্দিন আকন তৎকালীন জমিদার তারা প্রসন্ন ভট্টাচার্যের জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব পান। একসময় তিনি প্রচুর জমি ও অর্থ সম্পদের মালিক হন। এ অঞ্চলের বৃদ্ধাদের মুখে গুঞ্জন শুনা যায়, তিনি নাকি
মাটির নিচে কলসি ভর্তি কিছু কাঁচা টাকা পান। এতে তিনি  সহজেই তিনি ‘জমিদার’ হিসেবে খ্যাতি পান। তার ছেলেই হায়দার আলী। যার নামে ‘হায়দার মহল’।

১১৫৫ বঙ্গাব্দে হায়দার মহলের মূল ভবন নির্মাণ শেষ হয়। এই হায়দার মহলের মূল ভবন ছাড়াও পেছনের দিকে একতলা আরো চারটি ভবন রয়েছে। এ ভবনগুলো তৈরিতে বালু ও সিমেন্টের পরিবর্তে ব্যয়বহুল চুনা ও সুরকি ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি দেয়াল দেড় হাত পুরু। বিল্ডিং নির্মাণের সময় ভিম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের শাল কাঠ- যা তিন-চার শ’ বছর পর এখনো অক্ষত।

মূল ভবনের তৃতীয়তলা নির্মাণ করা হয় বাংলা ১৩৫১ সনে। বাড়িটির আয়তন সর্বমোট ১১৪ একর ২২ শতাংশ। সেকালে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য এই বাড়ির চার দিকে দেয়াল নির্মাণ করে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছিল। এই বেষ্টনীর দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় এক মাইল। হায়দার মহলের মূল গেটে দারোয়ান হিসেবে কর্মরত ছিল এক নেপালি গুর্খা সৈন্য। সে সময় অসংখ্য চাকর-বাকর এই জমিদার বাড়িতে কাজ করতো। দূর-দূরান্ত থেকে মুসাফিররা এসে এ বাড়ির কাচারিতে আশ্রয় নিতো। মুসাফিরদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

এই বাড়িতে একটি বিশাল আকৃতির দীঘিসহ পুকুর সংখ্যা প্রায় ২৫টি। সে সময় এ বাড়ির জমিদাররা শখ হিসেবে হরিণ, ময়ূর, বাঘসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় প্রাণী পুষত। কালের সাক্ষী হিসেবে আজো ওই হায়দার মহলে বিশাল আকৃতির হরিণের শিং, ময়ূরের পালক, বাঘের চমড়াসহ নানা রকম ঐতিহ্য ওই বাড়িতে সংরক্ষিত আছে।

এছাড়াও কিছু কিছু ঐতিহ্য জাতীয় জাদুঘরে শোভা পেয়েছে। তৃতীয়তলা পরিদর্শনকালে দেখা যায়, কয়েক শ’ বছরের প্রাচীন এ ভবনের প্রতিটি দেয়াল আজো অক্ষত। শুধু কয়েক স্থানে শ্যাওলা জমে আগাছার সৃষ্টি হয়েছে। হায়দার মহলের সামনের দিকে দক্ষিণ পাশে রয়েছে ফুলের বাগান, দরজায় রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, সুপ্রাচীন প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাইক্লোন শেল্টার, ঈদগাহ মাঠসহ বাড়ির ভেতরে অসংখ্য গাছ-গাছালি। এক সময় এ বাড়ির জমিদারদের সম্মানে স্থানীয় লোকজন এ বাড়ির দরজা দিয়ে জুতা পায়ে কিংবা ছাতা মাথায় যাওয়ার সাহস করত না।

বাংলা বছরের নির্দিষ্ট দিনে এ বাড়ির জমিদারদের খাজনা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট তারিখে প্রজা সাধারণ এসে জমায়েত হতো ‘পুন্যাহ’ অনুষ্ঠানে। তখন প্রজাদের জন্য ব্যাপক খাওয়ার আয়োজন হতো। বাড়ির দরজায় যাত্রা, নাটক, জারিগান, কবিগান আর পালাগানের আসর বসত। ডাক ও খনার বচন খইয়ের মতো ফুটত প্রজাকুলের মুখে মুখে।

এই বাড়িটিতে হায়দার আলীর বংশধরগন বসবাস করলেও ৩০ বছর ধরে এখানে কেউ থাকে না। তাই সংরক্ষণের অভাবে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে হায়দার মহল।

তারপরেও প্রচীনতম দৃষ্টিনন্দন এই বাড়িতে দেখতে ছুটে আসে অনেক দর্শনার্থী। প্রচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখার দাবি স্থানীয়দের।

ভযেস টিভি/ডিএইচ

You may also like