Home সারাদেশ সিডরের ১৩ বছর, আজও আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী

সিডরের ১৩ বছর, আজও আঁতকে ওঠেন উপকূলবাসী

by Shohag Ferdaus
সিডর

প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৩ বছর আজ। উপকূলীয় এলাকায় ২০০৭ সালের এই দিনেই আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন সিডর। সেই দুঃসহ স্মৃতি উপকূলের মানুষগেুলোকে আজও তাড়া করে। সেই ঝড়ের কথা মনে করে এখনো আতঁকে ওঠেন উপকূলবাসী। সেদিন স্বজন হারানো মানুষগুলো এখনো নীরবে কাঁদে। আর পঙ্গুত্ব বরণকারীরা সেই ভয়াল রাতের স্বাক্ষী হয়ে অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে। উপকূলের বিপন্ন জনপদ এখনও সিডরের ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি, গৃহ পালিত পশু পাখি, জমির ফসল, পুকুর ও মাছের ঘেরসহ সর্বস্ব হারিয়ে আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি অনেকে।

সিডর বিধ্বস্ত ভোলার ভেলুমিয়া, ইলিশা, রামদাসপুর, মনপুরা, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিডরে ক্ষতিগস্থ মানুষ এখনো সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। সহায়-সম্বল হারিয়ে তাদের দুঃখ দুদর্শার অন্ত নেই। আয়ের উৎস ও মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই হারিয়ে তখন তাদের আশ্রয় হয়েছিল নদীর কূলে। অনেকে নতুন বসতিতে ফিরেছেন, অনেকে এলাকা ছেড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলার বাঁধ ও নদীর তীরবর্তী বিপন্ন এলাকায় এখনও রয়েছে সিডরের ক্ষত চিহ্ন। ঝড়, জোয়ারের পানি ও নদী ভাঙনসহ একের এক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

ভোলার বিচ্ছন্ন এলাকা ও উপকূলের জনপদে একের পর এক দুর্যোগ এলেও এখনও অরক্ষিত উপকূলের মানুষ। তাদের অনেকের ঝড়ের পূর্বাভাস পর্যন্ত পায় না। এতে ঝড়ের সময় কোনো প্রস্তুতি নিতে পারছেন না তারা।

লর্ডহার্ডিঞ্জ এলাকার লোকমান হোসেন, সিরাজ উদ্দিন ও লাল মিয়া বলেন, আকাশে মেঘ দেখলেই বুঝতে পারি ঝড় আসবে, কিন্তু কত নম্বর সিগনাল তা জানতে পারি না।

সদরের ইলিশা গ্রামের বাঁধে আশ্রিত মো. হোসেন ও তোফাজ্জল জানান, নদীর কাছে বসবাস করে আসছি বান তুফান এলে পানিতে ডুবছি। আমরা বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করি কিন্তু ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাই না।

এ ব্যাপারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি (সিপিপি) উপ-পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় ১৩ হাজার সেচ্চাসেবী কাজ করছে। যারা রিমোট এড়িয়াতে গিয়েও দুর্যোগের বিষয়ে প্রচারণা চালায়। এমন কোনো স্থান নেই যেখানে প্রচারণা হয় না।

তিনি বলেন, সিডরের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। তখনকার চেয়ে বর্তমানে সিপিপির প্রচারণায় কিছুটা আধুনিকায়ন এসছে, দক্ষ করে তোলা হয়েছে সেচ্চাসেবীদের। দুর্যোগের আগেই প্রস্তুত থাকে সেচ্চাসেবীরা।

এদিকে, উপকূলের ওপর দিয়ে সিডর, আইলা, রেশমি, মহাসেন, রোয়ানু, বুলবুল ও আম্পানসহ ছোট বড় অর্ধশতাধিক ঝড় বয়ে গেলেও সিডরের ভয়াবহতার কথা আজও ভুলতে পারছে না উপকূলের মানুষ।

সিডরে জেলায় ৪২ জন নিহত ও ৫২ হাজার ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এছাড়াও কয়েক শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ২০ কিলোমিটার বাঁধ।

এদিকে ভোলা সদরের ভেলুমিয়া ইউনিয়নের চন্দ্র প্রসাদ গ্রামে ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিখোঁজ ৯ জেলে পরিবারে এখনো অপেক্ষার প্রহর যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সন্ধ্যান মেলেনি সেই ৯ জেলের। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের মরদেহ পাওয়া যায়নি। তারা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছে তা জানে না কেউ। তবে তাদের পরিবারের সদস্যরা আজও তাদের প্রতিক্ষায় আছেন। প্রিয়জনের কথা মনে করে কেঁদে উঠেন স্বজনরা। যেন এ কান্নার শেষ নেই।

পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিদের না পেয়ে এসব পরিবারে নেমে এসেছে সীমাহীন দুর্ভোগ। স্বজনদের হারিয়ে অভাব অনটনের মধ্যে কাটছে তাদের জীবন।

চন্দ্র প্রসাদ গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, জসিম মাঝির ট্রলার নিয়ে সিডরের কয়েকদিন আগে মাছ শিকারের গিয়েছিলেন ভোলার চন্দ্রপ্রসাদ গ্রামের ৯ জেলে। মাছ শিকার শেষে কারো নতুন ঘর তৈরি, কারো বিয়ে বা সন্তানের বইখাতা আর স্কুলে ভর্তি করানোর কথা ছিলো। কিন্তু সিডরের ঝড়ে ট্রলার ডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন বজলু, রুবেল, জসিম, নুরু, সহিদুল, ইব্রাহিম, মামুন, জামাল আর রুবেল নামের ৯ জেলে।

তারা ফিরে না আসায় অসমাপ্ত কাজগুলোর কিছুই করা হয়নি তাদের। স্বজনকে না পেয়ে ১৩ বছর ধরে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এখনও তাদের মনে করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন স্বজনরা। এখনো তাদের ফেরার অপেক্ষায় এখনো পথ চেয়ে থাকেন নোখোঁজ জেলেদের মা।

আরও পড়ুন: ঢাকা ছাড়ছে অসহায় মানুষ

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like