Home জাতীয় ১৯৫৩, জেলে যেভাবে মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘‌কবর’

১৯৫৩, জেলে যেভাবে মঞ্চস্থ হয়েছিল ‘‌কবর’

by Shohag Ferdaus
কবর

মহান ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ২১ ফেব্রম্নয়ারির পর ২২ ফেব্রম্নয়ারি রক্তমাখা কাপড়ের নিশান উড়িয়ে চলা বিশাল এক শান্তিপূর্ণ মিছিলেও গুলি চালায় পুলিশ। ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়, তার অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন মুনীর চৌধুরী। পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন এবং গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানান। ভাষা আন্দোলনের সময় বিপুলসংখ্যক ছাত্র-শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়।

মুনীর চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি। পাঠানো হয় দিনাজপুর জেলে। দিনাজপুর জেল থেকে একসময় তাকে পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানেই তিনি লেখেন ভাষা আন্দোলনের অনবদ্য সৃষ্টি ‘‌‌কবর’ নাটক। ভাষা আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট বন্দিদের অধিকাংশই ছিলেন কারাগারের ২ নম্বর কক্ষে। তারা মুনীর চৌধুরীকে অনুরোধ করেছিলেন একটি নাটক লিখে দিতে। এ ব্যাপারে রণেশ দাশগুপ্ত লিখেছেন- ‘যেহেতু আমার সঙ্গে বরাবরই মুনীর চৌধুরীর একটা বিশেষ প্রীতির সম্পর্ক ছিল, সে জন্য সবার হয়ে আমি পুরানো হাজত থেকে গোপনে চিঠি পাঠিয়েছিলাম মুনীর চৌধুরীকে নাটক লিখে দেয়ার জন্য।’

মুনীর চৌধুরী এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘রণেশদা জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাত ১০টার পর জেলখানার সব আলো নিভে যাওয়ার পর তাদের কক্ষে নাটকটি মঞ্চস্থ করবেন তারা। জেলখানায় যারা রাতে হারিকেন দিয়ে লেখাপড়া করতেন, তাদের কাছ থেকে ৮-১০টি হারিকেন দিয়ে নাটকটির মঞ্চ সাজাতে হবে। সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই কবর নাটকটিতে আলো-আঁধারির রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে হয়েছে।’

মুনীর চৌধুরী নাটকটি লেখা শেষ করেন ১৯৫৩ সালের ১৭ ফেব্রম্নয়ারি। ২১ ফেব্রম্নয়ারি রাত ১০টায় তা ফণী চক্রবর্তীর পরিচালনায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রথম অভিনীত হয়। প্রথম ছাপা হয় ‘দৈনিক সংবাদ’-এর ‘আজাদী’ সংখ্যায়, ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে। প্রকাশ্যে নাটকটির প্রথম অভিনয় হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের একুশে উদযাপন উপলক্ষে, ১৯৫৬ সালে।

নাটকটির শেষদিকে মুর্দা ফকির নিহত মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘তোরা কোথায় গেলি? সব ঘুমিয়ে নাকি? উঠে আয়। তাড়াতাড়ি উঠে আয়। সব মিছিল করে উঠে আয়। গুলি, গুলি হবে। স্ফূর্তি করে উঠে আয় সব। মিছিল করে আয় এদিকে। আজ গুলি হবে, গুলি হবে আজ। কবর খালি করে সব উঠে আয়।’

এখানে গুলিতে নিহত ছাত্র-জনতার কথাই শুধু বলা হয়নি, আরও অনেক কিছু বলতে চেয়েছেন তিনি। মুনীর চৌধুরী নাটকটি সম্পর্কে বলেছেন, ‘কবর নাটকটিতে শুধু একুশের তাৎপর্য খোঁজা হলে খানিকটা ভুলই বরং করা হবে। হয়তো আরও বেশি কিছু বলার চেষ্টা করেছি আমি। আরও বেশি কিছু, আরও অনেক কিছু।’

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like