Home খেলার খবর ৩৮তম বছরে পা রাখলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’

৩৮তম বছরে পা রাখলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’

by Newsroom

মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক ও পেসার। জীবনের ৩৭ বসন্ত কাটিয়ে ৩৮তম বছরে পা রাখলেন দেশের এই জনপ্রিয় ক্রিকেটার। ১৯৮৩ সালের ৫ অক্টোবর নড়াইলের গোলাম মুর্তজা স্বপনের ও হামিদা রহমান বলাকার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শুভ জন্মদিন, ম্যাশ। বর্তমানে তিনি নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য।

ক্রিকেটকে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর আগেই যোগ দিয়েছেন সক্রিয় রাজনীতিতে। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে লড়েছেন, হয়েছেন নিজ এলাকার সংসদ সদস্য, করছেন জনসেবা। নতুন এ পরিচয়ে সময় দিতে গিয়ে এখন ক্রিকেট থেকে খানিক দূরেই রয়েছেন মাশরাফি। তবে দেশের মানুষের কাছে সবসময়ই তার প্রথম পরিচয় লড়াকু এক ক্রিকেটার হিসেবে।

ক্রিকেটে মাশরাফির হাতেখড়ি নড়াইলে। শৈশবে দারুণ দুরন্তপনায় মত্ত মাশরাফির শুরুতে অবশ্য ফুটবল, সাঁতার এবং ব্যাডমিন্টনের নেশা ছিল। ধীরে ধীরে শুরু হয় ক্রিকেটের প্রতি প্রেম। প্রথমে ব্যাটিংয়ে আগ্রহ থাকলেও বোলিং দিয়ে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছিলেন তিনি। এভাবেই ঢাকার পথ ধরেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।

তেমন সংগ্রামই করা লাগেনি বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে। প্রথম শ্রেণির ম্যাচও খেলা লাগেনি তার।  মাত্র ১৮ বছর বয়সেই জাতীয় দলের জার্সি তার গায়ে ওঠে। ২০০১ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক মাশরাফির। বৃষ্টির কারণে সেদিন ম্যাচের ফলাফল ড্র হয়।  একমাত্র জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং করা ইনিংসে ৪ উইকেট শিকার করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি। এই সিরিজেই তার ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক হয়।

গতির ঝড়ে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে বেশ পারদর্শী ছিলেন মাশরাফি। ২০০১ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৮ কিমি গতিতে বল করে দেশের সবচেয়ে দ্রুততম বোলারের খ্যাতিও পান তিনি। সময়ের সঙ্গে হয়ে ওঠেন ক্রিকেট মাঠে সকলের প্রিয় মুখ।

মাশরাফি পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই হয়ে থেকেছেন সবার চেয়ে আলাদা। নিজের জায়গা করেছেন সবার চেয়ে ওপরে। ঘাত-প্রতিঘাতের ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে টেস্ট খেলতে পেরেছেন মাত্র ৩৬টি। যার সবশেষটি আবার ২০০৯ সালে। ইনজুরির কারণে এরপর আর সাদা পোশাকে খেলতে পারেননি তিনি।

তারপরও এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী পেসারের নাম মাশরাফি বিন মর্তুজা। টেস্ট থেকে বাধ্যতামূলক সরে যাওয়ার পরের ১১ বছরেও উইকেটসংখ্যায় মাশরাফিকে ছাড়াতে পারেনি বাংলাদেশের আর কোনো পেসার। টেস্টে তার মোট শিকার ৭৮ উইকেট, ব্যাট হাতে তিন ফিফটিতে রয়েছে ৭৯৭ রান।

ইনজুরি দ্রুতগতির বোলার থেকে প্রায় মিডিয়াম পেসার বানিয়ে দিয়েছিল তাকে। বারবার আঘাত করা ইনজুরিকে হার মানিয়েছেন তিনি। ইনজুরির সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে মাঠে ফিরেছেন। নিজের প্রিয় সাদা পোষাকের ক্রিকেটে আর খেলতে পারেননি। মাশরাফি নিজেই জানিয়েছেন, ক্যারিয়ারে তিনবার ইনজুরিতে পড়ে মাঠে ফিরতে পারবেন বলে আশাই করেননি।

তবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হিসেবে অবসর নিয়েছেন। টি-টোয়েন্টিতেও ছিলেন অসাধারণ। তবে ক্রিকেটার মাশরাফি নিজেকে আলাদা করে চেনাতে শুরু করেন ২০১৪ সালে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর। তবে ততদিনে কেবল সীমিত ওভারের ক্রিকেটই ভরসা মাশরাফির।

সেই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাঝারি মানের বাংলাদেশ দলকে ক্রিকেট বিশ্বে আলাদা করে চেনাতে থাকেন। টাইগাররাও সমীহ আদায় করতে থাকেন মাশরাফির হাত ধরে। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ২০১৫ সালে সর্বপ্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেন। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে নিয়মিতই হারাতে থাকেন। এই দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজও জিতে বাংলাদেশ। এরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশকে সেমিফাইনালেও তোলেন অধিনায়ক মাশরাফি।

সবমিলিয়ে ওয়ানডে ফরম্যাটে বাংলাদেশকে ৮৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি। যার মধ্যে জিতেছেন ৫০টিতে। বাংলাদেশের আর কোনো অধিনায়ক ৫০ জয়ে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। জয়-পরাজয়ের হারেও (৫৮.১৩%) অন্য যেকোনো অধিনায়কের চেয়ে এগিয়ে মাশরাফি। টি-টোয়েন্টিতেও মাশরাফির অধীনে সর্বোচ্চ ১০টি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

অধিনায়ক হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ম্যাচে ইনজুরিতে পড়েন। শেষ হয়ে যায় তার নিজের টেস্ট ক্যারিয়ার। তবে ম্যাচটি জিতেছিল বাংলাদেশ। তাই টেস্ট ফরম্যাটে ১ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে সেটিতেই অপরাজিত মাশরাফি।

এরই মাঝে বিদায় নেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে। তার অধীনে বাংলাদেশ কুড়ি ওভারে ফরম্যাটে দেখেছে সর্বোচ্চ ১০ জয়। বিপিএলে আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে শিরোপাও জিতেছেন।

তবে কুড়ি ওভার ছেড়ে ওয়ানডেতে ফোকাস দিতে থাকেন মাশরাফি। ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে পরিকল্পনা সাজান। বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশকে নতুন করে চেনানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামেন অধিনায়ক মাশরাফি। বিশ্বকাপের আগে প্রথমবারের মতো ত্রিদেশীয় কোনো সিরিজের শিরোপা জেতেন। তবে বিশ্বকাপে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ব্যর্থ হয় টাইগাররা।

মাশরাফিও চলে আসেন ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে। বিশ্বকাপের পর কেবল জিম্বাবুয়ের সিরিজেই খেলেন জাতীয় দলের সবচেয়ে সফল এই ওয়ানডে অধিনায়ক। তবে ক্রিকেট এখনো না ছাড়েলেও মাঠে টাইগারদের এই মহানায়ককে দেখার সম্ভাবনা খুব কম।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই যোদ্ধা প্রায় ২০ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ২২০ ওয়ানডে, ৫৪ টি-টোয়েন্টি এবং ৩৬ টেস্ট। যেখানে প্রায় ৩০০০ হাজার রানের পাশাপাশি ৩৯০ উইকেট রয়েছে তার নামের পাশে। এর মধ্যে টাইগারদের পক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ২৭০ উইকেট মাশরাফির।

এই মুহূর্তে নিজেকে অবশ্য রাজনীতির ময়দানে ব্যস্ত রাখছেন মানুষের জন্য। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিজ জেলা নড়াইলের থেকে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন তিনি। করোনার এই সময়েও মানুষের জন্য কাজ করেছেন অসাধারণভাবে। নিজে করোনায় আক্রান্তও হয়েছেন। তবে যোদ্ধা মাশরাফি হার মানতে জানেন না। করোনাকেও হার মানিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে ক্রিকেট নয় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

খেলোয়াড় কিংবা অধিনায়ক হিসেবে দেশের ক্রিকেটে অনেক সাফল্যের রুপকার মাশরাফির জন্মদিনে ভয়েস টিভির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ২০১৪ সালে কাকতালীভাবে একই তারিখে জন্মগ্রহণ করে মাশরাফির দ্বিতীয় সন্তান সাহেল মর্তুজা। তাকেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like