Home জাতীয় ‌‘আলাদিনের প্রদীপে’ শতকোটি টাকা আত্মসাৎ!

‌‘আলাদিনের প্রদীপে’ শতকোটি টাকা আত্মসাৎ!

by Shohag Ferdaus

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষবর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। বয়স মাত্র ২২ বছর, এরই মাঝে শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। গড়ে তুলেছেন নামে বেনামে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে কিনেছেন জমিও। বলছিলাম অনলাইন শপ ‘আলাদিনের প্রদীপ’ এর সিইও মেহেদী হাসান মুনের কথা। যিনি কোম্পানি খুলে চটকদার বিজ্ঞাপনে ক্রেতা জুটিয়ে মাত্র সাত মাসে হাতিয়ে নিয়েছেন ১০০ কোটি টাকারও বেশি। এতে তিনি ব্যবহার করেছে ঢাবির সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের।

দেশব্যাপী কোম্পানির কার্যক্রম ছড়িয়ে দিয়ে লক্ষাধিক ক্রেতার অর্ডার নিয়ে এখন আর পণ্য দিচ্ছে না। বন্ধ করে দিয়েছে অফিস এবং কল সেন্টার। মেহেদী হাসান মুন আলাদিনের প্রদীপ হাতে পেলেও সর্বস্ব হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন টাকা দিয়ে পণ্যের অপেক্ষায় থাকা ক্রেতারা।

গত বছর আগস্টের শুরুতে অনলাইন শপ হিসেবে কোন ধরণের রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই যাত্রা শুরু করে আলাদিনের প্রদীপ। কোম্পানির সিইও হিসেবে রয়েছেন মেহেদী হাসান মুন আর ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। চলতি বছর রেজিস্ট্রেশন করে কোম্পানিটি, ছয়জনের উদ্যোগে মাত্র আড়াই লাখ টাকা বিনিয়োগে ব্যবসা শুরু হলেও কিছুদিন পরই বাদ দেয়া হয় পাঁচজনকে। ঢাবিয়ান বিজনেস কমিউনিটি নামে একটি গ্রুপের মাধ্যমে ক্রেতা জোগাড় করতেন তিনি।

‘বিভিন্ন পণ্যে বিশাল ছাড়, এক টাকায় ডেলিভারি ও দেশের প্রথম শিক্ষার্থীভিত্তিক ই-কমার্স প্ল্যাটফরম’ এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে অর্ডার দেয়া শুরু করে। প্রথম কয়েক দফা ছাড়ের বিজ্ঞাপনে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত লাখখানেক ক্রেতা পণ্যের জন্যে অর্ডার করে। তাতে কোম্পানি ছড়িয়ে যায় দেশব্যাপী। অফারে বেশিরভাগই ছিল মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, মোবাইল ফোনসহ দামি পণ্য। সবশেষ গত জুনের অফারে ৬১ হাজারেরও বেশি ক্রেতা আলাদীনের প্রদীপে নানা পণ্য অর্ডার করেন। এগুলোর মাঝে ঢাবির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদেরই প্রায় আড়াই হাজারের বেশি অর্ডার রয়েছে।

অর্ডারগুলো পাওয়ার পর থেকেই পাল্টাতে থাকে আলাদীনের প্রদীপের চরিত্র। যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয় ক্রেতাদের সঙ্গে। বন্ধ করে দেয়া হয় কল সেন্টারও। বারবার পণ্যের জন্যে যোগাযোগ করলে ফেসবুক গ্রুপ এবং পেজ থেকে ব্লক করে দেয়া হয়। এমন বিশাল প্ল্যাটফরমে ব্যবসা করা আলাদীনের প্রদীপ নামক কোম্পানিটির ঢাকায় কোনো স্থায়ী অফিস নেই। সিইও মুন জানিয়েছিলেন কোম্পানির চারটি অফিস রয়েছে এবং তার সবক’টিই সিরাজগঞ্জে। এছাড়া ঠিকানা হিসেবে লিখা রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ওয়েবসাইটে দেয়া অফিসের ঠিকানা রয়েছে বন্ধ।

২০ বছর আগে মারা যান মুনের বাবা, এরপর মা অনেক কষ্টে বড় করেছেন তাকে। ভোক্তাদের পণ্য না দিলেও মুন গত দেড় বছরে ড্রিমার্স টেলিকম, মাইন্ডিবিডি আইটি কেয়ার, ভিভো এক্সক্লুসিভ শোরুম, মাল্টিব্র্যান্ড মোবাইল প্লাজাসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন। অর্থ ঢালছেন বিভিন্ন পার্টনারশিপ ব্যবসায়। কিনেছেন জমিও।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনলাইন শপটিতে অর্ডার করা বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ রাজধানীতে তাদের কোনো অফিস না থাকায় তারা কোনোভাবেই কোম্পানিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলেও রিসিভ করছে না কেউ।

আলাদিনের প্রদীপের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুরু থেকে আস্থা অর্জনই ছিল কোম্পানিটির লক্ষ্য। এরপর থেকেই পিরামিড সার্কেলে ব্যবসায় নামতে চান মুন। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে বিক্রি দ্বিগুণ করা। প্রায় লাখখানেক অর্ডারের ১০০ কোটি টাকারও বেশি পণ্য সরবরাহ করা হয়নি ভোক্তাদের। অর্ডারগুলো নেওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অফিস। ব্যবসায়িক পলিসির বিরোধিতা করায় একের পর এক বাদ দেওয়া হয়েছে উদ্যোক্তাদের।

এদিকে, কোম্পানির সিইও মেহেদি হাসান মুন ভয়েস টেলিভিশনের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার এবং কোম্পানির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে কেউ এসব ঘটাচ্ছে।

ভয়েস টিভি/এসএন/এসএফ

You may also like