বলিউডের চিরসবুজ অভিনেত্রী রেখার জন্য কথাটি আপাদমস্তক সত্যি। জন্মের পর থেকে ৬৪টি বসন্ত অবধি জীবনের ছুড়ে দেওয়া তিরগুলোকে সাহসের সঙ্গে প্রতিহত করে এগিয়ে চলেছেন নিজ সক্ষমতায়। চেন্নাই থেকে জীবিকার সন্ধানে মুম্বাইয়ে ছুটে আসা এক কৃশকায় কিশোরী পুরুষশাসিত বলিউডে রাজত্ব করেছেন চার দশকেরও বেশি সময় ধরে।
জন্মই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল রেখার। শক্তিমান তামিল অভিনেতা জেমিনি গনেশন ও তেলেগু অভিনেত্রী পুষ্পাভ্যালীর ঘরে রেখার জন্ম ১৯৫৪ সালে। তবে রেখার মায়ের ছিল না বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি। সে কারণেই রেখার জন্মের পরে বাবার স্বীকৃতি মেলেনি। নিজের যোগ্যতায় কণ্টকাকীর্ণ বলিউডের শক্ত সিঁড়িগুলো মাড়িয়ে পৌঁছেছেন সাফল্যের চূড়ায়।
দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করে শৈশব পেরিয়ে যখন কৈশোরে তখন ১৪ বছর বয়সেই রঙিন চলচ্চিত্র জগতের অন্ধকার সিঁড়ি বাইতে শুরু করেন তিনি। পরিবারের দায়িত্ব নেয়া এই নারী নিজেই বলেছেন, ‘বেশির ভাগ সময় আমি ছিলাম আমার ভাইবোনদের মা, এমনকি আমার মায়েরও মা।’
সফলতার যে চূড়ায় রেখাকে দেখা যায়, সেই পথটা ততটাই কণ্টকাকীর্ণ ছিল। ১৪ বছরের কিশোরীর ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়ানো ছিল এক বিব্রতকর ঘটনা। প্রথম দিনের শুটিংয়ে রেখাকে কোনো কিছু না জানিয়ে পরিচালক আয়োজন করেন একটি ‘চুমু দৃশ্য’।
ক্যামেরার সামনে অতর্কিত সহ-অভিনেতার সে আচরণ, পুরো শুটিং সেটের সব কর্মীর উল্লাসে চুপসে যায় কৃশকায় কিশোরী। তবে ক্যামেরার সামনে সেই আচমকা আচরণে হেরে গিয়ে হারিয়ে যাননি তিনি। সব প্রশ্নের সব জবাব মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছেন সমান্তরালে।
রেখার অভিনয় কখনো প্রশংসা কুড়িয়েছে, কখনো সমালোচনা। ব্যক্তি জীবনে বারবার সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারিত হয়েছেন, ফিরে এসেছেন তবে সংসার বাঁধা হয়নি। যখন দিল্লির ব্যবসায়ী মুকেশের সঙ্গে ঘর বাঁধেন, সেখানেও ধাক্কা আসে কিছুদিন পরই। এরপর মুকেশের আত্মহত্যায় ‘জাতীয় ডাইনি’তে পরিণত হন রেখা।
অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তার জুটি ছিলো তুমুল জনপ্রিয়। ১৯৭৬ সালে ‘দো আনজানে’ ছবিতে তারা প্রথমবারের মতো জুটি বাঁধেন। তারপর থেকেই সম্পর্কের উত্থান। সহকর্মী হিসেবে কাছাকাছি এসে তারা বাঁধা পড়েন হৃদয়ের দাবির কাছে। তবে সেই প্রেম বলিউডে প্রচুর ডালপালা মেলে দিলেও কোনো পরিণতি পায়নি। ১৯৮১ সালে ‘সিলসিলা’ মুক্তির পর ভেঙে যায় অমিতাভ-রেখা জুটি। আর কখনই একসঙ্গে অভিনয় করেননি তারা। সাফল্য, রহস্য, প্রেমের গল্পে এ জুটির নাম ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এদিকে শোনা যায় অভিনেত্রী নার্গিসের স্বামী সুনীল দত্তের সঙ্গেও প্রেম করেছেন রেখা। এর কিছুকাল পরে বলিউডে গুঞ্জন শুরু হয় সুনীল দত্তের ছেলে সঞ্জয় দত্তের সঙ্গের সঙ্গে প্রেম করছেন তিনি। প্রেম নিয়ে মূলত রেখার জীবন বিতর্কে ভরপুর।
যাই হোক সফল অভিনেত্রী, তারকাশিল্পী, আবেদনময়ী নৃত্যশিল্পী এমন নানা পরিচয়ে বলিউড ইতিহাসের পাতায় রেখা জলজলে হয়ে থাকবেন নিঃসন্দেহে।
ভয়েসটিভি/এএস