Home ভিডিও সংবাদ অনিন্দ্য সুন্দর গাইবান্ধার দর্শনীয় স্থান

অনিন্দ্য সুন্দর গাইবান্ধার দর্শনীয় স্থান

by Amir Shohel

হাজার বছরের পুরোনো উত্তরাঞ্চলের অন্যতম স্থান গাইবান্ধা। আগে এর নাম ছিলো ভবানীগঞ্জ। কিন্তু ১৮৭৫ নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গাইবান্ধা। আর ১৯৮৪ সালে গাইবান্ধা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। কথিত আছে, গাইবান্ধার গোবন্দিগঞ্জে রাজধানী বানিয়েছিলেন বিরাট রাজা। তার প্রায় ৬০ হাজার গাভী ছিল। সেই গাভী বা গাই বাধা হতো এখানে। সেই থেকে গাইবান্ধা নামটি এসেছে। এ জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা ও যমুনা নদী। রয়েছে বেশ কিছু আর্কষনীয় স্থান। যার মধ্যে বালাসী ঘাট, ঘগোর বাজার মাজার, গাইবান্ধা পৌর পার্ক, ড্রিমল্যান্ড, হযরত শাহ জামালের মাজার পর্যটকদের কাছে বেশি জনপ্রিয়।

পৌর পার্ক
গাইবান্ধা পৌরসভার ভেতর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পৌরপার্ক। ১৯২৭ সালে গাইবান্ধা শহরবাসীর বিনোদনের জন্য জমিদার গোবন্দি লাল রায়ের দান করা ১ একর ৭ শতক জমিতে এই পৌর পার্ক তৈরি করা হয়। এই পার্কটি গড়ে উঠেছে একটি পুকুরকে ঘিরে। চারপাশে রয়েছে হরেক রকম ফুল, ফল ও বনজ গাছ। আর পুকুরে শান বাধানো ঘাট ও মাঝখানে রয়েছে ফোয়ারা। প্রতিদিনই বেলা বাড়ার সাথে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা।

বালাসী ঘাট
রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ বাড়াতে ১৯৩৮ সালে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাটে রেল ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। সেসময় ইংরজেরা গাইবান্ধাকে ফুলছড়ি ঘাটে নামেই চিনতো। ১৯৯০ সালের পর যমুনা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ফেরি সার্ভিসটি ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়ার বালাসীতে সরিয়ে নেয়া হয়। আর তখন থেকেই এলাকাটি পরিচিতি পায় বালাসী ঘাট নামে।

যমুনা নদীর তীরে হওয়ায় এই বালাসী ঘাটও এখন একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। গাইবান্ধা শহর থেকে বালাসী ঘাটের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। বর্ষায় যমুনার দুকুল ভরে গেলেও শীতে জেগে ওঠে চর।এই নির্মল প্রকৃতি দেখতে প্রতিদিনই ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে বালাসী ঘাটে। প্রমত্ত যমুনার উত্তাল ঢেউ, নির্মল বাতাস প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে টানে।

এসকে এস ইন্
গাইবান্ধা-নাকাইহাট সড়কের রাধাকৃঞ্চপুরে গড়ে উঠেছে এসকে.এস.ইন্ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। ভ্রমণপিপাসুদের কথা চিন্তা করে গাইবান্ধার বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন এসকে.এস ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলে। এখানে রয়েছে আধুনিক আবাসন সুবিধাসহ খাবারের ব্যবস্থা। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, সভা, সেমিনার, কর্মশালা আয়োজনের জন্য রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৫টি হলরুম। এরমধ্যে একটি ২০০ আসনের, ও ৫০ আসনের, একটি ৮০ আসনের এবং দুটি ৩৫ আসনের। এখানে উন্মুক্ত জলাধারের পাশে তৈরি রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় দেশি সবধরনের খাবারসহ, চাইনজি ও ফার্স্টফুড। এছাড়া বাড়িতে বসেই যে কেউ খাবারের অর্ডার দিতে পারবেন।

জামালপুর শাহী মসজিদ
গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিম সাদুল্লাপুর উপজলার বড় জামালপুর গ্রামে রয়েছে জামালপুর শাহী মসজিদ। জনশ্রুতি আছে, প্রায় ৬০০ বছর আগে ইসলাম প্রচারের জন্য ইরাক থেকে গাইবান্ধা শহরে আসেন সুফি হযরত শাহ জামাল (রঃ)। তার তত্ত্বাবধানেই এই ঐতিহাসিক শাহী মসজিদটি তৈরি হয়। পরে তার নামেই ইউনিয়ন পরিষদ ও মসজিদের নাম দেয়া হয়। মসজিদের উত্তর পাশে রয়েছে হযরত শাহ জামালের মাজার।

তবে জামালপুর শাহী মসজিদটি র্দীঘদিন মাটির নিচে চাপা ছিলো। ষাটের দশকে গাইবান্ধা মহকুমার প্রশাসক হক্কানী কুতুবউদ্দনি নামের এক ব্যক্তি বেশ কয়েকবার মসজিদটির অনুসন্ধান করে ব্যর্থ হন। কিন্তু হঠাৎ প্রচন্ড ঝড়ে একটি বটগাছ ভেঙ্গে গেলে সেখানে মসজিদটি দেখতে পায় স্থানীয়রা। এ কারণে স্থানীয়রা এই মসজিদকে গায়েবি মসজিদ নামেও চেনে। মসজিদের সামনে আছে একটি বিশাল দিঘী। আর দিঘীটি ঘিরেও রয়েছে নানা লোককথা।

শাহ সুলতান গাজী মসজিদ
বর্তমানে গাইবান্ধা জেলার দাড়িয়াপুরে অবস্থিত প্রাচীন একটি মসজিদ শাহ সুলতান গাজী মসজিদ। বিভিন্ন শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৩০৮ সালে সৈয়দ ওয়াজেদ আলী এই মসজিদটি খুজে বের করে সংস্কার করেন। পরে শাহ্ সুলতান নামের এক ধর্ম প্রচারকের নামে মসজিদটি পরিচিতি পায়। এই মসজিদের পাশে রয়েছে শাহ্ সুলতান গাজীর মাজার। প্রতি বছর বৈশাখে এখানে মেলা বসে।

সবুজে ঘেরা উত্তরাঞ্চলের অন্যতম্য প্রাচীন স্থান গাইবান্ধায় জেলা রয়েছে ঐতিহ্যের নিবিড় ছোয়াঁ। তাইতো দেশি-বিদেশি ভ্রমন পিপাসু প্রতিবছরই ছুটে আসেন এখানে।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like