সাবেক বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে অবৈধ সম্পদের মামলার দুই ধারায় মোট আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগের দুটি ধারায় লুৎফুজ্জামান বাবরকে পাঁচ ও তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে রায়ে। জরিমানার অনাদায়ে আরও তিন মাস সাজা খাটার কথা বলা হয়েছে রায়ে।
বিচারক বলেছেন, বাবরের হাজতবাসকালীন সময় তার সাজা থেকে বাদ যাবে।
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই থেকে এই মামলার সাজা কারাগারে থেকে অনেক আগেই ওই সময় পার করে ফেলেছেন। আরো দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ও ঝুলছে তার মাথার ওপর।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাবর বলেন, ‘সাজার মেয়াদ পার হয়ে গেলেও যেহেতু এই রায়ে অপরধী বলে সাব্যস্ত হলাম, আমি অবশ্যই আপিল করব।’
গত ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলার আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন বাবর। তবে তার পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিল না।
বাবরের পক্ষে আইনজীবী হিসাবে মামলা পরিচালনা করেন মো. আমিনুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল।
সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে যৌথবাহিনীর হাতে আটক হন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। ২০০৮ সালের ১৩ জানুয়ারি রমনা থানায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলাটি দায়ের করে দুদক।
আরও পড়ুন : বাবরের অবৈধ সম্পদের মামলার রায় আজ
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম এ মামলার বাদী। তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৬ জুলাই দুদকের উপসহকারী পরিচালক রূপক কুমার সাহা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে বাবরের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৫ লাখ ৯১ হাজার ৮৯৬ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
সেখানে বলা হয়, বাবর দুদকে ৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩১ হাজার ৩১২ টাকার সম্পদের হিসাব দাখিল করেছিলেন। প্রাইম ব্যাংক এবং এইচএসবিসি ব্যাংক দুটি এফডিআরে ৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ২১৮ টাকা এবং বাড়ি নির্মাণ বাবদ ২৬ লাখ ৪২ হাজার ৬৭৮ টাকার তথ্য তিনি গোপন করেছেন।
২০০৮ সালের ১২ অগাস্ট বাবরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত বিচার শুরুর আদেশ দেয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে মামলার বিচার দীর্ঘদিন আটকে থাকে।
বিচারিক আদালত পরিবর্তনের জন্য বাবরের করা আবেদন খারিজ করে হাই কোর্ট গত বছর ৩০ দিনের মধ্যে এ মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলে আবার শুনানির পথ খোলে। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ৪ অক্টেবার মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।
নেত্রকোনা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাবর ১৯৯১ সাল থেকে ৩ বার সাংসদ নির্বাচিত হন বাবর। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র জব্দর মামলার রায়ে সাবেক এই বিএনপি নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ভয়েস টিভি/এমএম