Home জাতীয় চিকু সুমনের আইস নেটওয়ার্কে আছে ১০ তরুণী

চিকু সুমনের আইস নেটওয়ার্কে আছে ১০ তরুণী

by Mesbah Mukul

বারো বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছেন রাজধানীর খিলগাঁওয়ের পশ্চিম নন্দীপাড়ার সুমন খন্দকার ওরফে চিকু সুমন। পুলিশের হাতে ১০ বার গ্রেপ্তারও হয়েছেন তিনি। তারপরও মাদক ব্যবসা ছাড়েননি কখনো। বরং মাদক ব্যবসা প্রসারিত করে দুই বছর ধরে ইয়াবার পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে ক্রিস্টাল মেথও (আইস) আনছেন। তার আইস নেটওয়ার্কে রয়েছেন ১০ তরুণী। ইয়াবা ও আইস বহনে তাদের ব্যবহার করা হয়।

সুমনের নিজের প্রাইভেটকারে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে তারা চাহিদামতো মাদক পৌঁছে দেন তরুণীরা। ঢাকা, গাজীপুর ও নরসিংদীতে রয়েছে সুমনের মাদকের নেটওয়ার্ক।

১৬ ডিসেম্বর খিলগাঁও থেকে ২০০ গ্রাম আইস, ২০০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন সুমন, তার সহযোগী রবিউল ইসলাম ওরফে রবি এবং মহিউদ্দিন ওরফে সাগর শেখ। মাদক বহনে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লালবাগ বিভাগ তাদের গ্রেফতার করে। গত জানুয়ারি মাসেও আইস, ইয়াবাসহ গোয়েন্দারা গ্রেফতার করেছিল সুমনকে। কিছুদিন পরই তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।

ডিবির লালবাগ বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান বলেন, সুমন বড় মাদক কারবারি। গ্রেপ্তারের পর জামিনে বেরিয়ে ফের ইয়াবা ও আইস ব্যবসা শুরু করেন। তার মাদক কারবারে একাধিক নারী সদস্য রয়েছেন। প্রতি মাসে কক্সবাজার থেকে মাদকের একাধিক চালান নিয়ে আসেন তারা। তিনি বলেন, সুমনের নেটওয়ার্কের অপর সদস্যদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।

আরও পড়ুন : রাইস ওয়াটার ব্যবহারে উজ্জ্বল করে ত্বক

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সুমনের মাদক কারবারে তরুণী সদস্যরা ‘ট্যুরিস্ট’ হিসেবে কক্সবাজারে যান। সেখানে কয়েক দিন থাকার পর লাগেজের মধ্যে করে ইয়াবা ও আইস নিয়ে ঢাকায় আসেন। একটি চালানে মাদক আনার পর পরের চালানে অন্য তরুণীকে পাঠানো হয়, যাতে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। এ ছাড়া কৌশলের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যে তরুণীর সঙ্গে পুরুষ সদস্যও থাকেন। তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেন, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সন্দেহ করতে না পারে।

সুমনের কাছ থেকে ইয়াবা ও আইস পাইকারি কেনেন এমন ১০ জনের তথ্য পেয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- বাসাবোর নাদিম, ধানমন্ডির প্রিন্স, যাত্রাবাড়ীর এক নারী- যিনি ভাবি নামে মাদক জগতে পরিচিত, শনির আখড়ার খোকন, গাজীপুরের শরীফ ও জমসেদ। তাদের কাছে মাদক পৌঁছে দেন তরুণীরা।

মাদক জগতে সুমনের প্রবেশ মাদক সেবনের মধ্য দিয়ে। তিনি প্রথম দিকে ফেনসিডিল খেতেন। কিছুদিন পর শুরু করেন ইয়াবা সেবন। মাদকাসক্ত থেকে এক পর্যায়ে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়েন। প্রথম দিকে খিলগাঁও এলাকার ইয়াবা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে খুচরা বিক্রি করতেন। মাদক কারবারে তার পরিধি বাড়তে থাকে। পরে নিজেই পাইকারি কারবারি হয়ে ওঠেন।

রাজধানীর চারটি থানায় সুমনের বিরুদ্ধে ১১টি মাদক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বপ্রথম ২০১৭ সালে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়। এ থানায় তার বিরুদ্ধে মোট মামলা সংখ্যা আটটি। এ ছাড়া মতিঝিল, পল্টন ও হাতিরঝিল থানায় একটি করে মামলা রয়েছে। তার সহযোগী রবিউলের বিরুদ্ধে খিলগাঁও, পল্টন ও হাতিরঝিল থানায় তিনটি মাদক মামলা রয়েছে। অপর সহযোগী সাগরের বিরুদ্ধে রয়েছে সাতটি মাদক মামলা। এর মধ্যে মুগদা থানায় একটি, পল্টন থানায় তিনটি, রমনা থানায় একটি, খিলগাঁও থানায় দুটি ও শাহাজাহানপুর থানায় একটি। এই দু’জনও এর আগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সুমন, রবিউল ও সাগরের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ১৬ ডিসেম্বর খিলগাঁও থানায় করা মামলার বাদী ডিবির লালবাগ বিভাগের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, মাদক বহনের সময় তিনজনের কাছ থেকে যে প্রাইভেটকারটি জব্দ করা হয়েছে তা সুমনের। এই গাড়ি দিয়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাইকারি ক্রেতাদের কাছে মাদক পৌঁছে দেওয়া হতো।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like