Home ভিডিও সংবাদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  শিক্ষায় আলো ছড়াচ্ছে এইচএসটিইউ

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  শিক্ষায় আলো ছড়াচ্ছে এইচএসটিইউ

by Imtiaz Ahmed

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে দিনাজপুর জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের।

দিনাজপুর তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক গৌরব,পাক-ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা,ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হাজী মোহাম্মদ দানেশ। কিংবদন্তী এই মানুষটি দিনাজপুরের গণ্ডি পেরিয়ে সারা দেশ তথা উপমহাদেশে শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের মুক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পান। তারঁ নামেই প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যাপীঠ ।

জেলা শহরের ১৩ কিলোমিটার উত্তরে দিনাজপুর ঢাকা- মহাসড়কের বাঁশেরহাট নামক স্থানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ” এর নামানুসারে ১৯৭৬ সালে যাত্রা শুরু হয় এগ্রিকালচার এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (এইটিই)এর।

সে সময় এখানে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার পরিচালনা করা হতো। ১৯৮৮ সালে ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটিকে স্নাতক প্রদানকারী কলেজে রুপান্তরিত হয়ে এর নামকরণ করা হয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজ। ১৯৯৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজকে হাজী মোহম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দেন।

২০০০ সালে কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৮ জুলাই ২০০১ সালে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ করা হয়। ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ওই বছরের ১৬ এপ্রিল হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো: মোশাররফ হোসেন মিঞাঁ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম উপাচার্য ছিলেন। এটি উত্তরবঙ্গ তথা রংপুর বিভাগের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। কোর্স ক্রেডিট সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালিত।

১০৩ একর আয়তনের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে নয়টি অনুষদ এবং ৪৫টি বিভাগ চালু রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ হাজারের অধিক। হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৩১৮জন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে  ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের বামে চোখে পড়বে সবুজ গাছপালার সমারোহ। আছে লাল-সাদা ইটের সমন্বয়ে তৈরী দৃষ্টিনন্দন সব ভবন। বিদ্যাপিঠটিতে প্রবেশের পর হাতের বামে দেখা মিলবে ছাত্র-ছাত্রীদের শরীর চর্চার জন্য আধুনিক জিমনেসিয়াম।

এর পাশেই সুউচ্চ দৃষ্টি নন্দিত ভবন যার নাম ড. এম. ওয়াজেদ মিঞাঁ ভবন। এই ভবন থেকে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে প্রাশাসনিক ভবন। ভবনের সামনে দেখা মিলবে বাহারি ফুলের সংমিশ্রণ ও দেশি বিদেশি নানা জাতের ছোট ছোট শোভাবর্ধক গাছ। আর ডানপাশে চোখ ধাধানো বিরল প্রজাতির উদ্ভিদে বেষ্টিত বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর মাঝে দৃষ্টি নন্দিত ফোয়ারা চত্তর বাড়িয়ে দিয়েছে গার্ডেনের শোভা।

বিশ্ববিদ্যালটিতে রয়েছে ৪টি একাডেমিক ভবন সহ ১টি নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবন, রয়েছে অডিটোরিয়াম-১ ও আধুনিক সুবিধা সম্বলিত অডিটোরিয়াম-২। বিদ্যালয়টির  অন্যতম একটি অংশ এখানকার লাইব্রেরি। প্রায় ২৫ হাজার বইয়ে সমৃদ্ধ আধুনিক এ লাইব্রেরিতে অধিক জ্ঞান আরোহনের জন্য আসে এখানকার অনেক শিক্ষার্থী।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের থাকার জন্য রয়েছে ৮টি আবাসিক হল। এর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক হলসহ ছেলেদের জন্য রয়েছে মোট ৫টি আবাসিক হল ও মেয়েদের জন্য রয়েছে ৩টি আবাসিক ছাত্রী হল,আর নির্মানাধীন রয়েছে ৭২০ সিটের আরো একটি অত্যাধুনিক ছাত্রী নিবাস।

শিক্ষার্থীদের জন্য টিএসসি ভবনে রয়েছে আধুনিক ক্যান্টিন,বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সভা-সমাবেশ করার জন্য ডি-বক্স চত্তর, নামাজের জন্য রয়েছে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ,শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এছাড়াও আরো আছে শিশু পার্ক,পোস্ট অফিস,ব্যাংকের শাখা,সর্বাক্ষণিক ইন্টারটের সুবিধা,খেলার মাঠ,মেডিক্যাল সেন্টার ও বোটানিক্যাল গার্ডেন।

দেশের আন্যান্য সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চেয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তবে কয়েক বছরে এসব শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমলেও প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান এখনো শীর্ষে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন ১৫৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল হলে ১২৮ জন প্রবাসী ছাত্র ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২৬ জন প্রবাসী ছাত্রী আছেন।

১৯৯৯ সালে ১২৫ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলছে। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে গেছে এ বিদ্যাপিঠ।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ৫ তলা বিশিষ্ট একটি টিএসসি ভবন । মুজিববর্ষে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র কেন্দ্র টিএসসি’তে ক্যারিয়ার এডভাইজারি সার্ভিস ক্যাডস এর  শিগগিরই উদ্বোধন করবেন এখানকার ভিসি। পৃথিবীর যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ,সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি,মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির চাকরির সুযোগ সুবিধা,যে কোনো চাকরির আবেদনের যোগ্যতা ও আবেদনের শেষ তারিখসহ  বিভিন্ন তথ্যসেবা দেয়া হবে এই অফিস থেকে।

পশু-পাখিদের জন্য ব্যতিক্রমী এক ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিকের যাত্রা শুরু করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। পশু-পাখি অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তাদের নেয়া হবে চিকিৎসা কেন্দ্রে । গত ১২ ফেব্রয়ারি তিনটি গরুর অস্ত্রপাচারের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে এই বিশেষায়িত ক্লিনিকটি। পশু-পাখি অসুস্থ হলে মোবাইলে ফোন করে ঠিকানা দিলে সেখানে পৌঁছে যাবে এই ক্লিনিক। আর সেখানেই হবে চিকিৎসা।

এছাড়া মুজিববর্ষে দেশের প্রথম ‘কৃষক সেবা কেন্দ্রের’ উদ্বোধন করা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।  ভিসি অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ৯ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন সেবাকেন্দ্রটির। এর মধ্যে কৃষক সেবা কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন স্থানীয় কৃষকরা নানা সমস্যার সমাধান পেতে শুরু করেছেন। এতে স্থানীয় কৃষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সেতুবন্ধন হয়েছে।

দিনাজপুরের কৃষির মানোন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে সেবাকেন্দ্রটি। পাশাপাশি এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঠ পর্যায়ে গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়মিতভাবে সেবা প্রদান করছেন স্থানীয় কৃষকদের। ধীরে ধীরে জনবল বৃদ্ধির ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের  শিক্ষা ক্ষেত্রে অসমান্য অবদান রেখে চলেছে।  সহজ শিক্ষা পদ্ধতি,শিক্ষার কম ব্যয় এবং অধিক ব্যবহারিক ক্লাস হওয়ার কারনে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

ভয়েস টিভি / আইএ  

You may also like