মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে মানবপাচারের সঙ্গে বিদেশি দুইটি এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। ওই দুই এয়ারলাইন্সের ৫-৭ জন কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই যাদের পাচার করা হয়েছে, তাদের সবাইকেই ভিজিট ভিসা বা কনফারেন্স ভিসায় নেয়া হয়েছে। এসব ভিসায় কেউ কোনো দেশে গেলে তাদের রিটার্ন টিকিট থাকার কথা। কিন্তু যাদের পাচার করা হয়েছে তাদের কেউ-ই রিটার্ন টিকিট নেননি।
১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য জানান।
লিবিয়ায় মানবপাচার মামলার ছয় পলাতক আসামির সন্ধান চেয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারির বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মাহবুবুর রহমান বলেন, মানবপাচারের তদন্তে নেমে এর সঙ্গে দুটি এয়ারলাইন্সের কর্মীদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে সিআইডি।
এয়ারলাইন্স দুটির নাম প্রকাশ না করলেও সিআইডি প্রধান বলেছেন, সেগুলো বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি নয়। তদন্তে দেখা যায়, এ দুটি এয়ারলাইন্স সিঙ্গেল টিকেটে লোক পাঠিয়েছেন, যা অন্যায়।… কোনো সেমিনারে, চিকিৎসা নিতে; এমনকি ভ্রমণে গেলেও কখনো সিঙ্গেল টিকেটে যাওয়ার কথা নয়।
ওই দুটি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব তদন্তেও ‘বিষয়টি দেখতে পেয়েছে’ বলে জানান মাহবুবুর রহমান।
এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশনের কোনো দায় ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের যাওয়া এবং আসার দুটি টিকিট দেখানো হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রিটার্ন টিকিটটি সঠিক নয়। এটা ওই এয়ারলাইন্সের লোকজনও জানে এবং তারা জড়িত।
ওই দুই এয়ারলাইন্সের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সিআইডি অফিসে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথাও সাংবাদিকদের বলেন পুলিশের এই অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক।
গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করে একদল মানব পাচারকারী ও তাদের স্বজনরা। ওই ঘটনায় চার আফ্রিকান অভিবাসীও নিহত হন।
ওই ঘটনার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৬টি মামলা হয়েছে। মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দেড় শতাধিক লোককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
সেসব মামলার পলাতক ছয় আসামির সন্ধান চেয়ে দুদিন আগে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে বাংলাদেশ।
এরা হলেন- ইকবাল জাফর, তানজিরুল, স্বপন, শাহাদাত হোসেন, নজরুল ইসলাম মোল্লা ও মিন্টু মিয়া।
তাদের মধ্যে নজরুলের বাড়ি মাদারীপুরে, শাহাদাতের ঠিকানা ঢাকায়। বাকি চারজনই কিশোরগঞ্জের বলে ইন্টারপোলের নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসের পর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩৮ জন ভিকটিমকে উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ইতালি ও স্পেনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ার বেনগাজিতে।
ত্রিপলীর মিজদায় বাংলাদেশি মানব পাচারকারীদের সহায়তায় লিবিয়ার মাফিয়া গ্রুপ ভিকটিমদের অমানবিক নির্যাতন শুরু করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। তারপর ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
লিবিয়ার ওই ঘটনায় দায়র হওয়া ২৬টি মামলার মধ্যে ২৫টির তদন্ত করছে সিআইডি। এসব মামলায় ২৯৯ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং ১৭১ জন গ্রেফতার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মাহবুবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত তদন্তে ঘুরে ফিরে ইন্টারপোলে দেয়া ছয়জনের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে তানজিমুল ইতালিতে অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আর বাকিদের অবস্থান জানতে পারিনি বলেই ইন্টারপোলের সহযোগিতা চেয়েছি।
ভয়েস টিভি/এসএফ