Home বিশ্ব ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়ায় ৮৬ বছর পর জুমা’র নামাজ

ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়ায় ৮৬ বছর পর জুমা’র নামাজ

by Amir Shohel

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ৮৬ বছর পর আবারও শুক্রবারের জুমা নামাজ হলো তুরস্কের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়ায়। যে স্থাপনাটি নিয়ে খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মর্যাদার লড়াই দীর্ঘদিনের। তবে শেষ পর্যন্ত স্থাপনাটি মুসলিমদেরই হলো।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া। স্থাপনাটি ৯১৬ বছর টানা চার্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর ১৪৫৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩৫ সাল প্রায় ৫০০ বছর ধরে মসজিদ হিসেবেই পরিচিত ছিল এটি। এরপর ৮৬ ধরে এটা জাদুঘর হিসেবে পরিচিত ছিল।

এশিয়া ও ইউরোপ এই দুই মহাদেশেই অবস্থান তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের। বসফরাস প্রণালীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দেড় হাজার বছরের ঐতিহাসিক নান্দনিক স্থাপত্য ’আয়া সোফিয়া’।

৫’শ ৩৭ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেন্টাইন শাসনামলে প্রথম জাস্টিনিয়ানের নির্দেশে নির্মাণ কাজ শেষ হয় ’আয়া সোফিয়া’র’। স্থাপত্যকলার ইতিহাসে অন্যমাত্রা যোগ করেছে আয়া সোফিয়া। আর এই স্থাপত্য সোফিয়া সম্পর্কে অনেকেরই রয়েছে অজানা। এখানে প্রবেশ করতেই এর কারুকাজ যে কারোরই চোখ জুড়াবে।

স্থাপনাটি খ্রিস্টান এবং মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষের কাছেই মর্যাদাপূর্ণ। ইতিহাসের পালাবদলের সঙ্গে বদলেছে এর পরিচয় এবং ব্যবহার। বানানো হয়েছিল বাইজেন্টাইন খ্রিস্টানদের উপাসনালয়। কালের বিবর্তনে ব্যবহৃত হয়েছে গ্রিক সনাতন খ্রিস্টানদের ক্যাথেড্রাল, রোমান ক্যাথলিকদের ক্যাথেড্রাল এবং মুসলিমদের মসজিদ হিসেবে। এখানে ছিল অর্থডক্স চার্চের প্রধানের অবস্থান। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজকীয় অনুষ্ঠান, রাজার অভিষেক ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতো এখানেই।

আয়া সোফিয়ার মার্বেলের রঙিন যে নঁকশা রয়েছে, গির্জার সেই মূল অংশে দাঁড়িয়েই মুকুট পরতেন নতুন বাইজেন্টাইন সম্রাটরা। ৯’শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল ’আয়া সোফিয়া’।

১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায় কনস্টান্টিনোপল। এর নতুন নাম হয় ইস্তাম্বুল। চিরকালের মত অবসান ঘটে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের। উসমানীয় এই সুলতান কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর খ্রিস্টানদের কাছ থেকে আয়া সোফিয়া কিনে নেন। এরপর তারই নির্দেশে স্থাপত্যকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। সেখানেই তিনি প্রথম জুমার নামাজ পড়েন। ইস্তাম্বুলে ১৬১৬ সালে ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত আয়া সোফিয়াই ছিল শহরের প্রধান মসজিদ।

আয়া সোফিয়া নিয়ে খ্রিস্টান- মুসলমানদের দ্বন্দ্বের অবসান টানতে প্রায় ৫শ’ বছর পর ১৯৩৪ সালে একে জাদুঘরে রূপান্তর করেন আধুনিক তুরস্কের রূপকার কামাল আতাতুর্ক। জাদুঘর থাকাকালীন ১৯৮৫ সালে বিশ্ব-ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় এ স্থাপনাটি।

দৃষ্টিনন্দন আয়া সোফিয়ার বিশাল সোনালী গম্বুজটি মেঝে থেকে কমপক্ষে ১’শ পঞ্চাশ ফুট উঁচুতে। সোনালী রঙের বিশাল গম্বুজটি দেখতে অনেকটা স্বর্ণের গম্বুজের মত। প্রতিবছর লাখো মানুষ এই ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে ভিড় জমান ইস্তাম্বুলে।

আয়া সোফিয়া খ্রিস্টান এবং মুসলমানদের বিরোধ চলেছে যুগ যুগ। তবে আবারও মসজিদে রূপ দিতে নড়েচড়ে বসেন বর্তমান ক্ষমতাসীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান। ২০২০ সালের ১০ জুলাই দেশটির উচ্চ আদালত এক ঐতিহাসিক রায় দেয়। সে রায়ে ১৯৩৪ সালের তৎকালীন মন্ত্রী পরিষদের জাদুঘরে রুপান্তরিত করার আদেশটি রহিত করা হয়। এরপরই পূরণ হয় মুসলমানদের স্বপ্ন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ জুলাই শুক্রবারের জুমার নামাজের মধ্য দিয়ে আবারও এখানে নিয়মিত নামাজ পড়বেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

 

ভয়েসটিভি/সাম্মা/এএস

You may also like