Home ভিডিও সংবাদ ঐতিহ্যবাহী রংপুর কারমাইকেল কলেজ

ঐতিহ্যবাহী রংপুর কারমাইকেল কলেজ

by Amir Shohel

কারমাইকেল কলেজ দেশের অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৬ সালে রংপুরে স্থাপিতে এ প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় বাংলার গভর্নর লর্ড ব্যারন লর্ড ব্যারন কারমাইকলের নামানুসারে। সৃষ্টির লগ্ন থেকেই বৃহত্তর রংপুরের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে ব্যপক অবদান রেখে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি। কলেজটি বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।

প্রতিষ্ঠালগ্নে রংপুরের কিছু শীর্ষস্থানীয় জমিদার কলেজটি প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, তারা ৩শ একর জমিতে কলেজ ভবন নির্মাণের জন্য ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকাও সংগ্রহ করেন।

৬১০ ফুট লম্বা ও ৬০ ফুট প্রশস্ত এই কলেজ ভবন, যা জমিদারি স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। এ কলেজটি বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও মোঘলীয় নির্মাণ কৌশলকে মনে করিয়ে দেয়।

কারমাইকেল কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯১৭ সালে কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক চালু করা হয়। উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান ১৯২২ সালে ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ১৯২৫ সাল থেকে শুরু হয়। বর্তমানে কলেজটিতে ১৮টি বিষয়ে অনার্স মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থীর এই জ্ঞানের পাঠশালায় আলো ছড়াচ্ছেন ১৮০ গুণি শিক্ষক।

১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। দেশ বিভাগের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৫৩ সালে নতুনভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন করা হয় যা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছিল। পরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯২ সাল থেকে কারমাইকেল কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়।

‘অক্সফোর্ড ভিলেজের’ আদলে প্রায় নয়’শ বিঘা জমির উপর দৃষ্টিনন্দন, অপূর্ব শিল্পসৃষ্টি এ কলেজের মূল ভবনটি । যা ৬১০ ফুট লম্বা আর ৬০ ফুট প্রশস্ত । এই ভবনটি জমিদারি স্থাপত্যের এক অনন্য নির্দশন। শিক্ষানুরাগী, স্থানীয় জমিদার, সাধারণ মানুষের আকাঙ্খার বহিঃপ্রকাশ এ কলেজটি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিক্ষার্থীরা এ কলেজে আসে পড়াশোনা করতে। এই প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার প্রসার, জীবনবোধের গভীরতা, সৃষ্টির সুবর্ণ দুয়ার উম্মোচনের কারিগরও বটে।

১৯১৭ সালে রংপুর জেলা পরিষদ ভবনে প্রথম শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন জার্মান নাগরিক ড. ওয়াট কিন্স। ১৯২২ সালে লর্ড লিটন কারমাইকেল কলেজ পরিদর্শনে আসেন। এরপর আইএসসি, বিএসসি খোলার প্রতিশ্রুতি দেন। বাংলা, সংস্কৃত,আরবি, ফারসি, ইংরেজি, ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন ও গনিত বিভাগ খোলার অনুমতি দেয়া হয়। সেই থেকে কলেজটিকে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার চেষ্টা শুরু হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে কলেজটির শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আছে এক বড় অবদান। এদের মধ্যে অধ্যাপক শাহ মোহাম্মদ সোলায়মান, অধ্যাপক আব্দুর রহমান, অধ্যাপক সুনীল বরণ চক্রবর্তী, অধ্যাপক রামকৃষ্ণ অধিকারী, অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন রায়, অধ্যাপক কালাচাঁদ রায় এবং শিক্ষার্থী মুখতার এলাহী, গোলাম গোস নওশা এবং শরিফুল আলম মকবুল অন্যতম।

এ ছাড়াও ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে উত্তরবঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে এ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিল।

সুবিশাল ক্যাম্পাস, ছায়া সুনিবিড় এই বিশাল প্রাঙ্গনে রয়েছে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার, সুদৃশ্য মসজিদ,মন্দির, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হল, ক্যান্টিন,ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্রামাগার, শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিশাল দুটি খেলার মাঠ ও পুকুর।

কলেজের উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন- প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, জাতীয় সংসদের প্রথম স্পীকার শাহ আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এম আব্দুর রহিম, তেভাগা আন্দোলনের নেতা মণিকৃষ্ণ সেন সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিনসহ অনেকেই।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like