Home ভিডিও সংবাদ কবি শেখ ফজলল করিমের ‘কবি বাড়ি’

কবি শেখ ফজলল করিমের ‘কবি বাড়ি’

by Amir Shohel

কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক/ কে বলে তা বহুদূর/ মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক/ মানুষেতে সুরাসুর…। এই চরণগুলো পড়লেই মনে ভাসে শেখ ফজলল করিমের কথা। সমসাময়িক ঘটনা, চিন্তা-চেতনা, ধর্ম-দর্শন, সাম্প্রদায়িক বিরোধ, সমাজ-সংস্কার, নারী শিক্ষাসহ সমাজ পরিবর্তনের উপদেশমূলক লেখনি দিয়ে বাঙালির মনে আলাদা এক জায়গা করে নিয়েছেন এই নীতিবাদী সাহিত্যিক।

নিজ জন্মভূমিতে অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে কবির স্মৃতিচিহ্ন। ১৮৮৩ সালের ১৪ এপ্রিল লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের সরদার পরিবারে শেখ ফজলল করিম জন্মগ্রহণ করেন। এ গ্রামেই রয়েছে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি।

লালমনিরহাট-বুড়িমারী সড়ক থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটা দূরত্বের পর পল্লীগাঁয়ে বিশাল পুকুরের পাশেই কবি বাড়ি। যেখানে কেটেছে কবির জীবন। এখানে বসেই তিনি তাঁর কাব্য সৃষ্টি করেছেন। কারুকার্যময় নকশায় তৈরি করা কবির ঘর। পাশে মসজিদ ও বিশাল পুকুর। ছায়া নিবিড় বাড়িটি আজও পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকে সারাক্ষণ।

বাড়িটিতে সংরক্ষণে রয়েছে, কবির হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, ব্যবহৃত তৈজসপত্র, চেয়ার, খাট, গ্রামোফোন, টুপি, দোয়াত-কলম, কোরআন শরীফ, ম্যাগনিফাইং গ্লাস, টেবিল ক্লোথ, চাদর ও কোর্টের কিছু বোতাম। যা আজও পরম যত্নে সংরক্ষেণ রেখেছেন ওয়াহেদুন্নবী নামে কবির একজন দৈহিত্র। যা দেখতে আজও কবি বাড়িতে ভিড় করেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রেমিরা।

গৃহশিক্ষকের কাছে বাল্যশিক্ষা নেয়ার পর রংপুরে উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন কবি শেখ ফজলল করিম। সেখান থেকে মাইনর পাস করে ১৯০১ সালে স্থানীয় জুট ফার্মে চাকরি নেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শাহাবিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস’। গড়ে তুলেন করিমস আহামদিয়া লাইব্রেরি। যদিও এখন এর চিহ্নও পাওয়া যায়নি। তবে ২০০৫ সালে কাকিনায় ‘ফজলল করিম স্মৃতি পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন কোনো কার্যক্রম নেই। পাঠাগারে ঝুলে আছে তালা। ১৯৯৩ সালে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের পাশে কবি বাড়ির দিকনির্দেশক মাইল ফলকটি পথচারীদের স্মরণ করে দিচ্ছে, এটি কবির পূণ্যভূমি।

জীবদ্দশায় কবির মোট ৫৫টি গ্রন্থের কথা জানা গেলেও সংরক্ষণের অভাবে অনেকগুলোরই খোঁজ মেলে না। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য যাকে ১৯১৬ সালে সাহিত্যবিশারদ উপাধি দেয় নদীয়া সাহিত্য সভা। পথ ও পাথেয় গ্রন্থের জন্য তিনি রৌপ্যপদক লাভ করেন। কবি শেখ ফজলল করিম জীবদ্দশায় পেয়েছিলেন কাব্য ভূষণ, সাহিত্যরণ, বিদ্যাবিনোদ, কাব্যরত্নাকরসহ অসংখ্য উপাধিত ও সম্মান।

১৯৩৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চিরনিদ্রায় শায়িত হন কবি শেখ ফজলল করিম। আর এই অমর কবির কারুকার্যময় নকশায় তৈরি ঘরের সামনেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like