Home বিশ্ব মহাকাশের মহাবিস্ময় কৃষ্ণগহ্বর

মহাকাশের মহাবিস্ময় কৃষ্ণগহ্বর

by Shohag Ferdaus

কিছু সত্য কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত। আর এই কথাটি ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রেই মানানসই। ব্লাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের মহাবিস্ময়। কৃষ্ণ বিবর নামেও পরিচিত এই বস্তুটির নাম আসলেই সর্বপ্রথম মনে আসে এটি সবকিছু গ্রাস করে নেয়। অর্থাৎ এটি সর্বগ্রাসী। এমনকি সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন ইন্টিটি আলো পর্যন্ত এর ভেতর থেকে বের হতে পারে না। এর মধ্যে যা কিছু প্রবেশ করে তা আর কখনো ফিরে আসে না। এগুলোই প্রচলিত ধারণা। আসলেই কী তাই।

কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ধারণা দেন ব্রিটিশ ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল। ১৭৯৬ সালে তিনি প্রথম ব্লাক হোলের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার পর থেকে এ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। গণিতবিদ পিয়েরে সিমন, স্যার আইনস্টাইন, মার্কিন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী জন আর্চিবল্ড হুইলারসহ অনেকে ব্লাক হোলের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেছেন। সবশেষ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ব্লাক হোল নিয়ে বিশেষ তথ্য দিয়েছেন। যা ‘হকিং বিকিরণ’ তত্ত্ব নামে পরিচিত।

জন মিচেল ১৭৯৬ সালে ব্লাক হোলের ধারণা দেয়ার পর থেকে বস্তুটির কাল্পনিক বিভিন্ন ছবি বিজ্ঞানীরা এঁকেছেন। তবে ২০১৯ সালের এপ্রিলে সত্যিই ব্লাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব হয়। বাস্তবে ক্যামেরার লেন্সে ধরা দেয়া ব্লাক হোল পূর্ববর্তী বিজ্ঞানীদের কল্পনার সঙ্গে অনেকাংশেই মিলে যায়।

ব্লাক হোল কী?

কৃষ্ণগহ্বর হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে কোনো কিছু প্রবেশ করলে আর ফিরে আসে না। এমনকি আলোও এই গহ্বরকে অতিক্রম করতে পারে না। নাম গহ্বর হলেও ব্ল্যাক হোলের মধ্যে কিন্তু পুরোটা ফাঁকা জায়গা নয়। বরং এর মধ্যে খুব অল্প জায়গায় এত ভারী সব বস্তু আছে যে এসবের কারণে তীব্র মহাকর্ষীয় শক্তি উৎপন্ন হয়। ব্ল্যাক হোলের পেছনে ‘ইভেন্ট হরাইজন’ নামের একটি স্থান আছে, যাকে বলা হয় ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’। এই জায়গায় মহাকর্ষীয় শক্তি এতটাই তীব্র যে এখান থেকে কোনো কিছুই আর ফেরত আসতে পারে না।

কৃষ্ণগহ্বর ছোট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্ষুদ্রতম ব্ল্যাক হোল একটি পরমাণুর সমান হতে পারে। এই জাতীয় ব্ল্যাক হোলগুলো অনেক ক্ষুদ্র কিন্তু তাদের এক একটার ভর হতে পারে বিশাল কোনো পর্বতের সমান।

আর সবচেয়ে বড় ব্লাক হোলটি পৃথিবী থেকে ৫০ কোটি ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর এটার ভর (এর মধ্যাকার পদার্থের পরিমাণ) সূর্যের চাইতে ৬৫০ কোটি গুণ বেশি।

এই ব্ল্যাক হোলটি এতই বড় যে এটাকে একটা ‘দানব’ বলে বর্ণনা করছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, দানবাকৃতির এই ব্ল্যাক হোল পৃথিবী যে সৌরজগতের অংশ- তার চাইতেও বড়। এ মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত এর আয়তন ৪ হাজার কোটি কিলোমিটার – যা পৃথিবীর চাইতে ৩০ লক্ষ গুণ বড়।

ব্ল্যাক হোল নিয়ে হকিংয়ের তত্ত্ব

ইংরেজ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং যুগের আগ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, কোনো কিছুর পক্ষেই ব্ল্যাক হোলের তীব্র মহাকর্ষ শক্তি এড়ানো সম্ভব নয়। এমনকি, ব্ল্যাক হোল থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে ব্ল্যাক হোল থাকলেও তা দেখতে, জানতে পারা সম্ভব নয়। কিন্তু কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্ব কাজে লাগিয়ে অঙ্ক কষে হকিং দেখিয়েছিলেন, ব্ল্যাক হোল থেকে বিকিরণ বেরিয়ে আসে। ব্ল্যাক হোল যত ছোট হতে থাকে, তত তার বিকিরণের তাপমাত্রা শক্তিশালী হয়। এই বিকিরণের সূত্রেই ব্ল্যাক হোল তার ভর হারায় এবং ক্রমশ ভর কমতে কমতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে ব্ল্যাক হোল মহাশূন্যে মিলিয়ে যায়। এই তত্ত্বকেই বলা হয় হকিং বিকিরণ।

বিজ্ঞানের এই জটিল তত্ত্বগুলোই ১৯৮৮ সালে ‘অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ নামের বইয়ে প্রকাশ করেন হকিং। পৃথিবীর অন্যতম বেস্ট সেলার বই হয়ে ওঠে এটি। কিন্তু হকিংয়ের রসবোধ এতটাই প্রখর ছিল যে মজা করে তিনি বলেছিলেন, ‘এটি সব থেকে কম পড়া কিন্তু বেশি বিক্রি হওয়া বই।’ পরবর্তীকালে এই বইটিই আরও সহজ ভাষায় ‘অ্য ব্রিফার হিস্ট্রি অফ টাইম’ নামে প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের হাট

ভয়েস টিভি/এসএফ/এএস

You may also like