Home খেলার খবর ক্রিকেট বলের ভেতর-বাহির

ক্রিকেট বলের ভেতর-বাহির

by Amir Shohel

বলা হয়ে থাকে অন্যান্য খেলার তুলনায় ক্রিকেট খেলার হিসাব-নিকাশটা বেশ জটিল। ক্রিকেট বলও তেমনি। একে তো ব্যয়বহুল, তার উপর সেটা দিয়ে খেলার নিয়ম-কানুনও অনেক।

ক্রিকেট বলটি হয় খুব শক্ত। কিন্তু বানানো হয় নরম সব জিনিস দিয়ে। একেবারে ভেতরে থাকে একটা কর্কের টুকরা। দেখতে ছোট টেনিস বলের মতো। সেটা সুতা দিয়ে খুব করে প্যাঁচানো হয়। ওপরে থাকে চামড়া বা লেদারের আবরণ। সে জন্য চার টুকরা চামড়া ব্যবহার করা হয়।

প্রথমে দুটি করে সেলাই করা হয়। তারপর সেগুলো ছাঁচে ফেলে দুটি অর্ধ গোলাকৃতির টুকরা বানানো হয়। সে দুটির মাঝে ভরা হয় সুতা দিয়ে প্যাঁচানো কর্কের গোলকটা। তারপর করা হয় আসল সেলাই। মোট ছয়টি সেলাই করা হয়। এরপর সেগুলো ছাঁচে বসিয়ে চেপে সমান করা হয়। এই সেলাইয়ের অংশটিকে বলা হয় ‘সিম’।

ক্রিকেট বলের ওজনেরও হয় রকমফের। ছেলেদের ক্রিকেট বলের ওজন হয় ১৫৫ গ্রাম থেকে ১৬৩ গ্রাম। অপরদিকে, মেয়েদের ক্রিকেটে ১৪০ থেকে ১৫১ গ্রাম। ১৩ বছরের কম বয়সীদের ক্রিকেট বলের ওজন হয় ১৩৩ থেকে ১৪৪ গ্রাম।

ছেলেদের ক্রিকেটে বলের পরিধি হয় ২২.৪ থেকে ২২.৯ সেন্টিমিটার। অন্যদিকে, মেয়েদের ক্রিকেটে বলের পরিধি হয় ২১ থেকে ২২.৫ সেন্টিমিটার। ১৩ বছরের কম বয়সীদের ক্রিকেটে ২০.৫ থেকে ২২ সেন্টিমিটার।

খেলা শুরুর আগেই ম্যাচে ব্যবহারের বল আম্পায়ারের কাছে দেয়া হয়। কেউ আউট হলে, ওভার শেষে বা বিরতির সময়ও বল জমা দিতে হয় আম্পায়ারের কাছে।

নতুন বল শুধু খেলার শুরুতেই দেয়া হয়। তবে টেস্ট ম্যাচে ইনিংসের মাঝেও নতুন বল পাওয়া যায়। সে জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৮০ ওভার পর্যন্ত। এরপর ফিল্ডিং অধিনায়ক চাইলেই শুধুমাত্র নতুন বল দেওয়া হয় ।

খেলার মধ্যে বল হারিয়ে গেলে বা ব্যাটাররা পিটিয়ে বল ছাতু বানিয়ে ফেললে বল পরিবর্তন করা যায়। যদি আম্পায়ারের মনে হয় বল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে জন্য অবশ্য নতুন বল নয়, কাছাকাছি মানের পুরনো আরেকটি বল দেওয়া হয়।

নতুন বল দিয়ে ভালো সুইং করানো যায় বলে পেইসারদের জন্য এটি বেশি কার্যকর হয়ে থাকে। আর পুরনো বলে সুবিধা পায় স্পিনাররা। বলে গতি থাকলে আর ঠিকমতো পুরনো করতে পারলে পেইসাররা নিতে পারেন রিভার্স সুইং এর সুবিধা।

আগে ক্রিকেট মানেই ছিল সাদা জার্সি আর লাল বল। এখন সেসব কেবল টেস্ট ম্যাচেই ব্যবহৃত হয়। সীমিত ওভার, অর্থাৎ ওডিআই এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয় সাদা বলে। সম্প্রতি শুরু হয়েছে দিবারাত্রির টেস্ট। তাতে ব্যবহার করা হয় গোলাপি বল।

বর্তমানে কুকাবুরা, ডিউকস এবং এসজি এই তিনটি কোম্পানি আন্তর্জাতিক খেলাগুলোর জন্য ক্রিকেট বল বানায়। অল্প কিছু দেশ ডিউকস এবং এসজি কোম্পানির বল ব্যবহার করে। সেটাও কেবল টেস্ট ক্রিকেটে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড আর আয়ারল্যান্ড ব্যবহার করে ডিউকস বল। এসজি বল ব্যবহার করে কেবল ভারত। বাকি সব খেলা হয় কুকাবুরা বল দিয়ে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও তাই।

রিভার্স সুইং করার জন্য বলের এক পাশ মসৃণ আর অন্য পাশ খসখসে রাখতে হয়। তবে সেটা করতে হবে বৈধভাবে। বল মাঠে বা অন্য কিছুতে ঘষা, নখ দিয়ে খোঁটানো, সিমের সেলাই খুলে ফেলা—এগুলো একেবারেই নিষিদ্ধ।

রিভার্স সুইং করার জন্য ফিল্ডিং দলের সবাই সুযোগ পেলেই বলের একই পাশ বারবার করে ঘষতে থাকে। আর অন্য পাশ মসৃণ রাখতে লালা মাখানো হতো। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে লালা ব্যবহারেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।

এমনিতেই ক্রিকেট বল খানিকটা ব্যয়বহুল, তার ওপর একটা দিয়ে বেশি খেলাও যায় না। তাই পাড়ার ক্রিকেটে সাধারণত ব্যবহার করা হয় টেনিস বল। তার ওপর আঠালো টেপ পেঁচিয়ে করা হয় শক্ত। এর জনপ্রিয় নাম “টেপ টেনিস বল”।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like