Home জাতীয় ভ্যাকসিন পেতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে চিঠিপত্র আদানপ্রদান চলছে

ভ্যাকসিন পেতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে চিঠিপত্র আদানপ্রদান চলছে

by Shohag Ferdaus
নির্ধারিত

দেশের সবার জন্য করোনা ভ্যাকসিন নিশ্চিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আনতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চলছে। দেশে এখনও কিছু ভ্যাকসিন মজুত আছে। ভারত থেকে তিন কোটি ভ্যাকসিন আনতে চাহিদাপত্র (অর্ডার) দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু ভারত আমাদের ৭০ লাখ ভ্যাকসিন দিয়েছে। আর ৩০ লাখ ভ্যাকসিন তারা আমাদের উপহার দিয়েছিল। তারপর আর ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি। এর ফলে প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ করা রয়েছে। ভ্যাকসিন পেতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে চিঠিপত্র আদানপ্রদান চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সরকার লকডাউন দিয়েছে। করোনার এই মহামারি সারা পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের কারণে অনেকে কষ্টে আছে, অনেকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো সবারই দায়িত্ব। সরকার অসহায় মানুষের সহায়তায় হাজার হাজার কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। সারাদেশে করোনা মোকাবিলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। অন্যান্য মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়কে সহযোগিতা করছে।

৭ মে শুক্রবার বিকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকায় শুভ্র সেন্টার আয়োজিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঈদুল ফিতর এবং করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার দুস্থ পরিবারের মধ্যে এসব খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ‘আমরা গত এক বছর ধরে করোনা মোকাবিলায় কাজ করছি। করোনা এমন একটি ভাইরাস, যা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা আমাদের জানা ছিল না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিভাবে চিকিৎসা দিতে হবে তা জানা ছিল না। আমরা ধীরে ধীরে তা বুঝতে পেরেছি। চিকিৎসক ও নার্সরা প্রশিক্ষিত হয়েছেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের অবস্থা দেখলে গা শিউরে ওঠে। লাশের পাশে আরেক লাশ সৎকার করা হচ্ছে। একটু অক্সিজেন পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছে। কিন্তু অক্সিজেন পাচ্ছে না, করোনায় আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। এই করোনায় ভারতে প্রতিদিন চার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এই অবস্থা যেন আমাদের দেশে না হয়। তা হলে আমাদের দেশের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। মানুষের জীবনের ক্ষতি অর্থাৎ মৃত্যু হবে। আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ হয়েছিল। তবে আবার করোনা বেড়ে গেছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দেশে মাত্র দুই হাজার শয্যা ছিল। এখন শুধু ঢাকা শহরেই আছে আট হাজার শয্যা। সারাদেশে এখন ১২ থেকে ১৩ হাজার শয্যা আছে। গত এক বছরে ১৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেনের আওতায় এখন ১৬ হাজার শয্যা আছে। এসব শয্যায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়ার পরে হাইফো নেজেল ক্যানোলার মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরুতে একটি ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করা হয়েছি। এখন প্রায় ৪০০ ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কখনও ওষুধের অভাব হয়নি। অক্সিজেনেরও অভাব এখন দেখা যায়নি। যখন দ্বিতীয় ঢেউ আসলো তখন ভারত থেকে অক্সিজেন আনা হয়। এখন দেশে প্রতিদিন ৭০-৮০ টন অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ৬০ টন অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। দেশে প্রতিদিন ২০০ টন অক্সিজেন উৎপাদন হয়। বর্তমানে ৯০০ টন অক্সিজেন মজুত রয়েছে। আগামী এক মাসে আরও ৪০ টন অক্সিজেন যুক্ত হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে আগামীতে দেশে অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না।

জাহিদ মালেক বলেন, লকডাউন দেওয়ায় করোনায় আক্রান্তের হার ২৩ থেকে ৮-এ নেমে এসেছে। মৃত্যু হার ১১২ ছিল, সেখানে তা ৫০-এ নেমে এসেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বাড়তে সময় লাগবে না। ঈদে আমরা সন্তানদের আনন্দের জন্য জামাকাপড় কিনতে বিপণিবিতানে যাই। কিন্তু তা যদি পরিবারের জন্য দুর্যোগ বয়ে আনে, তাহলে সেই আনন্দ থাকবে না, পুরো পরিবার শোক বয়ে বেড়াবে। অনেকে শিশুদের নিয়ে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন এটা ঠিক নয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাকাটা করতে হবে। ফেরিতে যেখানে ১০০ মানুষ ওঠার কথা, তবে সেখানে দুই হাজার মানুষ ওঠছেন। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে করোনা বাড়তে সময় লাগবে না। ঈদ আনন্দের বদলে দুঃখ বয়ে আনুক এটা কারো কাম্য নয়।

ভ্যাকসিন নিলে করোনায় আক্রান্ত হবে না, এটা ভুল ধারণা বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিলেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এমন অনেকে আছেন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ভ্যাকসিন নিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, মৃত্যুর ঝুঁকি কমে।

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার রিফাত রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল মজিদ, মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র রমজান আলী এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার প্রমুখ।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like