Home বিশ্ব চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন ভারতের

চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন ভারতের

by Newsroom
চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের

এবার চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হচ্ছে ভারত। এরইমধ্যে সেনা কমান্ডারদের যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। কারণ সামরিক ও কূটনৈতিকস্তরে দফায়-দফায় বৈঠকেও গলেনি বরফ। এখনো ভারতীয় ভূখণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে চীনা সেনারা। তারা প্যাংগং লেকের ফিঙ্গার পয়েন্ট এবং দেপসাং উপত্যকা থেকে সেনা সরাতে মোটেও রাজি নয়। চীনা পিপলস লিবারেশন আর্মির এই আচরণে চরম ক্ষুব্ধ ভারত।

১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপতক্যায় চীনা সেনাদের হামলায় ভারতের ২৩ সেনা নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা দিনদিন বাড়ছেই। এখনো প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে ভারতীয় ভূখণ্ড দখলে রেখেছে চীনা সেনারা। এরপর থেকে চীনের সাথে দফায়-দফায় সামরিক ও কূটনৈতিকস্তরে আলোচনা চালাচ্ছে ভারত। কিন্তু কোনো সুরাহাই হচ্ছে না। বারবার সীমান্তে শান্তি ফেরাতে নিঃশর্তে চীনকে সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে ভারত। তবে সেকথায় কানই দিচ্ছে না চীন।

তবে কয়েক দফা বৈঠকের পর চীন গালওয়ান, হটস্প্রিং, ফিঙ্গার পয়েন্ট ফোর থেকে সেনা সরালেও ভারতীয় ভূখণ্ডের প্যাংগং, দেপসাংয়ে এখনো আগের অবস্থানে আছে। রোববার পঞ্চম দফা সামরিক বৈঠকেও চীন এসব এলাকা থেকে সৈন্য সরাতে রাজি হয়নি। চীনাদের এই মনোভাবে ভারতীয় সেনাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে রাখার নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে।

এরআগে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে কয়েকদিন ধরেই ভারতের সেনাপ্রধান লাদাখ থেকে আসম পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় পরিদর্শন করেন। আর ইস্টার্ন কমান্ড সফরের সময় সেনাপ্রধানকে সিকিম, অরুণাচলের সঙ্গে চীনের সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সেনা কমান্ডাররা।

সেনা কর্মকর্তাদের রিপোর্টে আর উপগ্রহ চিত্রের ছবিতে দেখা যায়, , উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, সিকিম, অরুণাচল সীমান্তে যুদ্ধাস্ত্রসহ বিপুল সেনা মোতায়েন করেছে চীন। ধারণা করা হচ্ছে, সম্ভাব্য যুদ্ধের কথা মাথায় রেখেই লাদাখ সীমান্তে কম্বাইন্ড আর্মি ব্রিগেড নিয়ে ইন্টিগ্রেডেড ব্যাটল গ্রুপও তৈরি করেছে চীন। দেশটির এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পিছিয়ে নেই ভারতও। তারাও সীমান্তে ঘাতক প্ল্যাটুন-সহ ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। শক্তি বাড়াতে আরো ৩৫ হাজার সেনা পাঠানোও প্রস্তুতি নিয়েছে।

শুধু সেনাবাহিনী নয়, বিভিন্ন বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন করা হয়েছে যুদ্ধবিমানও। তাদেরও যেকোন রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারত-চীন সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর  আকাশে উড়ছে সামরিক হেলিকপ্টার। চিনুক কার্গো হেলিকপ্টার, অ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার, পি-৮ সার্ভেইলেন্স এয়ারক্র্যাফ্ট আইএল-৭৬ স্ট্র্যাটেজিক এয়ার লিফ্টার। আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে ভারত-চীন সৈন্যদের  সংঘর্ষ স্থলের আশপাশের গ্রামগুলোর।

চীন- ভারতের মধ্যে সবশেষ সংঘাত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। সেবারই সীমান্তে শেষবার কোনও সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে ওয়েস্টার্ন সেক্টরে লাদাখে বা ইস্টার্ন সেক্টরে অরুণাচলে দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতাহাতি ও মারামারি কম হয়নি। কিন্তু ১৫ জুন লাদাখের মতো প্রাণঘাতী মারামারি কখনও হয়নি। এই মারামারিতে দু’পক্ষই লোহার রড, লাঠি, পাথর নিয়ে হামলা চালায়।

এদিকে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন-ভারতের এই উত্তেজনা কমাতে দু’দেশের শীর্ষ নেতাদের নমনীয় মনোভাব নিয়ে এক টেবিলে বসতে হবে। তা না হলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আর এই বির্পযয়ের ফলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে চীন-ভারতসহ আশপাশের দেশগুলোও।

লেখক: ফেরদৌস মামুন, সাংবাদিক

You may also like