কালের বিবর্তনে জমিদারি প্রথা হারিয়ে গেলেও উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়ে গেছে জমিদারদের নিদর্শন। রক্ষণাবেক্ষণ আর উদ্যোগের অভাবে জমিদারের রেখে যাওয়া ঘরবাড়িসহ শত শত বিঘা জমি চলে গেছে অবৈধ দখলে।
সাতক্ষীরা তালা উপজেলার গোপালপুর এলাকার জমিদার অবলা কান্ত ঘোষ। বাবা সুরেন ঘোষ ছিলেন তৎকালীন সময়ে খুলনা জেলার চেয়ারম্যান। তার ৪ সন্তান অবলা কান্ত ঘোষ, বলয় ঘোষ, রবি ঘোষ ও উৎপল ঘোষ। প্রভাবশালী এ পরিবারটি দেড়শ বছর আগে গোপালপুর এলাকায় এসে গড়ে তোলেন জমিদারি। সব মিলিয়ে এলাকায় ছিল তাদের ৭শ বিঘা জমি। একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা সুরেন ঘোষ প্রায় ৯০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেন বসত ভিটা। চারপাশে করেন আমবাগান। তার মৃত্যুর পর বড় ছেলে অবলা ঘোষ জমিদার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা এখনো শোনা যায় এলাকার বৃদ্ধদের মুখে।
জমিদার অবলা কান্ত ঘোষ বসতভিটার পাশে তালা-পাটকেলঘাটা সড়কের রাস্তার পাশে গড়ে তোলেন সুবিশাল একটি আম বাগান। যা বাবুর আম বাগান নামেই খ্যাতি লাভ করে। ২০১১ সালের ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে মারা যায় শতাধিক গাছ। বর্তমানে জমিদারের বাড়িসহ বাড়ির পার্শ্ববর্তী সব এলাকা চলে গেছে বিভিন্ন মানুষের অবৈধ দখলে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় হঠাৎ রাতের আধারে পরিবার পরিজন নিয়ে জমিদার অবলা কান্ত দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তারপর থেকে কেউ আর এখানে ফিরে আসেননি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সব দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন মানুষ।
২০১৭ সালে এই জমিদারদের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের পর তৎকালীন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিউদ্দীন জমিদারের ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ নেয়। ৭শ বিঘা জমির মধ্যে মাত্র ২৮ বিঘা জমি উদ্ধার করেন। আম বাগানটিকে ঘিরে গড়ে তোলা হয় ইকোপার্ক। যার নাম খোলা জানালা। এটি এখন তালা উপজেলার এক মাত্র বিনোদন পার্ক ও দর্শনীয় স্থান।
নিরিবিল সময় পার করার জন্য এখানে তৈরি করা হয়েছে বসার স্থান। অবসর সময়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এখানে আসেন। জানতে পারেন জমিদারদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে। কপোতাক্ষ সংযোগ খালের তীরে বসে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন বিনোদন প্রেমীরা।
ভয়েসটিভি/এএস