Home বিনোদন জাম্বু- বাংলা সিনেমার এক্স-ফ্যাক্টর

জাম্বু- বাংলা সিনেমার এক্স-ফ্যাক্টর

by Amir Shohel

সুখলাল বাবু- এফডিসিতে অভিনয়ের আগে নিজের নাম নিবন্ধন করেন বাবুল গোমেজ নামে। ‘সুখলাল বাবু’ কিংবা ‘বাবুল গোমেজ’ বাস্তবে থাকা এই দুটি নাম কাছের কিংবা দুরের প্রায় সকলে এক প্রকার ভুলেই গিয়েছিলেন। দেশ-বিদেশে তার পরিচিতি হয়েছিল এর বাইরেও নতুন আরেক নামে। যে নামটি তাকে দিয়েছিল চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। তিনি আর কেউ নন তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় ও সুপরিচিত খল অভিনেতা ‘জাম্বু’। দেখতে গোলগাল ও স্থূলকায় হওয়ায় নির্মাতা তাকে এ নামটি দেন।

পুরান ঢাকার হাজারিবাগের গণকটুলি সিটি কলোনি, জায়গাটাকে মেথরপট্টি নামেই চেনেন সবাই। আজিমপুরের ভাটা মসজিদের পাশেই একটি বাড়িতে মোটাসোটা এক ছেলে থাকতো। শারীরিক গড়নের কারণে সবাই নানাভাবে ক্ষ্যাপাতো তাকে, ডাকা হত নানা রকমের নামে। সেই ছেলেটিই এক সময় অভিনয়ে নাম লিখিয়ে দাপিয়ে বেড়ান ঢাকাই চলচ্চিত্র- পরের দুই দশক জাম্বু নাম গায়ে জড়িয়ে ভিলেন হয়ে তিনি রাজত্ব করেন ঢাকাই সিনেমায়।

জাম্বুর চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শুরু হয় সাদাকালো যুগ থেকে। এরপর রঙিন যুগ পর্যন্ত তিনি কাজ করে গেছেন। পরিচিত মুখ হলেও খুব বড় মাপের চরিত্র খুব কমই পেতেন, মূল খল-নায়কের ‘ডান হাত’ বা সহকারী হিসেবে কাজ করতেন জাম্বু। বড় কোনো চরিত্র না করলেও তিনি সিনেমাগুলোতে ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হিসেবে থাকতেন। ভিলেনের দলে জাম্বু না থাকলে যেন ভিলেনদের খুব একটা প্রতাপশালী বলে মনেই হত না। ফলে তাকে প্রায় সব সিনেমায় রাখা হত।

নায়িকাকে তুলে আনতে হবে, টাকার বিনিময়ে কাউকে খুন করতে হবে, কারো ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে হবে, বস্তি উচ্ছেদ করতে হবে, পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে- এমন সব কাজের জন্য ডাক পড়তো জাম্বুর! ‘ছেড়ে দে শয়তান, তোর ঘরে কি মা বোন নেই’- নায়িকার মুখ থেকে এই সংলাপটা সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে এই জাম্বুকেই। এমনকি নব্বইয়ের দশকে কোন মোটা মানুষ দেখলেই তাকে ডাকা হত ‘জাম্বু’ নামে। এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন এই ভিলেন।

দেহের বিশাল আকৃতি, টাক মাথা, ভয়ঙ্কর চোখ, ভারি কণ্ঠের জাম্বুর ভয় দেখিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের মায়েরা তাদের সন্তানদের ঘুম পাড়াতেন- এমন গল্পও শুনতে পাওয়া যায়। জাম্বুর মূলত কাজ ছিল দুটি- এক. মূল ভিলেনের নির্দেশ মেনে কোনো একটা কাজ করা। দুই. নায়কের হাতে শুধু মার খাওয়া। বেশির ভাগ সিনেমায় তাকে ছবি শেষের আগে মরতেই হত। ভিলেনের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট পালনে ব্যর্থ হয়ে মৃত্যুর পথ বেছে নেওয়া কিংবা নায়কের সঙ্গে ফাইট করতে গিয়ে মরে যাওয়া।

মেথর পট্টি থেকে উঠে আসা ভিলেন জাম্বুর অধিকাংশ কাজ একই ঘরানার হলেও তিনি ছিলেন দক্ষ একজন অভিনেতা। প্রতিটা কাজেই নিজস্ব একটা সিগনেচার থাকতো। যত অল্প সময়ই স্ক্রিনে থাকতেন, চমকে দিতে জানতেন দর্শককে। হল মাতাতে জাম্বুর কোন বিকল্প ছিল না।

জাম্বু সবচেয়ে বেশি অভিনয় করেছেন নায়ক জসিমের সঙ্গে তাই মারও বেশী খেয়েছেন তার হাতেই। হাতের পাঁচ আঙুল ছড়িয়ে দিয়ে জাম্বুর মুখে এবং টাক মাথায় থাপ্পড় দেয়া ছিল জসিমের সিনেমার জনপ্রিয় দৃশ্য ছিল। জসিমের মার খেয়ে জাম্বু আছড়ে পড়বেন, আর দর্শক শিষ বাজাবে– এটাই ছিল সিনেমায় জাম্বুর আসল কাজ। নেতিবাচক চরিত্র থেকে বের হওয়ার চেষ্টা খুব কমই করেছেন জাম্বু। ইতিবাচক চরিত্রে তার কাজ সর্বসাকুল্যে মাত্র একটি।

দুই পুত্র ও দুই কন্যার জনক জাম্বু ১৯৪৪ সালে দিনাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসা বাবুল গোমেজ জীবনের নানা বাঁকে কতই না কাজ খুঁজেছেন। ঢাকায় এসে বাবুল গোমেজ হয়ে যান জাম্বু। বদলে যায় জীবনের প্রেক্ষাপট। এভাবেই একটা সময় তিনি হয়ে উঠলেন বাংলা সিনেমার অপরিহার্য্য এক ভিলেন। শতাধিক ছবিতে ভয়ঙ্কর রুদ্রমূর্তির খল চরিত্রে অভিনয় করা এই শক্তিমান অভিনেতা ২০০৪ সালের ৩ মে দুনিয়া ছেড়ে চলে যান।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like