Home বিনোদন টানা ২৭ বছর একই হলে চলছে যে সিনেমা

টানা ২৭ বছর একই হলে চলছে যে সিনেমা

by Amir Shohel

‘যা সিমরান, জি লে আপনি জিন্দেগি’ সিমরানকে তার কঠোর বাবা নিজের মতো করে জীবন কাটানোর ছাড়পত্র দেন- অনুমতি পেয়ে প্রেমিক রাজের কাছে ছুটে যান সিমরান। দৌড়ে চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ার চেষ্টা- সিমরানকে ট্রেনে তুলতে প্রেমিক রাজের হাত বাড়ানো। তারপর রাজের সেই বিখ্যাত সংলাপ, ‘বড়ি বড়ি দেশোঁ মে অ্যাসি ছোটি ছোটি বাতেঁ হোতি রেহতি হ্যা’।

দর্শকরা এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কিসের কথা বলা হচ্ছে- হ্যাঁ, বলছিলাম তুমুল জনপ্রিয় দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে বা সংক্ষেপে ডিডিএলজি সিনেমার কথা- বলিউডের ইতিহাসে ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের কালজয়ী এক সিনেমা। সিনেমাটির গান কিংবা সংলাপ প্রতিটি অংশই সিনেপ্রেমিদের মুখস্ত- ইউরোপের মনোরম লোকেশন ও পাঞ্জাবের সর্ষে ক্ষেতের দৃশ্যগুলো আজও দর্শকদের বিমোহিত করে। ইউরোপে শুরু হওয়া নায়ক নায়িকার প্রেমের মিলন ঘটে ভারতে এসে।

বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের সাফল্যের খাতায় অনেক বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে সিনেমাটি। যে সিনেমায় কাজ করে বলিউড বাদশা শাহরুখ খান পেয়েছিলেন ‘কিং অফ রোমান্স’-এর তকমা। অন্যদিকে কাজলও লাইমলাইটে আসেন দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে সিনেমায় সিমরানের চরিত্রে অভিনয় করে।

প্রথমে এই সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি ছিলেন না শাহরুখ খান- তিন সপ্তাহ চেষ্টার পর অনেকটা হাল ছেড়ে দেন নয়া পরিচালক আদিত্য চোপড়া। রাজের ভূমিকায় সাইফ আলী খানসহ অন্যদের নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন পরিচালক। যদিও শাহরুখকেই নেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন নাছোড়বান্দা আদিত্য। সে সময়ে ‘করণ অর্জুন’-এর শুটিং করছিলেন শাহরুখ। তাতে ছিলেন কাজলও। তখনই ডিডিএলজে কাজ করতে রাজি হয়ে যান শাহরুখ- ‘হ্যাঁ’ বলে দেন আদিত্যকে। তারপর বাকিটা তো ইতিহাস। যে সিনেমা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, সেই সিনেমায় শাহরুখকে বলিউডের বাদশা করে তোলে।

ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে শাহরুখ-কাজল অভিনয় করলেও এর অন্যান্য চরিত্রগুলোর কোনটিই একটি অপরটির তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। ‘ডিডিএলজি’তে- রাজ মালহোত্রা চরিত্রে শাহরুখ খান, সিমরান বা সিমি সিং চরিত্রে কাজল, চৌধরী বাল্দেভ সিং চরিত্রে অমরেশ পুরী, লাজওয়ানতি বা লাজো সিং চরিত্রে ফরিদা জালাল, ধারাম্ভির মালহোত্রা চরিত্রে অনুপম খের, কুলজীত সিং চরিত্রে পারমিট শেঠী, অজিত সিং চরিত্রে সতিশ শাহ, কাম্ম কাউর চরিত্রে হিমানী শিবপুরি, রাজেশ্বরী ‘চুটকি’ সিং চরিত্রে পূজা রুপারেল, সিমরানের দাদী চরিত্রে অচলা সচদেব, প্রীতি সিং চরিত্রে মন্দিরা বেদী, রকি চরিত্রে করণ জহর, সীনা চরিত্রে অনিতা শ্রফ আদাজানিয়া এবং রবি চরিত্রে অর্জুন সাবলক অভিনয় করেন।

ছবিটির গানগুলো এত বছর পেরিয়েও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে। মনপ্রীত কাউর ও পামেলা চোপড়া গেয়েছেন ‘ঘর আজা পরদেশী’, লতা মঙ্গেশকর গেয়েছেন ‘মেরে ক্ষাবন ম্যায়’ উদিত নারায়ন গেয়েছেন ‘রুক যা ও দিল দীওয়ানে’ আশা ভোঁসলে ও অভিজিত ভট্টাচার্য, ‘জারা সা ঝুম লু ম্যায়’, লতা মঙ্গেশকর ও উদিত নারায়ন গেয়েছেন ‘হো গায়া হাই তুঝকো’, ‘মেহন্দী লাগা কে রাখনা’, লতা মঙ্গেশকর ও কুমার শানু গেয়েছেন ‘তুঝে দেখা তো হ্যাঁয় জানা সানাম’ শিরোনামের কালজয়ী গানগুলো।

নব্বই দশকের সাড়া জাগানো ডিডিএলজি-তে শাহরুখ-কাজল জুটির অনবদ্য অভিনয় অগণিত দর্শকের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সফল এ ছবির কল্যাণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় শাহরুখ-কাজল জুটি। সিনেমাটি ভারতে ১.০৬ বিলিয়ন এবং বহির্বিশ্বে ১৬০ মিলিয়ন আয় করে সেই বছরে বলিউডের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে। ডিডিএলজি ১৯৯৬ সালের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার এর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীসহ সর্বমোট ১০টি শ্রেণী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেছিল। যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম সফল চলচ্চিত্র।

যশ রাজ ফিল্মসের ব্যানারে আদিত্য চোপড়ার গল্প ও পরিচালনায় সিনেমাটি প্রযোজনা করেন আদিত্যর বাবা যশ চোপড়া। ১৯৯৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সিনেমাটি একনাগাড়ে প্রদর্শিত হতে থাকে মুম্বাইয়ের মারাঠা মন্দির সিনেমা হলে। মাঝে করোনা মহামারীর জন্য এক বছরের বেশি সময় বন্ধ রাখা হলেও ২৭ বছর আগে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি ফের প্রদর্শন শুরু করে প্রেক্ষাগৃহটি। মারাঠা সিনেমা হলে ছবিটি দেখতে দর্শক ও পর্যটকরা মুখিয়ে থাকেন। মুম্বাইয়ের পর্যটনের অংশ এই ছবি। ইতোমধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে হলে চলার বিশ্ব রেকর্ডও তৈরি করেছে ডিডিএলজি। মুক্তির ২৭ বছর পেরুলেও সিনেমাটি এমন কিছু রেকর্ড ধরে রেখেছে যার ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি পরবর্তী সময়ে মুক্তি পাওয়া ব্লকবাস্টার অনেক ছবিও।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like