Home বিশ্ব টুইন টাওয়ার ধ্বংসের যে রহস্য আজও অজানা

টুইন টাওয়ার ধ্বংসের যে রহস্য আজও অজানা

by Amir Shohel

মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলো যেনো রহস্যে ঘেরা গল্প। অনেক বছর পরও এগুলো মানুষের তর্ক-বিতর্কের খোরাক। এমনই আলোচিত ঘটনা নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বা টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা।

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু এ ভবনটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দেড় যুগ পূর্ণ হয়েছে সম্প্রতি। দীর্ঘ সময় পাড়ি দিলেও এ নিয়ে এখনো নানা মত প্রচলিত।

সাদ্দাম হোসেনের কাছে বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এমন অজুহাতে ইরাকে আমেরিকান যুদ্ধের ষড়যন্ত্র হয়েছে এখন তা অনেকটাই স্পষ্ট মুসলিম বিশ্বের কাছে। তবে, আমেরিকানদের আরও কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা রয়েছে যেগুলো এখনো রহস্যে ঘেরা, অস্পষ্ট। যৌক্তিক বিচারে সেসব ঘটনার বিরোধী মতগুলোকেও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।

১৯৪১ সালে জাপানের পার্ল হারবার হামলা, আততায়ীর হাতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির মৃত্যু কিংবা ২০০১ সালে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ৯/১১ হামলা। এই ঘটনাগুলোর প্রত্যেকটি নিয়েই রয়েছে শক্তিশালী ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। অনেকের মতে, এসব ঘটনার পেছনে মার্কিন শাসকরাই জড়িত।

১৯৪১ সালের পার্ল হারবার হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচলিত। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট নাকি ওই হামলা প্রতিহত করতে পারতেন। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের চাবি হিসেবে ওই হামলার ঘটনা নাকি তিনি স্বেচ্ছায় ঘটতে দিয়েছিলেন। এই মতবাদের পক্ষে মার্কিন সমর্থকদের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ।

মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও লেখক পল ক্রেইগ রবার্টস এসব ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসীদের একজন। তিনি সাম্প্রতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিরও একজন সমালোচক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিনি শিক্ষকতা করেছেন।

ফরেন পলিসি জার্নালে প্রকাশিত এক লেখায় পল কেনেডি হত্যাকাণ্ড ও ৯/১১ হামলায় মার্কিন প্রশাসনের জড়িত থাকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনের শাসনসহ গণতন্ত্রের দাবি করলেও, জনগণের চাপে ৯/১১ হামলার প্রথম গ্র্যান্ড জুরি তদন্ত শুরু করতে ১৭ বছর সময় লেগে গেছে।’

এদিকে, কেনেডিকে লি হার্ভে ওসওয়াল্ড হত্যা করেছে তা কোনো বিশেষজ্ঞ কিংবা তথ্যবহুল মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না বলেই পলের বিশ্বাস। এই হত্যাকাণ্ডের সমস্ত প্রমাণ তৎকালীন যৌথবাহিনী প্রধানরা, সিআইএ এবং সিক্রেট সার্ভিসের একটি চক্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের ডানপন্থী নেতারা কেনেডির প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাদের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়ে তখন যা করার প্রয়োজন ছিল প্রেসিডেন্ট কেনেডি তা করেননি, কারণ তিনি অন্যদের থেকে ‘সাম্যবাদের প্রতি নরম’ ছিলেন।

৯/১১ হামলায় নিউ ইয়র্কের তৎকালীন বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ার ভবন ধস নিয়েও রয়েছে অনেক রহস্য। আমেরিকার একদল প্রকৌশলী ও স্থপতি মার্কিন প্রশাসনের প্রতিবেদনের জোরালো বিরোধিতা করেছেন।

বাণিজ্যিক বিমান দিয়ে করা হামলায় সৃষ্ট আগুনে টুইন টাওয়ারে ব্যবহৃত স্টিলের কলাম ধসে যেতে পারে না বলেই দাবি তাদের। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে মাত্র ১৭ মিনিটে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের দুটো ভবনে আঘাত হানে ছোট দুটি বাণিজ্যিক বিমান।

বিবিসি নিউজের মতে, মাত্র ১২ সেকেন্ডেই ভবনটি ধসে যায়। পাশে থাকা ৪৭ তলার আরও একটি স্থাপত্য ‘ভবন-৭’ও ধসে পড়ে। তবে, ঠিক কী কারণে ওই ভবনটি ধসে পড়েছে তা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য এখনো মেলেনি, যা নিয়ে সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, আর দশটি স্বাভাবিক দিনের মতোই নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত একটি দিনের শুরু হয়েছিল। মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, সেদিন সকালে ১৯ জন মিলে জেট ফুয়েল ভর্তি স্থানীয় সেবাদানকারী ৪টি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে।

এই বিমানগুলো নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং পেনসিলভানিয়াতে বিধ্বস্ত হয় এবং ৩টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে। ঘটনার ৩ মাস পর ১৩ ডিসেম্বর মার্কিন প্রশাসন একটি ভিডিও টেপ প্রকাশ করে, যেখানে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

বিমান ছিনতাই থেকেই শুরু করা যাক। ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত মার্কিন জাতীয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমে তখন স্বাভাবিক ব্যস্ত সময় পার করছিলেন অপারেটররা। বিমানে ঠাসা মার্কিন আকাশে বোস্টন থেকে লসএঞ্জেলেসগামী ছোট্ট বাণিজ্যিক বিমান আমেরিকান এয়ারলাইনের ফ্লাইট ১১-এর ককপিট থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পান এটিসির দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা।

বিমানটির সঙ্গে কিছুক্ষণ পরই যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন ওই অপারেটর। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে বিমানটির অবস্থান হারিয়ে যাওয়া এবং একটা সম্ভাব্য বিমান ছিনতাইয়ের তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান তিনি। তারা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখে আপডেট জানানোর নির্দেশ দেন অপারেটরকে। রাজ্যের এটিসিতে যখন ‘ফ্লাইট ১১’-এর তল্লাশি চলছিল, তখনই বোস্টন থেকে লসএঞ্জেলেসগামী আরও একটি বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে এটিসি।

এটিসি কক্ষে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই টেলিভিশনে ভেসে আসে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঘটনা। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে নিউ ইয়র্কের লোয়ার ম্যানহাটনে অবস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ১১০ তলা উচ্চতার টুইন টাওয়ারের নর্থ ভবনে আঘাত হানে কিছু একটা।

পরে জানা যায়, ৫ ছিনতাইকারীসহ ৮১ জনের আমেরিকান এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট ১১’সরাসরি ঢুকে যায় গগনচুম্বী ভবনটিতে। আচমকা এমন হামলায় যখন হতবাক এটিসি, তখনই তারা সরাসরি ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট ১৭৫’-এর হামলার সাক্ষী হন। প্রথমটির ঠিক ১৭ মিনিটের মাথায় ‘ফ্লাইট ১৭৫’আঘাত হানে টুইন টাওয়ারের দক্ষিণ ভবনে। স্তম্ভিত হয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্ব।

ঘোর কাটতে না কাটতেই, এটিসি-তে খবর আসে ভার্জিনিয়া থেকে লসএঞ্জেলেসগামী আমেরিকান এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট ৭৭’নিখোঁজের কথা। ততোক্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দুটো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে দিয়েছে নিখোঁজ বিমানের তল্লাশিতে। যোগাযোগহীন হয়ে পড়ায় বিমানটির অবস্থান জানতে পারছিল না এটিসি কর্তৃপক্ষ। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনে আঘাত হানে ৫ ছিনতাইকারীসহ ৫৮ জনের ‘ফ্লাইট ৭৭’।

এদিকে, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দুটো আমেরিকার ব্যস্ততম আকাশে প্রবেশের কোনো সুযোগই পাচ্ছিলো না। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এটিসির জন্য আরও আতঙ্ক অপেক্ষা করে আছে। ৪ জন মিলে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের আরও একটি বিমান ছিনতাই করেছে। ছিনতাইকারী, পাইলট, ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ও যাত্রী মিলিয়ে ৩৭ জনকে নিয়ে পেনসিলভানিয়ার শাঙ্কসভিলের পাশের একটি মাঠে ১০টা ৩ মিনিটে বিধ্বস্ত হয় ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ওই বিমানটি। যেখান থেকেও কেউ বাঁচতে পারেনি।

পরে ধারণা করা হয়, এই বিমানটিও ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল, তবে বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে সেটা পথিমধ্যেই বিধ্বস্ত হয়।

প্রথম হামলার ঠিক ১০২ মিনিট পর অর্থাৎ ১০টা ২৮ মিনিটে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও দর্শনীয় স্থাপত্যের ১১০ তলার টুইন টাওয়ার ধসে যায়। কিছুক্ষণ পর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ৪৭ তলার আরও এক ‘ভবন ৭’মাটিতে ধসে পড়ে। মাত্র ১০-১২ সেকেন্ডের মধ্যে ধসে যায় টুইন টাওয়ার। মনে হয় যেনো ডিনামাইট বা শক্তিশালী বিস্ফোরক দিয়ে ভবন দুটোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।

এমন ঘটনার প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ করা কঠিন, যেখানে প্রায় ৩ হাজারের মতো মানুষ নিহত এবং প্রায় ৬ হাজার আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ১৩৩ জনকে চিহ্নিত করা যায়নি। অজ্ঞাত পরিচয়ের দেহাবশেষ অবশেষে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সাইটে, নিউ ইয়র্ক সিটির চিফ মেডিকেল এক্সামিনার অফিসের কার্যালয়ের আওতাধীন একটি সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করার ঘোষণা দেয় মার্কিন সরকার।

আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এই হামলার আর্থিক প্রভাব নিরূপণ করাও খুব একটা সহজ কাজ নয়। এই ঘটনার জের ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ঘোষণা করে এবং আফগানিস্তানে অভিযান পরিচালনা করে। যেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আমেরিকা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে।

৯/১১ হামলা পরিচালনায় আল-কায়েদার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ডলার। আর ওই হামলা দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই আমেরিকার অর্থনীতিতে ১২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিসাধন করে। ঘটনার পর কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বিমান যাত্রা হ্রাস পায়, যা বিপুল অর্থের ক্ষতি করেছে বলে জানায় সিএনএন।

আশপাশের কয়েকটি আকাশচুম্বী ভবন, স্থাপত্য ও সাবওয়েসহ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ধসের ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে আনুমানিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। ঘটনার ৩ দিনের মাথায় ২০০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেস একটি জরুরি সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের অনুমোদন দেয়, যেখানে ব্যয় হয় আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এয়ারলাইনগুলোকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য অনুদান অনুমোদন দেয় কংগ্রেস।

এছাড়াও, বীমা দাবিতে ব্যয় হয়েছিলো আরও ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে ২০০২ সালের ৩০ মে ১৮ লাখ টনের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে সক্ষম হয় কর্তৃপক্ষ।

‘১৫ বছর পর : আকাশচুম্বী ভবন ধসে পদার্থবিজ্ঞান’শিরোনামে ২০১৬ সালে ইউরোফিজিক্স নিউজ জার্নালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যেখানে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এমিরেটাস অধ্যাপক এবং কানাডিয়ান সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সহযোগী রবার্ট করোল, ব্রিংহাম ইয়ং ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের প্রাক্তন অধ্যাপক স্টিভেন জোন্স, অ্যারোস্পেস, যোগাযোগ শিল্প এবং টেড ওয়াল্টারের মেকানিক্যাল ডিজাইনের প্রকৌশলী অ্যান্টনি জামবোতি, ওয়াল্টার, ৯/১১ সত্য উন্মোচনে কাজ করা স্থপতি ও ইঞ্জিনিয়ারদের সমন্বয়ে প্রতিবেদনটি লেখা হয়।

সত্য উন্মোচনে কাজ করা দলটি বলছে, ‘৯/১১-এর অফিশিয়াল কাহিনী সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে, তাই এটি নিয়ে পুনরায় তদন্ত শুরু করা উচিত। বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র এবং ভবন-৭ ধসের কারণ হিসেবে বিস্ফোরকের সম্ভাব্য ব্যবহারের প্রকৃত কারণ উদঘাটনে একটি পূর্ণ অনুসন্ধান পরিচালনা করা প্রয়োজন।

দলটি দীর্ঘদিন ধরে এমন সব যুক্তি উপস্থাপন করে যাচ্ছিলো, যা বহু বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। বিতর্ক নিয়ে করোল বলেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ এর ঘটনা ঘটার পর থেকেই এটা আমার মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। ভবনটা কীভাবে ধসে গেল তাই বোঝা যাচ্ছে না। এমন ঘটার কোনো যুক্তিই নেই বলেও মন্তব্য তাদের।’

যদিও দুর্ভাগ্যজনক দিনটির প্রতীকী চিত্রগুলোতে দুটো যাত্রীবাহী বিমানের আঘাতে সৃষ্ট আগুন লেগে মুহূর্তের মধ্যেই ভবন দুটোকে বিধ্বস্ত হতে দেখা যায়, তবে তৃতীয় ভবনটিতে কোনো বিমান আঘাত না হানলেও তা ধসে যায়, যেটা বাকি দুটোর থেকে কিছুটা দূরেই ছিলো।

অধিকাংশ তত্ত্বেই যাকে ‘পরিকল্পিত ধ্বংস’হিসেবে অভিহিত করা হয়। করোল, তার সহকারী লেখক এবং অন্যরা মনে করেন এই ভবনটি সিআইএ এবং সিক্রেট সার্ভিসের অফিস হিসেবে স্থাপিত ছিল, যার ফলে কোনো আঘাত ছাড়াই ভবনটিকে তাসের ঘরের মতো ধসিয়ে দেওয়া হয়।

প্রকৃতপক্ষে, ৯/১১ হামলার আগে বা পরে আগুনের কারণে কখনোই পুরোপুরি স্টিল-ফ্রেমযুক্ত আকাশচুম্বী কোনো ভবনের এমন অবস্থা হয়নি। এমনকি ১৯৮৫ সালের মেক্সিকো সিটির ভূমিকম্পে একটি ২১ তলা ভবনের ধসে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো প্রাকৃতিক ঘটনাতে তেমনটা দেখা যায়নি। এই জাতীয় ভবনগুলোকে পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে একটি নিয়ন্ত্রিত ধ্বংসাত্বক পদ্ধতি পরিচালনা করতে হয়, যেখানে বিস্ফোরক বা অন্য ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কাঠামো ধসিয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়।

বিমানের আঘাতের পর ওপরের তলাগুলোতে আগুন লেগেছিল, অথচ স্টিলের মোটা কলামের ভিত ছিল একদম নিচে। সেখানে এত দ্রুত উত্তাপ পৌঁছে কলামগুলোকে ধ্বংস করতে পারার কথা না। ডেইলি কমার্শিয়াল নিউজকে করোল বলেন, ‘ওপরের তলার আগুনে স্টিলের কলাম বা কানেক্টর কিংবা ফ্লোর বিমকে পর্যাপ্ত দুর্বল করার সুযোগ খুবই কম।

এছাড়াও, এগুলোর সঙ্গে অগ্নিপ্রতিরোধকারী ব্যবস্থা ছিল। শক্তিশালী বিস্ফোরকের আঘাতে কংক্রিটটি উচ্চ গতিতে বিচূর্ণ করা হলেই কেবল কাঠামোটির ধ্বংস সম্ভব। যা প্রায় ৩৭০ মিটার দূরের একটি ধ্বংসাবশেষের মাঠে ছড়িয়ে পড়বে। স্টিলের কলামগুলো গলাতে ৬৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন যা কেবল ভবনের ভিত্তিতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে সম্ভব।

দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানের যুদ্ধের সঙ্গে ৯/১১ বিতর্কও সমান তালে চলমান। মাঠ পর্যায়ের লড়াই প্রায় থেমে গেলেও বিতর্কিত যুদ্ধ থামবে কিনা তা বলা যায় না। ২০০১ থেকেই বিশ্বে আল-কায়েদার উত্থান ঘটতে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকাজুড়ে একের পর এক হামলা চলতে থাকে। আল-কায়েদার আগ্রাসন বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র বহু সংগ্রাম করেছে।

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সৌদি, কুয়েতে খুঁজে খুঁজে লাদেনের সহকর্মীদের হত্যা করেছে। মার্কিন ইন্টেলিজেন্সের দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনের একটি গুপ্তাশ্রয়ের সন্ধান পায়। বারাক ওবামার নির্দেশে দুর্ধর্ষ নেভি সিল টিম সিক্স অপারেশন নেপচুন স্পিয়ারের মাধ্যমে ২০১১ সালের ২ মে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়।

ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার পর আপাতত তৃপ্তির ঢেকুর তুলে মার্কিনীরা। কিন্তু গোটা দুনিয়ায় আজো থামেনি এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা । বিশ্বেজুড়ে কৌতুহলী মানুষের একটুকুও কমেনি এ ঘটনার আসল রহস্য জানার আগ্রহ ।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like