Home জাতীয় বছরের দেড় সহস্রাধিক ধর্ষণের মধ্যে আলোচিত চার

বছরের দেড় সহস্রাধিক ধর্ষণের মধ্যে আলোচিত চার

by Newsroom
দেড় সহস্রাধিক

সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে যেন মানুষের মূল্যবোধও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। মূল্যবোধের কতটা অবক্ষয় হলে স্বামীকে বেঁধে মায়ের বয়সী এক গৃহবধূকে গণধর্ষণের চেষ্টা করা সম্ভব! নৈতিকতার কতটা অবক্ষয় হলে হাসপাতালের মর্গে মৃত নারীদের লাশে যৌন লালসা নিবারণ করা সম্ভব!

এমনই সব বর্বরোচিত দেড় সহস্রাধিক ধর্ষণের সাক্ষী এই্ ২০২০ সাল। এ বছরে শিশু, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ, গৃহবধূসহ কোনো বয়সী নারীই ধর্ষকের লালসা থেকে বাদ পড়েনি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ২০২০ সালের (জানুয়ারি-নভেম্বর) প্রতিবেদন অনুযায়ি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৫৪৬টি, ধর্ষণের পর হত্যা ৫১টি, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা ১৪টি এবং ধর্ষণ চেষ্ট হয়েছে ৩১১টি।

পরিসংখ্যানে আসা বছরের দেড় সহস্রাধিক ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। আবার এমনও অনেক ধর্ষণের ঘটনা আছে যেগুলো লোক-লজ্জার ভয়ে থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দেয়নি ভুক্তভোগী ও তার পরিবার। প্রকাশ্যে আসা ধর্ষণের ঘটনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিল চারটি। সেগুলো হলো-

এমসি কলেজে নববধূ ধর্ষণ
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় মুরারি চাঁদ কলেজে (এমসি) স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক নববধূকে জোরপূর্বক ছাত্রাবাসে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। পরদিন ভুক্তভোগীর স্বামী ছয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় গ্রেফতার আট আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এছাড়া গ্রেফতারদের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে মিল পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গত ৩ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

আসামিরা হলেন, প্রধান আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, রাজন মিয়া, আইনুদ্দিন, মাহফুজুর রহমান ও তারিকুল ইসলাম তারেক। এরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

মর্গে মৃত নারীদের ধর্ষণ
গত ১৯ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গ থেকে মুন্না ভগত (২০) এক ডোম সহকারীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সে প্রায় ৩ বছর ধরে মর্গে আসা মৃত তরুণীদের সঙ্গে যৌন লালসা নিবারণ করতো। বর্বরোচিত এ অপরাধে তাকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বর্তমানে সে কারাগারে আছে।

সিআইডি বলেছে, ওই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে একে একে সাত জন নারীর শরীরে একই ধরনের শুক্রাণুর প্রমাণ পাওয়ায় অনুসন্ধানে নেমে সিআইডি। পরে মুন্না ভগতের এই ভয়ঙ্কর কাহিনী বের হয়ে আসে। মৃত নারীদের মধ্যে যাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে তাদের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ছিল ডোম সে।

জানা গেছে, মৃত নারীদের হাসপাতালের লাশকাটা ঘরে নিয়ে আসার পর নিয়মিত ধর্ষণ করতেন ডোম। ফরেনসিক রিপোর্টে মৃত নারীদের শরীর থেকে ডোমের শুক্রাণুর প্রমাণ মিলেছে।

২০১৫ সালে এক নারীর আত্মহত্যার ঘটনার হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়, অপমৃত্যুর ঘটনায় নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে মৃত্যুর আগে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা। এরপর থেকেই আদালতের নির্দেশ মেনে আসছে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব।

ওই নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানা এলাকায় অপমৃত্যু হওয়া ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী সাত তরুণীর মৃতদেহে শুক্রাণুর উপস্থিতি পায় সিআইডি। ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সাতটি লাশেই একই ব্যক্তির শুক্রাণু। এরপরই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে সিআইডি। ভয়ঙ্কর এক সিরিয়াল কিলারের খোঁজ করতে গিয়ে বের হয়ে আসে জঘন্য রহস্য।

মাদকসেবীর লালসার শিকার ঢাবি ছাত্রী
গত ৫ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তার বান্ধবীর বাসা শেওড়ার উদ্দেশে রওনা হন। সন্ধ্যা ৭টায় শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে না নেমে ভুল করে কুর্মিটোলায় নামেন তিনি। ভুল বুঝতে পেরে তিনি ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে থাকেন।

এরপর মাদকসেবী মজনু পেছন থেকে হঠাৎ তাকে পাশের একটি ঝোপের ভেতরে ফেলে দেন। তখন ওই ছাত্রী চিৎকার করলে মজনু গলা চেপে ধরেন এবং মুখে, বুকে ও পেটে কিল ঘুষি মারেন। এতে ছাত্রীটি জ্ঞান হারালে মজনু তাকে ধর্ষণ করেন।

এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় টোকাই মজনুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় গত ১৯ নভেম্বর আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।

বিবস্ত্র করে গৃহবধূকে নির্যাতন
স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে বাবার বাড়িতে থাকতেন এক নারী। ১০ বছর পর গত ২ সেপ্টেম্বর স্বামী তার কাছে এলে দেলোয়ার বাহিনীর ক্যাডাররা দরজা ভেঙে ওই নারীর ঘরে ঢোকে। এরপর তারা ওই নারীর স্বামীকে পাশের রুমে বেঁধে রেখে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করে।

এরপর থেকে ওই নারী এলাকা ছাড়া হয়ে পালিয়ে থাকলেও তাকে মোবাইলফোনে নানা ধরনের হুমকি ও কু-প্রস্তাব দিতো স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনী। তিনি ফিরে না আসায় গত ৪ অক্টোবর সে ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে এলে পুলিশ ও র‍্যাব তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে।

এ মামলায় এজাহার ভুক্ত আসামি মোট নয়জন। এদের মধ্যে চার জনসহ মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সংশ্লিষ্ট মামলার আসামিরা কারাগারে আছে বলে জানা গেছে।

তবে অনুসন্ধানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন উদঘাটন করতে পারে যে, দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার ওই নারীকে এর আগে নৌকায় এবং বিভিন্ন স্থানে একাধিকার ফুসলিয়ে ধর্ষণ করেছিলো।

আরও পড়ুন : বিবস্ত্র করে নির্যাতনের সময় স্বামীকে বেঁধে রাখা হয়েছিল

ভয়েস টিভি/এমএইচ

You may also like