Home অপরাধ ‘হাফ ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে, ধর্ষণের হুমকি নয়’

‘হাফ ভাড়া নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছে, ধর্ষণের হুমকি নয়’

by Newsroom
ধর্ষণের হুমকি

হাফ ভাড়া দিতে চাওয়ায় রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছিল ঠিকানা পরিবহনের চালক মো. রুবেল ও হেলপার মো. মেহেদী হাসান। র‌্যাব-১০ এর একটি দল ২১ নভেম্বর রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে তাদের আটক করে।

ভুক্তভোগী বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীর দাবি ছিল, ধর্ষণের হুমকি দিয়েছিল চালক-হেলপার। তবে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তা অস্বীকার করে চালক-হেলপার জানিয়েছে, ‘ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়নি, হাফ ভাড়া নিয়ে অশোভন আচরণ ও রাগারাগির ঘটনা ঘটেছে’।

রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ সাবিকুন্নাহার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, পাবলিক বাসে সরাসরি ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লেখেন, গতকাল শনিবার (২০ নভেম্বর) শনির আখড়ায় ওই শিক্ষার্থী ঠিকানা পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। তার কাছে বাস ভাড়া চাওয়া নিয়ে কুরুচিপূর্ণ আচরণ, গালাগাল ও অশোভন আচরণ করা হয়। বাস থেকে নামার সময় তাকে হেনস্তা করা হয়।

অভিযোগের বিষয়টি কলেজে জানাজানি হয়। পরে এর রেশ অন্যান্য কলেজেও ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় আন্দোলনমুখী হয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। রোববার বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার বকশিবাজার এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করে। শিক্ষার্থী হেনস্তায় জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দেন।

মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা হয়। র‌্যাব-১০ এর গোয়েন্দা দল অভিযুক্ত ঠিকানা পরিবহনের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে ছাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচরণ করা ঠিকানা পরিবহনের চালক মো. রুবেল ও হেলপার মো. মেহেদী হাসানকে আটক করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, ভিকটিমের পরিবার ও কলেজ অধ্যক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। চকবাজার থানায় মামলার প্রস্তুতিও চলছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অশোভন আচরণের কারণ সম্পর্কে আটক চালক-হেলপার জানান, ঠিকানা পরিবহনের মালিকের কাছ থেকে দৈনিক তিন হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে বাসটি নেন তারা। তিন হাজারের বেশি টাকা হলে সেটা নিজেদের মধ্যে অর্ধেক হিসেবে ভাগ করে নেন চালক রুবেল ও হেলপার মেহেদী। এজন্য তারা হাফ ভাড়া নিতে চাইতেন না। কলেজ এলাকায় প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়াতেনও। ভাগে দৈনিক দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পেতেই হাফ ভাড়া নিতে চাইতেন না তারা।

এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মঈন বলেন, শনির আখড়া থেকে কলেজ পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীর ভাড়া ২৫ টাকা। সে ১৫ টাকা দিতে চায়। সেখান থেকেই বাকবিতণ্ডার শুরু। হেলপার কোনোভাবেই ১৫ টাকা নিতে রাজি হয়নি। পুরো টাকাই দাবি করে। এ নিয়ে বাসের ভেতরে তর্কাতর্কি-রাগারাগিও হয়। এক পর্যায়ে অশোভন ভাষায় হেলপার গালাগাল করে। কলেজের সামনে নামিয়ে দেওয়ার সময়ও অশোভন আচরণ করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রথমে অর্ধেক ভাড়াকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটে। শিক্ষার্থীর যে ধর্ষণের হুমকির অভিযোগ, তা আটককৃত দুজনই স্বীকার করেননি। তবে তারা নানান ধরনের অশালীন মন্তব্য করেছেন। রাগারাগি হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ র‍্যাবকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানান। তারপর আমরা অভিযান পরিচালনা করি। তদন্তে ওই শিক্ষার্থী বাসে উঠার সময় এবং শনির আখড়া এলাকার সকাল বেলার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ এবং গোয়েন্দা নজরদারির বৃদ্ধির পর ঠিকানা বাসের চালক ও হেলপারকে আটক করি। আর ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হলেও সেটা তদন্ত কর্মকর্তা দেখবেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় মামলা করবেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, আটককৃতরা জানিয়েছেন, তারা দৈনিক তিন হাজার টাকার চুক্তিতে গাড়িটি নিয়েছিলেন মালিকের কাছ থেকে। এই তিন হাজার টাকার বাইরে যে টাকা তারা তুলতে পারে সেটাই তাদের লাভ। ফলে, তাদের টার্গেট থাকত তিন হাজার টাকার বেশি ওঠানোর। এজন্যই তারা ভাড়া আদায়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিতে চাইতেন না।

চালকের লাইসেন্স রয়েছে। তবে বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র বৈধ কি-না তা মামলা হলে খতিয়ে দেখবেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

You may also like