দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের পঙ্খীরাজ, গোবিন্দভোগ, জামাইভোগ, মোগাইবালাম, রূপকথা, রাঁধুনীপাগল কিংবা পাঙ্গাস এমন বিচিত্র নামের অসংখ্য প্রজাতির ধান হারিয়ে গেছে কালের আবর্তে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা টিকে থাকতে পারেনি।
আবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বয়স্ক কৃষকেরা অনেকে শুধু মনেই করতে পারেন লক্ষ্মীজটা, রানী সেলুট, ঝুমুর বালাম কিংবা হিজলদিঘি ও রাজা মোড়ল অথবা এ ধরণের অনেক চমকপ্রদ নামের দেশীয়জাতের ধান ছিলো এ অঞ্চলে, যেগুলো এখন আর নেই।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলছেন যে এ ধরণের অন্তত ১০ হাজার জাতের দেশীয় ধান এখন আর পাওয়া যায় না।
শাহজাহান কবীর বলেন, ‘গত শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রায় ১৮ হাজার জাতের দেশীয় ধানের তথ্য পাওয়া যায়। তবে এখন দেশীয় ধানের ৮,৬০০ জাত আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। এগুলোর অনেকগুলো থেকেই আমরা নিত্য নতুন ভ্যারাইটির উদ্ভাবন করে যাচ্ছি,’
তিনি জানান, এখন বাংলাদেশের পাহাড় থেকে সমতল অঞ্চলে আউশ, আমন ও বোরো ধানের সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজারের বেশি জাতের আবাদ হয়।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটেরই করা ২০১১ সালের এক জরিপ থেকে জানা যায় যে বাংলাদেশে কমবেশি আট হাজার জাতের ধান আছে। তবে এসব ধানের মধ্যে সরাসরি দেশীয় জাতের ধান এখন নেই বললেই চলে।
বেসরকারি সংগঠন উবিনীগ ‘নয়াকৃষি আন্দোলন’ নামে বাংলাদেশে কৃষি-ভিত্তিক একটি কমসূচি চালাচ্ছে দেশীয় জাতের কৃষিপণ্যকে জনপ্রিয় করতে। তাদের মতে, এদেশে এক সময় বিভিন্ন মৌসুমে প্রায় ১৫ হাজার জাতের ধান চাষ হতো।
স্থানীয় জাতের ধানের কিছু নাম সংস্থাটি তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করেছে।
এগুলো হলো রায়েদা, লক্ষ্মীবিলাস, হনুমানজটা, নোনাকুর্চি, পাকড়ী, ঝিংগাশাইল, লালঢেপা, যশোয়া, তিলকাবুর, চিনিসাগর, সোনামুখী, কালোমেখী, সূর্যমুখী, খেজুরঝুপি, কলসকাটি, দুলাভোগ, পোড়াবিন্নি, শিলগুড়ি, কাটারীভোগ, দাদখানি, রাধুঁনীপাগল, মহিষদল, মাটিচাক, বটেশ্বর, ফুলবাদাল, হরিলক্ষ্মী, সরিষাজুরি, মধুশাইল, ফুলমালা, বাঁশফুল, কটকতারা, সরিষাফুলি, বাইলাম, ঘিগজ, রাজাশাইল, মধুমালতী, যাত্রামুকুট, বাবইঝাঁক, জলকুমারী, গান্ধীভোগ, লেবুশাইল, ফুলমুক্তা, বেনামুড়ি, পাটজাগ, কালামানিক, হরিঙ্গাদীঘা প্রভৃতি।
দেশীয় প্রজাতির ধান হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং এ কারণে খাদ্য চাহিদাও বাড়ছে। অন্যদিকে চাষযোগ্য জমির পরিমান আশঙ্কাজনকভাবে কমার কারণে অল্প জমিতে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে।
‘অথচ দেশীয় জাতের ধানের ফলন কম। এ কারণেই আমরা নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছি। আর এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে আবহাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে অল্প সময়ে বেশি ফলন দেয় এমন জাতের’ বলছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: করোনায় আশীর্বাদ আগাম জাতের ধান
ভয়েস টিভি/এসএফ