Home জাতীয় গায়েব হওয়া স্বাস্থ্যের সেই ১৭ নথি ধ্বংস

গায়েব হওয়া স্বাস্থ্যের সেই ১৭ নথি ধ্বংস

by Mesbah Mukul

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ থেকে ‘গায়েব হওয়া’ কেনাকাটা-সংক্রান্ত ১৭টি নথি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নথিগুলো মন্ত্রণালয় থেকে চুরির পরপরই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা।

এদিকে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে, নথি গায়েবের ঘটনায় যে চার কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা ছাড়াও আরও তিন-চারজন নথি ধ্বংসের সাথে জড়িত রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত-সংশ্নিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই শাখার ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর মধ্যে একজন কর্মকর্তা শত শত কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে কাজ করেন। অন্য কর্মকর্তার এ ধরনের কোনো ‘প্রভাব’ নেই। মূলত এ নিয়েই দ্বন্দ্ব।

এর জের ধরে একটি শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গুঞ্জন ছড়ান- স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত কেনাকাটাসহ বিভিন্ন প্রজেক্টের ফাইল অডিট হবে। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মন্ত্রণালয়ে। অডিটে ত্রুটিপূর্ণ নথি কিংবা ফাইল ধরা পড়লে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে- এমন আশঙ্কা সৃষ্টি হয় অন্য শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এরপরই ১৭টি নথিসহ ফাইলটি সরিয়ে ফেলা হয়।

তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, বড় ধরনের দুর্নীতির তথ্য ধামাচাপা দিতে ফাইল গায়েব করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ৮-৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। নথি চুরির ঘটনার মূল হোতা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ক্রয় ও সংগ্রহ-২ শাখার একজন সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর। তিনি ঊর্ধ্বতন কারও নির্দেশে কাজটি করেছেন।

১৭টি নথিসহ ফাইল গায়েব হওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে গত ২৮ অক্টোবর। এরপর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পাশাপাশি ফাইল গায়েবের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। জিডির ঘটনা তদন্তের জন্য দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তদন্তের অংশ হিসেবে ৩১ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের ছয় কর্মচারীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত সংস্থাটি। পরবর্তীতে আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দুই ঠিকাদারকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুই ঠিকাদারকে ওই দিনই ছেড়ে দেওয়া হলেও ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কয়েক দিন রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা। পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

আরও পড়ুন : স্বাস্থ্যের নথি গায়েব, ছয় কর্মী সিআইডি কার্যালয়ে

যে ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তারা হলেন- জোসেফ সরদার, আয়শা সিদ্দিকা, বাদল চন্দ্র গোস্বামী, বারী, মিন্টু মিয়া, ফয়সাল প্রমুখ। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ক্রয় ও সংগ্রহ-২ শাখার সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর আয়েশা সিদ্দিকা ও জোসেফ সরদার, প্রশাসন-২ এর (গ্রহণ ও বিতরণ ইউনিট) অফিস সহায়ক বাদল চন্দ্র গোস্বামী এবং প্রশাসন-৩ শাখার অফিস সহায়ক মিন্টু মিয়াকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জিডির তথ্য অনুযায়ী, গায়েব হওয়া ফাইলগুলো যে কক্ষে রাখা ছিল সেখানে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) শাহাদৎ হোসাইনের তত্ত্বাবধানে ক্রয় ও সংগ্রহ শাখা-২ এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ওই কক্ষে বসেন সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর জোসেফ সরদার এবং আয়েশা সিদ্দিকা। ফাইলগুলো এই দুই কর্মীর কেবিনেটে ছিল। চুরি হওয়া নথির মধ্যে রয়েছে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজসহ আরও কয়েকটি মেডিকেল কলেজের কেনাকাটা-সংক্রান্ত নথি, ইলেকট্রনিক ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ট্ক্রিনিং কর্মসূচি, নিপোর্ট অধিদপ্তরের কেনাকাটা, ট্রেনিং স্কুলের যানবাহন বরাদ্দ ও ক্রয়-সংক্রান্ত নথি।

নথি গায়েবের ঘটনায় অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. শাহ্‌ আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত সপ্তাহে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপরই চার কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব আলী নূর বলেন, সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চার কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। মামলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করাটা প্রাথমিক পদক্ষেপ। ঘটনার আরও গভীরে যেতে হবে। চুরির সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত শুধু কী তারাই দায়ী, নাকি এর বাইরেও ঊর্ধ্বতন মহলের কেউ জড়িত রয়েছে- এই প্রশ্ন থেকেই যাবে যদি পর্যায়ক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না যায়।

তিনি আরও বলেন, ফাইলগুলো উদ্ধার করা জরুরি। যদি ধ্বংস করা হয়ে থাকে এর জবাবদিহি করতে হবে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like