সাদা বালির বিচ, পাহাড়, রাইস ট্যারেস, ভলক্যানো, পুরাতন মন্দির সবমিলে পৃথিবীর বুকে স্বর্গই বলা চলে। বালির মত বহুমুখী পর্যটন কেন্দ্র মনে হয় খুব কমই আছে। ছোট্ট একটি দ্বীপে এতো দর্শনীয় স্থান এ যেন কল্পনাই করা যায় না। একদিকে দক্ষিণ বালিতে রোদের তাপে টিকে থাকা মুশকিল, অন্যদিকে উত্তর বালিতে কনকনে ঠাণ্ডায় সোয়েটার পড়তে হয়। একদিকে সমতল, অন্যদিকে উঁচু নিচু পাহাড়।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। ১৭ হাজার ৪০৫টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া। এই দ্বীপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং সুন্দর দ্বীপ বালি। ইন্দোনেশিয়া মুসলিম দেশ হলেও বালি দ্বীপটি হিন্দু অধ্যুষিত। বালি ও তার আশেপাশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপমালা নুসা পেনিদা, নুসা লেমবনগান ও নুসা সেনিনগান নিয়ে প্রদেশ গঠিত হয়েছে।
খ্রিস্ট-পূর্ব প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জলপথ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে অস্ট্রোনেশিয়ানরা অভিবাসিত হয়ে এখানে বসবাস করছেন। সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত দিক দিয়ে বালীয়বাসী ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার লোকজনের অনেক মিল রয়েছে।
জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বালি’র বেশ সুনাম রয়েছে। প্রাচীন ও আধুনিক নৃত্যকলা, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, চামড়া, ধাতবশিল্প ও সঙ্গীতের ন্যায় উচ্চ পর্যায়ের শিল্পকলা এ শহরে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ইন্দোনেশীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এখানে অনুষ্ঠিত হয়। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে পর্যটন শিল্পের দিকে ঝুঁকে পড়ে এ শহরটি।
কোরাল ট্রায়াঙ্গেলের অংশ হিসেবে এলাকাটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক সামুদ্রিক প্রজাতিতে ভরপুর। কেবলমাত্র এখানেই পাঁচ শতাধিক প্রজাতির প্রাণীদের গড়া প্রবাল প্রাচীর রয়েছে। এ সংখ্যার তুলনান্তে পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চলের চেয়ে সাত গুণ বেশি।
প্রায় ২৮০ প্রজাতির পাখি রয়েছে এখানে। এরমধ্যে বালি ময়না অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বালিতে বেশ কিছু বৃহৎ আকারের প্রাণী ছিল। ১৯৩৭ সালে সর্বশেষ বালিতে বাঘ দেখতে পাওয়া যেতো। ১৯৪০-এর দশক থেকে ১৯৫০-এর দশক পর্যন্ত এখানে বাঘের উপ-প্রজাতির দেখাও মিলতো।
তিন দশক পূর্বে বালীয় অর্থনীতির অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক ছিল। বর্তমানে পর্যটনশিল্প এখানে আয়ের প্রধান উৎস। বালি ইন্দোনেশিয়ার অন্যতম সম্পদশালী অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বালি মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়তই ভিড় জমান ভ্রমণ পিয়াসুরা।
ভয়েসটিভি/একে/এএস