Home ভিডিও সংবাদ পঙ্গপাল এসেছে ভারতে, ঝুঁকিতে বাংলাদেশও

পঙ্গপাল এসেছে ভারতে, ঝুঁকিতে বাংলাদেশও

by Newsroom

ভয়েস রিপোর্ট: ভারতে ঢুকে পড়েছে পঙ্গপালের দল। রাজস্থান থেকে গুজরাট ছেয়ে গেছে পঙ্গপালে। মহারাষ্ট্রেও ঢুকেছে আরেকটি দল। এবার পঙ্গপালের লক্ষ্য দিল্লি। এমনটাই আশংকা বিশেষজ্ঞদের।

ভারতে প্রথম পঙ্গপাল দেখা যায় গেলো এপ্রিলে রাজস্থানের জয়সলমির মরুভূমিতে। কিন্তু সংখ্যায় তারা খুব বেশি না হলেও নষ্ট করে ফেলেছে ৯০ হাজার হেক্টর জমি। মাত্র কয়েক মাসে সেই পঙ্গপালের দল যে ঝাকে ঝাকে পৌছে যাবে  জয়পুরে, তা ভাবতেই পারেনি ভারতীয় প্রশাসন। তবে পঙ্গপালের আক্রমণে যে এ বছর যথেষ্ট ফসল নষ্টের আশঙ্কা আছে, তা আগেই জানিয়েছিলেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, এখনই পঙ্গপাল দমন করতে না পারলে সামনে রয়েছে মারাত্মক বিপদ।

গত সোমবার ভারতের জয়পুরে হামলা চালানোর পরে দ্রুত গুজরাটের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে পঙ্গপালের দল। একটি দল পৌঁছেছে মহারাষ্ট্রেও। মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরপ্রদেশেও তারা ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পঙ্গপাল যে গতিতে এগোচ্ছে,  তাতে কিছু দিনের মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারে রাজধানী দিল্লিতে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশেও পঙ্গপালের হামলার আশংকা রয়েছে।

সাধারণত, জমির ফসল নষ্ট করে এই পঙ্গপাল। শীতটা মরুভূমিতে কাটিয়ে ফসল তোলার সময় তারা চলে আসে লোকালয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর ঘটনাটি ঘটেছে একটু অন্যরকম । প্রতি বছর ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের মরুভূমি থেকে পাকিস্তানের দিকে চলে যায় পঙ্গপাল।  মাঝেমধ্যে রাজস্থান ও গুজরাটের দিকেও রবি ফসল তোলার সময় দেখা যায় তাদের। তবে সেটা সংখ্যায় খুব বেশি নয়। কিন্তু এ বছর ফসল তোলার পর তারা ঝাঁকে ঝাঁকে ঢুকে পড়েছে ভারতের দিকে। শুধু ফসলের জমি নয়, বিশাল ঝাঁকে হামলা চালাচ্ছে শহরাঞ্চলে। ধ্বংস করে দিচ্ছে সবুজ গাছপালাও। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বাতাস অনুকূল থাকলে ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এই পঙ্গপাল শুধু তাই নয়, সাধারণ ফসলি জমির পঙ্গপালের সঙ্গে আকারেও তফাত রয়েছে এই মরু পঙ্গপালের।

যে ভাবে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে এই পঙ্গপালের দল, তাতে কয়েক দিনের মধ্যেই তারা দিল্লি পৌঁছে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা করছেন, কোনো কারণে দিল্লি পৌছে গেলে বিস্তীর্ণ সবুজাঞ্চল নষ্ট করে দিবে পঙ্গপাল। সমস্যা এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ৫০০টা পর্যন্ত ডিম পাড়ে এক একটি স্ত্রী পঙ্গপাল। ফলে শহের দিকে যদি তারা যায়, তাহলে আগামী মৌসুমে কয়েকশ গুণ বেশি পঙ্গপাল ফসলি জমিতে আক্রমণ চালাবে। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে এমন ঘটনা ঘটেছে। গোটা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ধ্বংস করে দিয়েছে। ভারতেও এমন ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।

মরু পতঙ্গদের সাধারণত শুষ্ক অঞ্চলে দেখা যায়৷ আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে এদের বসবাস৷  কিন্তু ভারতে ঢুকে পড়ায় এরইমধ্যে দেশটির কৃষিমন্ত্রী কয়েকদিন আগে একটি বৈঠক করেছেন। সেখানে জানানো হয়, রাজস্থানে ২১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে কীটনাশক ছিটানো শুরু হয়ে গেছে। পঙ্গপাল যাতে বংশ বিস্তার করতে না পারে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশেও একই কাজ করা হবে। পাশাপাশি মহারাষ্ট্রেও নিয়মিত কীটনাশক ছিটানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য যুক্তরাজ্য থেকে ৬০টি বিশেষ ধরনের স্প্রে মেশিন আনা হচ্ছে। বর্তমানে ভারতে এধরণের ৫০টি মেশিন আছে।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই পঙ্গপালের কারণে বিঘ্নিত হতে পারে বিমান এবং রেল চলাচল। এমনিতেই করোনায় ভারতের বিমান এবং রেল চলাচল বিপর্যস্ত। কয়েক দিন হলো তা নতুন করে শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেল লাইন পিছলে দেয় এই ধরনের পঙ্গপাল। অতীতে সে জন্য ট্রেন বন্ধ করে ট্র্যাক পরিষ্কার করার ঘটনাও ঘটেছে। আর বিমানবন্দরে যেহেতু রানওয়ের পাশে অনেকটা সবুজ থাকে, পঙ্গপালরা সেখানেও হানা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের তাণ্ডবে বিমানবন্দরে দুরে দেখতে সমস্যা হতে পারে। ফলে করোনার পরে পঙ্গপালের সঙ্গে নতুন যুদ্ধ শুরু হলো ভারতে।

রাজস্থান, পাঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের কৃষকরা বলছেন, ২৭ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম তারা সবচেয়ে ভয়াবহ পঙ্গপাল আক্রমণ করেছে। এরইমধ্যে দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আশংকা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহের পর বিহার ও ওড়িশার মতো পূর্বদিকের রাজ্যগুলোতেও পৌঁছাতে পারে পঙ্গপালের দল।

বিশেষজ্ঞরা জানান, মরুভূমি পঙ্গপালকেই সবচেয়ে ক্ষতিকর। এরা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং একদিনে ১৫০ কিলোমিটার এলাক পর্যন্ত ঢেকে দিতে পারে। এই পতঙ্গগুলো এক ধরণের ঘাসফড়িং। তবে শরীরের ওজনের চেয়ে বেশি খেতে পারে। প্রায় এক বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৪ হাজার কোটি  পঙ্গপাল একদিনে ৩৫,০০০ মানুষের মতো খাবার খেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মরুভূমি পঙ্গপাল বেড়েছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে, ভারতের পর বাংলাদেশেও পঙ্গপাল হামলা চালাতে পারে, এমন আশংকার কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে সে ঝুঁকি আগামী বছরই বেশি। সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক এজেডএম ছাব্বির ইবনে জাহান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে পঙ্গপালের আক্রমণের সতর্কতা এবং প্রস্তুতি রাখতে।

তিনিও আশংকা করছেন, পাকিস্তান ও ভারতের পর বাংলাদেশেও আসতে পারে পঙ্গপালের দল। তাই পঙ্গপালের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে সরকার, জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা। আর কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাংলাদেশে আক্রমণ হলে শুষ্ক ও খরাপ্রবণ এলাকায় ঝুঁকি থাকবে বেশি।

You may also like