Home জাতীয় বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির কে কোথায়?

বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির কে কোথায়?

by Shohag Ferdaus
পাঁচ খুনির

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ স্বজনদের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের বিচার না করে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয়। খুনিদের বাঁচাতে জারি করা হয় অধ্যাদেশ। পরবর্তীকালেও বিভিন্ন বাধা পেরিয়ে শেষ হয় এ হত্যাকাণ্ডের বিচার। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত সবার শাস্তি এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

২০১০ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ খুনির মধ্যে পাঁচ খুনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তারা হলো- কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), মেজর (অব.) এ কে বজলুল হুদা এবং মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি)। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে এ বছরের ১২ এপ্রিল।

বাকি ছয়জনের মধ্যে আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুয়েতে মৃত্যুবরণ করে। বাকি পাঁচ খুনিকে সরকার এখনও দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরা হলো- রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, শরীফুল হক ডালিম, রিসালদার মোসলেহউদ্দিন আহমেদ এবং খন্দকার আব্দুর রশীদ।

এ পাঁচ খুনির মধ্যে দুজনের অবস্থান সম্পর্কে সরকার নিশ্চিত। তবে খবর নেই বাকি তিনজনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলাতক খুনি নূর চৌধুরী কানাডায় ও রাশেদ চৌধুরী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কোথায় কী অবস্থায় তারা আছেন, সেসব তথ্য সরকারের কাছে থাকলেও তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। খুনি কর্নেল রশিদসহ বাকি তিনজনের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আসছে সরকারের কাছে। তথ্যানুযায়ী খন্দকার আবদুর রশিদ পাকিস্তান কিংবা লিবিয়ায়, শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান ও মোসলেমউদ্দিন জার্মানিতে অবস্থান করছেন।

এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী ১৯৬৯ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে জেদ্দায় কূটনীতিক পদে যোগদান করেন। তিনি নাইরোবি, টোকিও, কুয়ালালামপুর ও ব্রাসিলিয়াতে বাংলাদেশ মিশনে কাজ করেছেন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময়ে তিনি ব্রাসিলিয়ায় কর্মরত ছিলেন। একই বছরের জুলাই মাসে তাকে ঢাকায় ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই সময় ব্রাসিলিয়ায় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করিম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়ে জানান, রাশেদ চৌধুরী সাও পাউলো থেকে সান ফ্রানসিসকো চলে গেছেন। ওই সময় থেকে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

২০১৪ সালে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ তাকে ফেরত চাওয়া হয়। এরপরের বছর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ স্কাডেন আইনি প্রতিষ্ঠানকে তাকে ফেরত আনার জন্য নিয়োগ দেয়। বিখ্যাত আইনজীবী এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভূতপূর্ব লিগ্যাল কাউন্সিলর গ্রেগরি ক্রেইগ তাকে ফেরত আনার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সম্প্রতি জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

এদিকে পাঁচ খুনির মধ্যে নূর চৌধুরী ১৯৭৬ সালে ব্রাসিলিয়ায় বাংলাদেশ মিশনে তার কূটনীতিক জীবন শুরু করেন। তিনি আলজিরিয়া ও হংকংয়ে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তাকে দেশে ফেরত আসার নির্দেশ দেওয়া হলে তিনি কানাডায় পালিয়ে যান।

২০০৪ সালে কানাডার অভিবাসন কোর্ট তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা প্রত্যাখ্যান করেন এবং তখন কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে হস্তান্তর করার সময়ে তাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানায়। ওই সময়ের বাংলাদেশ সরকারের অনাগ্রহের কারণে তাকে ফেরত আনার কাজটি করা সম্ভব হয়নি।

এরপরে ২০০৭ সালে কানাডার সর্বোচ্চ আদালত রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা নাকচ করে দেয়ার পরে নূর চৌধুরী প্রি-রিস্ক রিমুভাল এসেসমেন্ট বিধির আওতায় কানাডার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে আবেদন করেন। ওই আবেদন এখন পর্যন্ত মীমাংসা হয়নি। এ সুযোগ নিয়ে কোনো স্ট্যাটাস ছাড়াই নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন।

২০১৫ সালে এ বিষয়ে তদবির করার জন্য টোরি এলএলবি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ।

পরে দুই দফায় কানাডার প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা শেষে তারা নূর চৌধুরীকে ফেরত দেয়ার বিষয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়।

শরীফুল হক ডালিম প্রথম কূটনীতিক হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৯৭৬ সালে বেইজিংয়ে। ১৯৮২ সালে তাকে হংকংয়ে বদলি করা হয় এবং ১৯৮৮ সালে কেনিয়ায় রাষ্ট্রদূত হিসাবে পদায়ন করা হয়। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকার তাকে ফোর্স রিটায়ারমেন্টে পাঠায়।
ধারণা করা হয় ডালিমের কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে ব্যবসা আছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে গত বছরের শেষ দিকে পাকিস্তান সরকারকে একটি নোট ভারবাল পাঠিয়ে জানতে চায়, ডালিম পাকিস্তানে কোথায় আছেন?

গত মার্চ মাসে তাকে স্পেনে দেখা গেছে বলে খবর পাওয়ার পরে বাংলাদেশ দূতাবাসের থেকে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বাংলাদেশের কাছে এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে চেয়েছে। তবে তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বাংলাদেশের কাছে।

দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পরে সরকার গত বছর জানতে পারে বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি মোসলেহউদ্দিন আহমেদ জার্মানিতে অবস্থান করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বছরের জানুয়ারিতে জার্মান সরকারকে একটি নোট ভারবাল পাঠানো হয়। জার্মান সরকার এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে চেয়েছে এবং জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে।

খন্দকার আব্দুর রশীদকে পাকিস্তানে দেখা গেছে এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পাকিস্তান সরকারকে একটি নোট ভারবাল দেয়া হয় গত ডিসেম্বরে। কিন্তু এ বিষযে এখনও পাকিস্তান সমরকার কোনো উত্তর দেয়ানি।

ভয়েস টিভি/নিজস্ব প্রতিবেদক/এসএফ

You may also like