Home ভিডিও সংবাদ পাবনা জেলার ইতিহাস

পাবনা জেলার ইতিহাস

by Amir Shohel

পাবনা বাংলাদেশের মধ্যভাগের রাজশাহী বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক অঞ্চল। ১১টি থানা ১০টি পৌরসভা ৭৪টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৫৪৯টি গ্রাম নিয়ে পাবনা জেলার আয়তন ২৩৭১.৫০ বর্গ কিলোমিটার। প্রায় ২৩ লাখ মানুষের বসবাস এ জেলায়।

পাবনা জেলার নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানান মত। খুব বেশি তথ্য জানা না গেলেও প্রত্নতাত্ত্বিক কানিংহাম অনুমান করেন যে, প্রাচীন রাজ্য পুন্ড্র বা পুন্ড্রবর্ধনের নাম থেকে পাবনা নামের উদ্ভব হয়েছে। আবার অনেকের মতে ‘পাবন’ বা ‘পাবনা’ নামে একজন দস্যুর আড্ডাস্থল থেকেই একসময় ‘পাবনা’ নামের উদ্ভব হয়। তবে সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।

ভৌগোলিক সীমানা, রাজশাহী বিভাগের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ পাবনা জেলা। এটি ২৩°৪৮′ হতে ২৪°৪৭′ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০২′ থেকে ৮৯°৫০′ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। জেলার চাটমোহর ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত চলনবিল। এর উত্তর দিক ঘিরে আছে সিরাজগঞ্জ জেলা আর দক্ষিণে পদ্মা নদী। এর পূর্ব প্রান্তদিয়ে যমুনা নদী বয়ে গেছে এবং পশ্চিমে নাটোর জেলা।

রাজশাহী জেলার ৫টি থানা ও যশোর জেলার ৩টি থানা নিয়ে সর্ব প্রথম পাবনা জেলা গঠিত হয়। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১ নভেম্বর যশোরের খোকসা থানা পাবনা ভুক্ত করা হয়। অন্যান্য থানা গুলোর মধ্যে ছিল রাজশাহীর খেতুপাড়া, মথুরা, শাহজাদপুর, রায়গঞ্জ ও পাবনা। ‘যশোরের চারটি থানা ধরমপুর, মধুপুর, কুষ্টিয়া ও পাংশা’।

১৮৩৭ খ্রিষ্টাব্দে সেশন জজের পদ সৃষ্টি হলে এ জেলা রাজশাহীর দায়রা জজের অধীনে যায়। তখন পশ্চিম বাংলার মালদহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ ডব্লিউ মিলস জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত হন পাবনায়। ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর জেলার পূর্ব সীমা নির্দিষ্ট করা হয় যমুনা নদী। ১২ জানুয়ারি ১৮৫৫ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজগঞ্জ থানাকে মোমেনশাহী জেলা থেকে কেটে নিয়ে ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মহকুমায় উন্নীত করে পাবনা ভুক্ত করা হয়। নিযুক্ত করা হয় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। এর ২০ বছর পর রায়গঞ্জ থানা এ জেলায় সামিল হয়।

সড়ক পথের পাশাপাশি এ জেলায় রয়েছে জল ও বিমানপথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা। পাবনার বাসগুলো দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রুটেই চলাচল করে। পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছাকাছি পাবনা রেলওয়ে স্টেশন অবস্থিত। ঈশ্বরদী বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলওয়ে স্টেশন। এই জেলায় দশটি রেলওয়ে স্টেশন আছে। এবং ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নতুন রেলপথ ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধন করেন। এ ছাড়াও ঈশ্বরদী উপজেলায় রয়েছে একটি বিমানবন্দর ।

ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাচীন জনপদ পাবনা। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ অক্টোবর স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে পাবনা স্বীকৃতি লাভ করে। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জেলার বেশির ভাগ অংশ রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখনকার দিনে এসব এলাকায় সরকারের দায়িত্বপূর্ণ কর্মচারীদের খুব অভাব ছিল।

পাবনা জেলা লোক সঙ্গীত, লোকগাঁথা, লোকনৃত্য, কৌতুক, নকসা, পালাগান ইত্যাদি সংস্কৃতিতে ঐতিহ্যমন্ডিত। প্রাচীনকাল থেকেই বস্ত্র শিল্প ছিল প্রসিদ্ধ। ভারতবর্ষের চার পঞ্চমাংশ রেশম আমদানী হতো জেলার হান্ডিয়াল বন্দর থেকে। এছাড়াও এ জেলা তাঁত শিল্পর জন্য বিখ্যাত।

এ জেলায় বর্তমানে শিক্ষার হার ৯৮.৪৭%। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে সর্বমোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪১টি। তার মধ্যে শতবর্ষ পেরিয়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী ইন্সটিটিউট। যা জিসিআই ইন্সটিটিউট নামেই পরিচিত। রয়েছে পাবনা জিলা স্কুল এবং ঐতিহ্যবাহি বিদ্যাপীঠ পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ও পাবনা বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। নির্মাণাধীন রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের মেরিন একাডেমি। এছাড়াও চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত এ জেলায়।

এ জেলায় জন্মেছেন কীর্তিমান অনেক ব্যক্তিত্ব তাদের মধ্যে অন্যতম- আবদুল করিম খন্দকার বীর উত্তম, বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী সুচিত্রা সেন, পৃথিবীর ২২ জন লিভিং ঈগলের একজন সাইফুল আজম, পাবনা জেলার সর্ব শেষ জমিদার ও বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ছেফাত উল্লাহ বিশ্বাস ও ময়েন উদ্দিন বিশ্বাস । এছাড়া সংগীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, আজিজুল হাকিম, চলচ্চিত্র পরিচালক রেদওয়ান রনি, বাংলাদেশের জনপ্রিয় নাট্যকার অভিনেতা ও লেখক বৃন্দাবন দাসসহ উল্লেখ্যযোগ্য ব্যক্তিবর্গের জন্মস্থান এই পাবনা জেলাতেই ।

মহান মুক্তাযুদ্ধে ও রয়েছে এ জেলার বিশেষ অবদান বৃটিশ থেকে শুরু করে দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ নানা ভাবেই আষ্ঠেপিষ্ঠে রয়েছে এ জেলা। মহান ভাষা আন্দোলনে ঢাকার পরেই ভাষার দাবিতে মিছিল হয়েছিল এই পাবনাতে। এবং সারাদেশে যখন ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পতাকা উত্তোলন হয়। তখনও শত্রু মুক্ত হয়নি এ জেলা। ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় পাবনা। জেলার ৯ উপজেলা ও ১১ থানার মধ্যে পাবনা সদর, আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, সাঁথিয়ায় রয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গণকবর ও বদ্ধভূমি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পর্যায়ক্রমে এই গণহত্যা ও বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিত করে অধিকাংশ স্থানেই মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে।

পাবনার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা জগতে উল্লেখ্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাবনা মানসিক হাসপাতাল। পাবনা সার্কিট হাউজ। চাটমোহরের শাহী মসজিদ, হান্ডিয়ালের জগন্নাথ মন্দির, পাবনা সদরে কাঁচারী মসজিদ, শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র আশ্রম, জোড়বাংলা, জগশেঠের কুটিবাড়ি, শহরের রায়বাহাদুর গেট, তাঁড়াশ বিল্ডিং, পাকশী ফুরফুরা খানকা শরীফ, পাকশী রেলওয়ে কলোনী,ঈশ্বরদীতে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ,সুজানগরে গাজনার বিল, ঈশ্বরদীতে রাসেল পার্কসহ নানা দর্র্শনীয় ও ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থাপনা রয়েছে এ জেলাতে।

অর্থনীতিতেও বেশ সমৃদ্ধ এ জেলা। এখানে প্রচুর ছোটবড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানা গড়ে উঠেছে। যেমন, স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড,স্কয়ার ট্রয়লেটিজ লিমিটেড,স্কয়ার কনজুমার প্রডাক্ট লিমিটেড,ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড,নিয়ন ফার্মা,রশিদ রাইস ব্রান ওয়েল, বেঙ্গল মিট। এছাড়া পাবনা শহরে বিসিক শিল্প নগরী রয়েছে যেখানে যথেষ্ট সংখ্যক শিল্প কারখানা আছে।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like