Home জাতীয় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণ : পুলিশ প্রধান

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণ : পুলিশ প্রধান

by Amir Shohel

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণ হয়েছে দাবি করে পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের হামলা আমরা অবশ্যই এ দেশের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে কঠোর ভাবে মোকাবিলা করব।

১২ ডিসেম্বর শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সরকারি কর্মকর্তা ফোরামের এক প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

পুলিশ প্রধান বলেন, সাম্প্রতিক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে যে ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে, রাতের অন্ধকারে যারা ভাঙচুর করেছে সেই পিশাচদের প্রতি আমাদের তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা প্রকাশের ভাষা নেই। দেশ যখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা দেখেছি বারবার দেশটাকে পেছনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে।

‘আজকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ঐক্যবদ্ধ,তার নেতৃত্বে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’

বেনজীর আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু আমার দেশের সংবিধানের অংশ। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ,বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানচিত্র দিয়েছেন, বাংলা ভাষার স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এর উপর হামলা মানে সংবিধানের ওপর হামলা, রাষ্ট্রের ওপর হামলা, দেশের জনগণের ওপর হামলা।

তিনি বলেন, আমি প্রতিবাদের কথা বলব না। কারণ আমরা সরকারের অংশ। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে জনগণের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের হামলা আমরা অবশ্যই এ দেশের প্রচলিত আইন এবং যে প্রচলিত আছে তার মাধ্যমে মোকাবিলা করব। রাষ্ট্র অবশ্যই তার যে বিধি-বিধান আছে, দেশের যে আইন আছে তার মাধ্যমে রাষ্ট্র তাদেরকে কঠোর হস্তে মোকাবিলা করবে। আমরা রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে, রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে ১৮ কোটি মানুষকে নিশ্চিত করতে চাই, আশ্বস্ত করতে চাই। আমরা তাদেরকে কঠোর হস্তে মোকাবিলা করব। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণ, সংবিধানে বিরুদ্ধাচরণ।

‘রাষ্ট্র তৈরি হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে, এ জাতি রাষ্ট্র এদের (ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের) বরদাশত করবে না।’

এক শ্রেণির লোকজন আস্ফালন দেখাচ্ছে জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, এদেশে ধর্ম প্রচার করেছেন রুহানি আলেমবৃন্দ, সুফিবৃন্দ। তারা ভালোবাসার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বাণী দিয়ে এদেশের, এ অঞ্চলের মানুষকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বল প্রয়োগ করে, তলোয়ার উঁচিয়ে, পেশিশক্তির মাধ্যমে এদেশে এই অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেননি।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, আজকে আমরা দেখি অনেকে আস্ফালন করেন, পেশিশক্তি দেখান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। গণতান্ত্রিক দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ। অসাম্প্রদায়িকতার উপর দাঁড়িয়ে আমাদের উত্তরসূরীরা, পূর্বসূরী এ দেশ পরিচালনা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ উপহার দিয়ে গেছেন, আমরা এই দেশের মূলনীতি মূলমন্ত্রকে সংরক্ষণের জন্য বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের কর্মচারীরা প্রত্যেকেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

এক শ্রেণির হুজুরদের ফতোয় নিয়েও কথা বলেন পুলিশ প্রধান। তিনি বলেন, এক সময় এক শ্রেণির হুজুররা বলতেন ছবি তোলা হারাম, টিভি দেখা হারাম। এখন দেখি তারাও ছবি তুলছে, টিভি দেখছে। এমনকি ইউটিউব এর মধ্যে টিভির মতো করে তারা বক্তব্য রেখে সেটা অনলাইনে প্রচার করছে। অনেকেই দেখছি ইউটিউবে মিথ্যা, অসত্য তথ্য দিচ্ছেন। কখন কোনটা হারাম, কখন কোনটা হালাল একশ্রেণির মানুষের কথা আমরা বুঝতে পারি না।

‘দেশটাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মৌলবাদী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে চান কেন? এ যে এক শ্রেণির যারা এই কাজটি করছেন। কিছু হলেই ঢাকা শহরের জঙ্গি মিছিল, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া সৌদি আরবে এ রকম মিছিল দেখি না। আমাদের দেশে জঙ্গি মিছিল করে দেশটাকে জঙ্গিদের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? কার উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান? আজ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আমার মুসলমান ভাইয়েরা রক্তে রঞ্জিত। গত সপ্তাহে ফ্রান্সের মুসলিম বিরোধী আইন তৈরি হয়েছে, দায়ী কে? ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে মডারেট দেশ ফ্রান্স, সেই ফ্রান্সকে কারা মুসলিম বিদ্বেষী বানিয়েছে? উন্নত দেশগুলোকে মুসলমানদের দরজা বন্ধের জন্য কারা কাজ করছে?

বেনজীর আহমেদ বলেন, দেশবাসীকে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদেরকে এই বিষয়গুলো বুঝতে হবে, আমাদের বুঝতে হবে। কারা দুশমন? কারা স্বেচ্ছাচারিতা করছে? কারা ইসলামকে বিতর্কিত করছে। নিরাপদ মুসলমানকে আরেকজন মুসলমান কিভাবে খুন করে এটা ইসলামের কোন পর্যায়ে আছে? মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মসজিদের মিম্বরে বসে রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন, আরেক শ্রেণির লোকজন মহাসিংহাসনে বসে একজনের পিছনে বাতাস দেয় আরেকজনের গাঁ টিপে। এটা কোন নিয়ম?

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৯টি ক্যাডারের প্রতিনিধিরা এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

সভাপতির বক্তব্যে আহমদ কায়কাউস বলেন, আজকে এখানে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমাদের জীবদ্দশায় জাতির পিতার অসম্মান হতে দেব না। এটাই হলো আমাদের আজকের অঙ্গীকার। জাতির পিতার প্রতি আমরা কতটুকু ঐক্যবদ্ধ এটা স্পষ্ট। ২৯টি ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মাঝে অনেক সময় অনেক বিষয় নিয়ে মতানৈক্য হয় কিন্তু আজকে আমরা বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে প্রতিবাদ সমাবেশে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এটা হলো জাতির পিতার শক্তি।

এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্টেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন সমাবেশে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি স্বাধীনতার ৫০ পূর্তিকালেও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিক ভাবে জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রাণের স্পন্দন। বঙ্গবন্ধুর নামের সাথে মিশে আছে আমাদের আবেগ-অনুভূতিও। জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বঙ্গবন্ধু। তিনি স্বাধীনতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেউ যখন কথা বলে আমাদের প্রাণে লাগে। এ ব্যাপারে দেশের ১৭ কোটি মানুষের দ্বিমত থাকার কথা নয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো প্রকার অপমান, অবজ্ঞা সহ্য করব না। মেনে নেব না। জাতির পিতার সম্মান আমরা রাখব অম্লান। জাতির পিতার সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে আমরা সকল জেলা উপজেলা বিভাগের সরকারি কর্মকর্তা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, বদ্ধপরিকর ও ঐক্যবদ্ধ।

খাদ্য সচিব মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম, আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা, বিসিএস স্বাস্থ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ. ম. সেলিম রেজা, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকসহ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৯টি ক্যাডারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like