শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের স্টলে স্টলে পিঠার পসরা সাজিয়ে চলছে বিকিকিনি। বাহারি রঙের সাথে বৈচিত্র্যময় ডিজাইন ও নকশায় অনন্য হয়ে উঠেছে কনকনে হিমেল শীতের পৌষের সন্ধ্যা। দোকানে বানাচ্ছে বিক্রেতা আর কিনছে ক্রেতারা। আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য পিঠাপুলির সাথে সেলফি তুলে পিঠা কেনা ও খাওয়ার দৃশ্যকে স্মৃতিময় করে রাখার চেষ্টাও লক্ষনীয় ছিল শিল্পকলা একাডেমিতে আগত পিঠাপ্রেমীদের মাঝে।
অন্যদিকে মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে নৃত্যের ছন্দ ও সুরের মূর্চ্ছনা। নৃত্যের তালে আর গানের সুরে পিঠা কেনা ও খাওয়ায় শিল্পকলা একাডেমিজুড়ে ফুটে উঠেছে চিরচেনা বাঙালি সংস্কৃতির শ্বাশতরূপ। এমন দৃশ্যই দেখা যায় প্রতিদিন শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া জাতীয় পিঠা উৎসবে। সারাদেশের পিঠাশিল্পীদের অংশগ্রহণে প্রায় ৫০টি স্টল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের উৎসব।
গত ৫ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমির কফিহাউজের মুক্তমঞ্চ থেকে নানা রঙের বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দশদিনের এই পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এসময় উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের বিভিন্নস্থান থেকে বেলুন পৌষের সাঁঝের আকাশে বেলুন ওড়ান অনুষ্ঠানে আগতরা। জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে পঞ্চদশ আসর এটি। উৎসবের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পিঠা খাওয়া ও বিকিকিনির পাশাপাশি প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলছে নাচ, গান, আবৃত্তি, অ্যাক্রোবেটিক ও পথনাটকসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা।
পিঠা বাঙালির চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। শীত আর পিঠা একে অপরের পরিপূরক। বাংলার গ্রামের মা, চাচি, খালা, বোন, ভাবিদের চিরায়ত সেই ঐতিহ্য নগরজীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে। আবহমান বাংলার এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরার লক্ষ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ বিভাগীয় পর্যায়ে জাতীয় পিঠা উৎসবের আয়োজন করে।
দুধ চিতই, চিতই পিঠা, ভাঁপা পিঠা, নারকেলের ভাজা পুলি, নারকেল পিঠা, নকশি পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, পাটিসাপটা, পাতা পিঠা, ক্ষীর কুলি, সুন্দরী পাকান, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, কাটা পিঠা, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, আন্দশা, কুলশি, কলা পিঠা, খেজুর পিঠা, গোকুল পিঠা, গোলাপ ফুল পিঠা, লবঙ্গ লতিফা, রসফুল পিঠা, সর ভাজা, পুলি পিঠা, পাকান পিঠা, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, বিবিখানা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, চুটকি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ফুল পিঠা, সেমাই পিঠা, দুধরাজ, ফুলঝুরি পিঠাসহ প্রায় শতাধিক রকমের পিঠা দিয়ে সাজানো হয়েছে উৎসবের স্টলগুলো।
১৪ জানুয়ারি শুক্রবার শেষ হবে দশদিনের এই পিঠা উৎসব। সমাপনী আসরে সেরা পাঁচজন পিঠাশিল্পীকে প্রদান করা হবে সম্মাননা।
ভয়েসটিভি/এএস