দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপতির নিয়োগ আদেশ পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতা বলে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেছেন। উক্ত নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’
এদিকে সুপ্রিমকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে নতুন প্রধান বিচারপতির শপথ অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন প্রধান বিচারপতির শপথ পাঠ করাবেন। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যান। দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বহুল আলোচিত পদত্যাগের পর ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৪৭ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে তিনি অবসরে যান। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার স্থলাভিষিক্ত হলেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। ১৯৭২ সালে তিনি খোকসা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর সাতক্ষীরা আচার্য্য প্রফুল্ল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭৪ সালে তিনি ওই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৭৬ সালে স্নাতক পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি ১৯৭৮ সালে এমএ করেন। তারপরে তিনি ধানমন্ডি ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৮১ সালে তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে একজন আইনজীবী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকার্ভুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে তাকে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে বাদ দেয়। পরে আদালতের রায়ে ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি তাকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন। সর্বশেষ গত বছরের ৩ মে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান পদে পুনঃনিয়োগ পান তিনি। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার কর্মজীবনে অনেকগুলো জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ রায় প্রদান করেন। একজন সফল বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও অংশ নেন।
ভয়েসটিভি/এমএম
