Home জাতীয় সন্ধ্যা হলেই বিমানবন্দরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা, উৎস কোথায়?

সন্ধ্যা হলেই বিমানবন্দরে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা, উৎস কোথায়?

by Mesbah Mukul

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশার আক্রমণে মুহূর্ত  দাঁড়ানোর উপায় নেই। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে মশা কমলেও বাইরে বেড়েছে অসহনীয় মাত্রায়। এমনকি উড়োজাহাজের ভেতরেও মশা ঢুকে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে যাত্রীদের।

দেখা গেছে, বিমানবন্দরের আশপাশের নোংরা ডোবা-জলাশয়গুলোই মশা প্রজননের প্রধান উৎস। এগুলো পরিষ্কারের সমন্বিত উদ্যোগ নেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মধ্যে। ফলে বন্দর এলাকায় মশা নিধনের উদ্যোগও বিশেষ কাজে আসছে না।

বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বিমান বন্দরে মশা নিধনে প্রতিদিন সকালে লার্ভিসাইড স্প্রে করা হয়। বিকেলে ইনসেকটিসাইড স্প্রে ও ফগিং করা হয়।  টার্মিনালের গেটগুলোতে ধূপ জ্বালানো ও গেটগুলোতে বসানো হয়েছে মশা মরার যন্ত্র। তবু মশার উৎপাত কমছে না।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সন্ধ্যা হলেই শাহজালাল বিমানবন্দরে ঝাঁক বেঁধে আসে মশার দল। এতে ভেতরে-বাইরে অনেককেই দেখা যায় কয়েল জ্বালাতে। বেশি ভোগান্তি হয় বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কর্মীদের। দিনের বেলাও তাদের মশার উৎপাত সহ্য করতে হচ্ছে।

সৌদিগামী যাত্রীর স্বজন আব্দুল আলিম বলেন, ঢাকার অন্য জায়গাতেও মশা আছে। কিন্তু বিমানবন্দরে মনে হয় কয়েকগুণ বেশি। একটা দেশের প্রধান বিমানবন্দরের এমন অবস্থা কাম্য নয়। কয়েক ঘণ্টা এখানে থাকতে হবে, তাই কয়েল কিনলাম। এতেও কাজ হচ্ছে না।

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, মশা নিধন প্রক্রিয়া চলমান আছে। ট্রেডিশনাল পদ্ধতিও অনুসরণ করা হচ্ছে— ধূপ দেওয়া হচ্ছে। এসব বিমানবন্দরের জন্য শোভনীয় নয়। তবে মশা থেকে তো মুক্তি পেতে হবে। অ্যাপ্রোন এলাকায়ও ফগিং করা হচ্ছে। আমি নিজে দেখেছি এয়ারক্রাফটের ভেতরেও মশা। এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছি। এয়ারক্রাফট বোর্ডিং ব্রিজে যুক্ত হওয়ার সময়ই মশা ঢুকে পড়ে। এ কারণে বোর্ডিং ব্রিজগুলোতে স্প্রে রাখা হয়েছে। এয়ারলাইনসগুলোকে বলা হয়েছে, যাত্রী প্রবেশের আগেও যেন উড়োজাহাজে মশার ওষুধ স্প্রে করে।

তারপরও মশা কমছে না কেন? জবাবে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, বিমানবন্দর এলাকা ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার জায়গা। এটা আলোকিতও। এর আশপাশে পাঁচ কিলোমিটারও যদি পরিচ্ছন্ন না থাকে তবে মশা এখানে (বিমানবন্দরে) উড়ে আসবে। এখন সিটি করপোরেশন আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখতে পারলে বিমানবন্দরও মশামুক্ত হবে।

এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কিন্তু সিভিল এভিয়েশনকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে মশা মারার মেশিন কিনে দিয়েছি। তাদের কেনার সক্ষমতা আছে। তারপরও দিয়েছি। আমার মনে হয় সিটি করপোরেশন, সিভিল এভিয়েশন সবা্ই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে মশার উৎপাত কমাতে পারবো।’

ওষুধ দিয়েও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন প্রশ্নে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে কিনা এটাও গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধের মাত্রা নিম্ম পর্যায়ের থাকলে, কিংবা নিন্মমানের হলে মশা মরবে না। এতে তারা আরও রেজিস্ট্যান্ট হয়ে উঠবে। মশার ডিম পাড়ার জায়গাগুলো পরিষ্কার না করে শুধু ফগিং করে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, কোনও এলাকায় যদি মশার উৎপাত অস্বাভাবিক বেড়ে যায় তবে বুঝতে হবে, সেই এলাকার পরিবেশ মশার প্রজনন উপযোগী। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের উচিত এ কাজে কীটতত্ত্ববিদের পরামর্শ নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like