Home জাতীয় বুড়িগঙ্গার নতুন বিপদ চেগবেগা

বুড়িগঙ্গার নতুন বিপদ চেগবেগা

by Mesbah Mukul

কোস্টারিকা, পানামা এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিস্তৃর্ণ জলাশয়ে ব্যাপকহারে দেখা যায় ‘সাকার ফিশ’। দ্রুত বংশবিস্তারকারী মাছটি সম্প্রতি বুড়িগঙ্গা নদীতে আশঙ্কাজনকভাভে ছড়িয়ে পড়ায় বিলীন হবার পথে রয়েছে দেশীয় মাছ। বেশ কয়েক বছর ধরে এর বিচরণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও দেখা যাচ্ছে। চীন, মিয়ানমারের পর এবার এই মাছের ঝাঁক দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশেও।

এর মূল নাম ‘সাকার মাউথ ক্যাটফিস’ কিন্তু সাকার ফিশ নামে অধিক পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকাসটোমাস। তবে বাংলাদেশে একে চেগবেগা মাছ এবং কোনো কোনো অঞ্চলে একে গ্যাগট নামে চেনা যায়। এখ্ন পর্যন্ত এই মাছের দুটি প্রজাতি পাওয়া যায়। একটি সাদা, গায়ের ওপর ছোপ ছোপ দাগ। অপরটি কালো। এর ওপর সাদা ডোরাকাটা দাগ রয়েছে।

সাকার ফিশ মূলত সাধারণ অ্যাকোরিয়ামের জন্য আদর্শ মাছ। কারণ এই মাছ অ্যাকোরিয়ামের ময়লা খেয়ে বেঁচে থাকে। সম্প্রতি বুড়িগঙ্গা নদীতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে ভিনদেশি এই সাকার ফিশ। দ্রুত বংশবিস্তারকারী মাছটির দখলে পুরো বুড়িগঙ্গা নদী। বর্তমানে বাংলাদেশের নদ-নদীতে কালো সাকার ফিশটি ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে।

মাছটির পিঠে এবং শরীরের দুপাশে বড় ধারালো পাখনা আছে। দাঁতগুলোও বেশ ধারালো। সাধারণত আগাছা, জলজ পোকামাকড় ও ছোট মাছ এদের প্রধান খাবার। এরা ছোট মাছ ও জলজ উদ্ভিদ খাওয়ার কারণে নদীতে অন্যান্য মাছের পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। পানি দূষণের কারণে যেখানে অন্য মাছ বাঁচতে পারে না, সেখানে এই মাছ দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে। এমনকি পানি ছাড়াও মাছটি ২৪ ঘণ্টা জীবিত থাকতে পারে।

বুড়িগঙ্গায় গত কিছুদিন ধরেই প্রচুর পরিমাণে দেখা যাচ্ছে এই সাকার মাছ। নদীর তীরে দাঁড়ালেই দেখা মিলে ঝাঁকে ঝাঁকে সাকার মাছের অস্তিত্ব। নদীতে এখন জাল ফেললেই কমপক্ষে ১০০ থেকে ২০০টি সাকার মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের হাতে।

উপজেলার শুভাঢ্যা এলাকার বাসিন্দা তৈয়ব আলী বলেন, ‘এই মনে করেন বুড়িগঙ্গায় নৌকা চালাই ২০ বছর ধরে। চেগবেগা বুড়িগঙ্গায় এবারের মতো আগে এত বেশি দেখিনি। বছর দু-এক আগে জেলেদের জালে দু-একটি ধরা পড়লেও এখন প্রতিবার জালে ১০০–২০০টি চেগবেগা উঠছে।’

কেরানীগঞ্জর জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘সাকার ফিশ মূলত ভিনদেশি প্রজাতির অ্যাকোরিয়ামের মাছ। এটা খুব দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে এবং যে কোনো পরিবেশেই টিকে থাকতে পারে। বর্তমানে উন্মুক্ত জলাশয়ে ব্যাপক হারে দেখা যাচ্ছে এই মাছ। এটা আমাদের জন্য একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

সেলিম রেজা বলেন, ‘এ মাছটি এখনো ক্ষতিকর প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃত না। কিন্তু জলাশয়ে এই মাছ বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের আবাসস্থল কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া এই মাছটি সর্বভুক। দেশীয় মাছের পোনা ও ডিমও খেয়ে ফেলছে। জলাশয়ে এ মাছের আধিক্য দেশীয় প্রজাতির মাছের বিলুপ্তির কারণ হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মাছটি নিয়ে দ্রুত গবেষণা হওয়া দরকার। এটি যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে এটা নির্মূল করা সম্ভব নয় বললেই চলে। তবে পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে এটা খাওয়ার উপযোগী কিনা, সেটা আগে খতিয়ে দেখা যেতে পারে।’

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like