Home অপরাধ বুড়িমারীতে পুড়িয়ে হত্যা : আরও ৪ জন দুই দিনের রিমান্ডে

বুড়িমারীতে পুড়িয়ে হত্যা : আরও ৪ জন দুই দিনের রিমান্ডে

by Amir Shohel
দায় স্বীকার

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে গণপিটুনি দিয়ে আবু ইউনুস মো. সাহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যার পর মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আরও ৪ জনের দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ২০ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

৬ ডিসেম্বর রোববার দুপুরে আমলি আদালত-৩ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফেরদৌসী বেগমের আদালত চার জনের দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ৫ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে আমলি আদালত-৩ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফেরদৌসী বেগমের আদালতে তাদেরকে সোপর্দ করে ৩ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।

রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের কামারপাড়া গ্রামের জুয়েল হোসেনের ছেলে মোতাহার হোসেন (২১), একই গ্রামের সহিদার রহমানের ছেরে আমির হোসেন (৩০), বুড়িমারী লাইনেরপাড় গ্রামের জুয়েল রানার ছেলে বিপ্লব হোসেন লিমন (১৯) ও একই গ্রামের বানার উদ্দিনের ছেলে আতিয়ার রহমান পাইয়া (৩৫)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপ পরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন বলেন, বহুল আলোচিত জুয়েল হত্যায় দায়ের করা হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনে হামলার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার দিনগত রাতে ৪জনকে আটক করা হয়।

তদন্তে ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচুরের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা পওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ ভাঙচু ও লুটপাটের মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। ৬ ডিসেম্বর রোববার আদালত শুনানি শেষে চার আসামির প্রত্যেককে দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে ২০ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। যার মধ্যে শেষের চারজন ইউনিয়ন পরিষদ ভাংচুর ও লুটপাট মামলায়। বাকী ১৬ জনকে হত্যা মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়।

জুয়েল হত্যার ঘটনায় দায়ের করা তিন মামলায় পুলিশ ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে হত্যা মামলায় ২০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। যার মধ্যে মূলহোতা বুড়িমারী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি আবুল হোসেন ওরফে হোসেন ডেকোরেটর এবং মসজিদের খাদেম জোবেদ আলীসহ ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক।

এর আগে গত ২৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক আবু ইউনুস মো. সাহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রিপাড়ার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, আবু ইউনুস মো. সাহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামে একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে ওপর পড়ে যায়। সে সময় কোরআন ও হাদিস বই তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।

সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। সে সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সে সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে পাটগ্রাম থানার ওসি সুমন্ত কুমার মহন্তসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ১৭ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাটের ডিসি আবু জাফর ও এসপি আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত জুয়েলের সঙ্গী সুলতান রুবায়াত সুমনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের চাচাত ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে হত্যাসহ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার করা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বুড়িমারীতে কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা পায়নি। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে হত্যা ও পরে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন দু’টি তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like