Home ভিডিও সংবাদ বেগম রোকেয়ার ঐতিহাসিক আতুর ঘর

বেগম রোকেয়ার ঐতিহাসিক আতুর ঘর

by Amir Shohel

রংপুর শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রাম। এই গ্রামের বিখ্যাত সাবের পরিবারে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম নেন, নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া। তাঁর পিতার নাম জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ও মাতার নাম রাহাতুন্নেসা চোধুরাণী।

বেগম রোকেয়ার পিতা ছিলেন পায়রাবন্দের জমিদারীর সর্বশেষ উত্তরাধিকার। তার মাতা ছিলেন বলিয়াদী জমিদার বংশের কন্যা। ১৮৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে রোকেয়ার বিয়ে হয় বিহারের ভাগলপুর এলাকার সরকারি চাকুরে সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে।

মাত্র ২৮ বছর বয়সে স্বামী হারান তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত নারীশিক্ষা বিস্তার ও সমাজসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর পাঁচজন ছাত্রী নিয়ে ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস’ স্কুল স্থাপন করেন। ১৯১০ সালের শেষ দিকে চলে যান কলকাতায়।

পায়রাবন্দে বসেই নিজের মেধা আর কর্মের মিশেলে তৈরি করেছিলেন নারী জাগরণের আলোকবর্তিকা। পায়রাবন্দে যে কেউ গেলেই দেখতে পাবে রোকেয়ার সেই আতুরঘরটি। স্বমহিমায় এখনো মাথা উঁচু করে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটির কিছু অংশ। ক্ষণজন্মা বেগম রোকেয়ার এই বাড়িটি একটি প্রাচীন নিদর্শন, যা অষ্টাদশ শতাব্দির দিকে তৈরি করা হয়। চারদিকে করা হয়েছে বাউন্ডারি ওয়াল। বাড়ির প্রতিটি ইট, দেয়াল, ঘরের দৃশ্য যেন আজো সাক্ষ্য দিচ্ছেন রোকেয়ার সেই আহ্বান ‘জাগো গো ভগিনি’।

রোকেয়ার আতুরঘরটি দেখতে প্রতিনিয়তই সেখানে ছুটে যাচ্ছেন, রোকেয়া অনুরাগী, দর্শনার্থী ও পর্যটকরা। এই বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। তাই ছায়া’সুনীবিড় হয়ে উঠেছে বাড়িটি। পাখির কলতান আর কিচির-মিচির শব্দে অন্যরকম এক ভালোলাগার অনুভূতি তৈরি হয় এখানে। আতুরঘরকে ঘিরে জ্ঞান চর্চা ও পর্যটনের নান্দনিক স্পট তৈরি হয়েছে এই পায়রাবন্দেই।

তার লেখা অবরোধ বাসিনী, সুলাতানার স্বপ্ন, অর্ধাঙ্গী, মতিচুর ছাড়াও অসংখ্য বই সেসময় নারী জাগরণ আন্দোলনকে উজ্জীবিত করে। আজও আন্দোলিত করছে বিশ্ব নারী সভ্যতাকে। ২০০৪ সালে বিবিসি পরিচালিত ২০ বিশ্বসেরা নারীর ৬ নম্বর তালিকায় স্থান পেয়েছেন পল্লী গ্রামের এই রোকেয়া।

বেগম রোকেয়ার স্মৃতি রক্ষায় আতুর ঘরের পাশেই ১৯৯৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০০১ সালের ১লা জুলাই রংপুরের পায়রাবন্দে সোয়া তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ‘বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রটি’ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।

এখানে রয়েছে প্রশিক্ষণ কক্ষ, ৯টি শোকেজ সম্বলিত একটি সংগ্রহ শালা, কম্পিউটার ও একটি ফটোস্ট্যাট মেশিন সংবলিত আধুনিক গবেষণা কক্ষ, ৩ হাজার মূল্যবান বই সমৃৃদ্ধ দৃষ্টি নন্দন পাঠাগার, ১০০ আসন বিশিষ্ট সেমিনার ও ৩০০ আসনের অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত অডিটোরিয়াম স্থাপন করা হয়।

বাংলা একাডেমির তত্বাবধায়নে স্মৃতি কেন্দ্রটি উম্মুক্ত করে দেয়া হলে এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। ১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা যান এই মহিয়ষী নারী । সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।

ভয়েসটিভি/এএস

You may also like