বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠক হতে যাচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। তবে এ বৈঠক আগের মতো সামনাসামনি আর হচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এ আলোচনাটি হবে ভার্চুয়ালি।
দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠকটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টায়। এর দুই ঘণ্টা আগে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। এর মধ্যে রয়েছে হাইড্রোকার্বনে সহযোগিতার বিষয়ে রূপরেখা, হাতির সুরক্ষায় অভয়ারণ্য নিশ্চিত করা, বরিশালে প্রকল্প স্থাপন ও হাই ইমপেক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
বৈঠকের আলোচ্যসূচির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের যতগুলো বড় বড় ইস্যু আছে, সব ইস্যুই আমরা বৈঠকে তুলব। পানি সমস্যা, সীমান্তে অনিশ্চয়তাসহ সব কটি ইস্যুই তুলে ধরব।’
এই শীর্ষ বৈঠক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৪ ডিসেম্বর রাতে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, দুই শীর্ষ নেতা করোনা-পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা আরও জোরদার করাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করবেন। করোনা মহামারিতে দুই নেতা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে করোনা-পরবর্তী সহযোগিতার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানো, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনসহ দুই নিকট-প্রতিবেশীর সম্পর্কের নানা দিক আলোচনায় আসবে।
এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সম্মেলনে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। ওই সম্মেলনের ফাঁকে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন তিনি।
গত এক দশকে দুই দেশের সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত এবং গভীর হলেও সীমান্ত হত্যা এখনো বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে ‘পথের কাঁটা’ হিসেবে রয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সীমান্তে অন্তত ৪২ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এমনকি গতকাল বুধবার ভোরেও লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশি এক তরুণ নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ : প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ‘সীমান্তে হত্যা অব্যাহত থাকাটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকারের বিষয়টি ভারতকে আবার মনে করিয়ে দেয়া হবে।’
অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, তিস্তা চুক্তি যে আপাতত হচ্ছে না, এ ব্যাপারে মোটামুটি সবাই নিশ্চিত। তবে তিস্তার কারণে অন্য নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টি যাতে আটকে না থাকে, এবারের শীর্ষ বৈঠকে এর ওপর গুরুত্ব দেয়া হবে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল আলোচনার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ একটি স্মারক ডাকটিকিটের উদ্বোধন করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের ডাক বিভাগ ডাকটিকিটটি বের করেছে। এরপর ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর’-এর প্রমো দেখানো হবে। আগামী বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এই ডিজিটাল জাদুঘরের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর জীবন আর কাজের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই জাদুঘর প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের পাঁচটি এবং ভারতের পাঁচটি শহরে দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছে দুই দেশ। এ ছাড়া উদ্বোধন করা হবে ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলসংযোগ। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ওই রেলপথ ধরে এক দেশ থেকে অন্য দেশের গন্তব্যে যাবে ট্রেন।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীকে নরেন্দ্র মোদির শুভেচ্ছা
ভয়েস টিভি/এসএফ