Home অপরাধ তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার মামলা আটকে আছে সাক্ষ্য গ্রহণে

তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার মামলা আটকে আছে সাক্ষ্য গ্রহণে

by Shohag Ferdaus
তাজিয়া মিছিলে

পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে হোসেনী দালানে বোমা হামলা চালানো হয়। ভয়াবহ এ হামলায় দুই জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ওই ঘটনায় চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। কিন্তু সেই বোমা হামলার বিচার ৫ বছরেও শেষ হয়নি। চার্জশিটে দুই নাবালককে সাবালক দেখানোর কারণে ২২ মাস ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ স্থবির রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, দ্রুত এই আলোচিত মামলাটির বিচার কার্যক্রম শেষ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

তিন বছর আগে মামলাটির বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এ মামলার বিচার করছেন। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৪৬ সাক্ষীর মধ্যে ১১তম সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়ার পর আর অগ্রগতি হয়নি। প্রায় দুই বছর ধরে দুই আসামির বয়সের জটিলতা ও বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে আছে।

সবশেষ ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর দুই আসামির বয়সের জটিলতার কারণে মামলাটির আর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য আছে।

মামলার বিষয়ে ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী রুহুল আমিন বলেন, ‘দুই আসামির বয়স নির্ধারণে জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আদালতের নির্দেশে জটিলতা নিরসন হয়েছে। এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য আছে।’

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, আলোচিত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের এক পর্যায়ে আসামি জাহিদ হাসান ওরফে রানার আইনজীবী দাবি করেন, ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর। এর সপক্ষে তারা জন্ম সনদ, পরীক্ষার সনদ জমা দেন। আদালত সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জাহিদ হাসান ওরফে রানাকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্পূরক চার্জশিট দিতে বলেন। গত বছর পুলিশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সম্পূরক চার্জশিট জমা দিলে ওই আসামির মামলা শিশু আদালতে পাঠানোর আদেশ হয়।

এরপর মাসুদ রানা নামে কারাগারে থাকা আরেক আসামির আইনজীবী তার আসামিকেও অপ্রাপ্ত ঘোষণা করে শিশু আদালতে বিচারের আবেদন করেন। এর সপক্ষে তারা জন্ম সনদ, পরীক্ষার সনদ জমা দেন। আদালত সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রানাকেও শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্পূরক চার্জশিট দিতে বলেন। ওই আসামির বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের পর তার বিচার শিশু আদালতে স্থানান্তরের আদেশ দেয়া হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘মামলার জাহিদ হাসান ওরফে রানা ও মাসুদ রানা দুই আসামি নাবালক হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাদের সাবালকের সঙ্গে চার্জশিট দেয়। আমরা তাদের জন্ম সনদ, পরীক্ষার সনদ জমা দিই। আদালত সব কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে দুই আসামিকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দিতে বলেন। পুলিশ আদালতের নির্দেশে সম্পূরক চার্জশিট দেয়। এখন তাদের দুইজনের বিচার শিশু আদালতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নাবালকের বিচারের জন্য দোষীপত্র দিতে হয়। কিন্তু পুলিশ সম্পূরক চার্জশিট দিয়েছে। এতে এখনো আইনগত জটিলতা রয়ে গেছে। আমরা সামনের ধার্য তারিখে এ বিষয় আদালতে একটি আবেদন দেব।’

২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর প্রথম প্রহরে তাজিয়া মিছিলের জন্য পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে হোসানী দালান ইমামবাড়ায় সমবেত হয়েছিলেন ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ। পরপর তিনটি বোমা বিস্ফোরণে অর্ধশত আহত হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাজ্জাদ হোসেন নামের এক কিশোর ও জামাল উদ্দিন নামে একজন মারা যান।

হামলার দুদিন পর অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে চকবাজার থানায় মামলা করে পুলিশ। মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ।

পরের বছর ১৮ অক্টেবর বোমা হামলার মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর মধ্যেই ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ; অভিযানের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন তিন জঙ্গি নিহত হয়।

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like