সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে আটটার দিকে রাজধানীর মগবাজারের আদ্-দ্বীন হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এর আগে ২৩ অক্টোবর শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাহিদ ইয়াসমিন বলেন, গত ১৫ তারিখ থেকে স্যার (রফিক-উল হক) আমাদের এখানে ভর্তি আছেন। স্যার এখন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে আছেন। স্যারের অবস্থা অপরিবর্তিত।
তিনি বলেন, স্যারের রক্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করেছি। কিন্তু তাতে কোনো একটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। মেডিক্যাল বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছি। ওনারা দেখেছেন। ওনারাও বলেছেন স্যারের শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
জানা গেছে, ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে বার্ধক্যজনিত ইউরিন ইনফেকশন ও রক্ত শূন্যতার কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৬ অক্টোবর আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে আদ্-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি হাসপাতালের ডা. রিচমন্ড রোল্যান্ড গোমেজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
পরে ১৭ অক্টোবর সকালে তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় হাসপাতাল থেকে বাসায় নেয়া হয়। কিন্তু ওইদিন দুপুরের পরই তাকে ফের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। ২১ অক্টোবর বুধবার ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়
২০১৭ সালে বাম পায়ের হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের পর থেকে তার চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়ে। এ কারণে গত ৩ বছর ধরে তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেননি। বয়োবৃদ্ধ খ্যাতিমান এ মানুষটির জীবনের শেষ সময়গুলোর বেশিরভাগই কেটেছে বিছানায় শুয়ে। চলাফেরা করতেন হুইল চেয়ারে।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ১৯৩৫ সালের ২ নভেম্বর কলকাতার সুবর্ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের ষষ্ঠ প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল)।
তিনি ১৯৫৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ১৯৫৭ সালে দর্শন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করেন। ১৯৬২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে বার এট ল’ সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৬৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে এবং ১৯৭৩ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে আইন পেশা শুরু করেন তিনি। বর্ণাঢ্য জীবনে আইন পেশায় দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় পার করেছেন।
ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন।
বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুই নেত্রী যখন কারাগারে তখন তাদের জন্য অকুতোভয়ে আইনি লড়াই করেছিলেন তিনি। একইসঙ্গে দুই নেত্রীর সমালোচনা করতেও পিছপা হননি তিনি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বরাবরই সোচ্চার ছিলেন এই ব্যারিস্টার।
ভয়েস টিভি/এমএইচ
