Home জাতীয় দুই শিশুর অধিকার ফিরিয়ে দিতে মাঝরাতে বসলো হাইকোর্ট

দুই শিশুর অধিকার ফিরিয়ে দিতে মাঝরাতে বসলো হাইকোর্ট

by Shohag Ferdaus
হাইকোর্ট

সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবীর পিতৃহীন দুই নাতিকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতে মাঝরাতে বসলো হাইকোর্ট। পিতৃহীন দুই শিশুকে তাদের বড় চাচা বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না, এমন একটি সংবাদ মধ্যরাতে নজড়ে এলে তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিতে এবং নিরাপত্তা দিতে তাৎক্ষণিক এক বিচারপতি হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে আদেশ দেন।

৩ অক্টোবর শনিবার গভীর রাতে বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। পরে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি জানান, ধানমণ্ডি থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

জানা গেছে, রাজধানী ধানমণ্ডির একটি চারতলা বাড়ির মালিক সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবী। সম্প্রতি সাবেক এই আইন কর্মকর্তার ছোট ছেলে সিরাতুন নবী মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকে তার দুই ছেলে কাজী আদিয়ান নবী ও কাজী নাহিয়ান নবীকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছেন না তার বড় চাচা।

এর আগে, শিশু দুটির বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটনা ঘটে। বাবার মৃত্যু হলে শিশু দুটি কিছুদিনের জন্য তার মায়ের আশ্রয়ে থাকতে যায়। মায়ের কাছ থেকে নিজ বাসায় ফেরার চেষ্টা করে ওই দুই শিশু। কিন্তু তাদেরকে আর বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এ বিষয়ে ধানমণ্ডি থানাকে জানানো হয়। তবে পুলিশের অনুরোধেও শিশুদের বাড়িতে প্রবেশ করতে দেননি তাদের চাচা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেহান নবী।

শিশু দুজনের ফুফু (কেএস নবীর বোনের মেয়ে) মেহরীন আহমেদ বলেন, ‘বিবাহবিচ্ছেদের জন্যে ওদের বাবা-মা আলাদা থাকতেন। ওরা ওদের বাবার সঙ্গেই দাদার বাড়িতে থাকতো। কিন্তু ওদের বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি খুব বেশি বিষণ্ন হয়ে পড়লে ওদের মায়ের কাছে যায়। কিছুদিন সেখানে থেকে আবার বাড়িতে ফেরে। কিন্তু তাদের জন্য বাসার গেট খোলা হয়নি। আমরা পরিবার থেকে যোগাযোগ করি। শিশুদের বড় চাচা কাজী রেহান নবীকে ফোন করি। কিন্তু তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে ওদের পরে বাড়িতে আসতে বলেন। এরপর আমরা ধানমণ্ডি থানাকে বিষয়টি অবহিত করি। পুলিশ এসে তাকে (কাজী রেহান নবী) ফোন করে অনুরোধ করেন। এরপর ধানমণ্ডি থানার ওসি (ইকরাম হোসেন মিয়া) আমাদেরকে পরেরদিন আসতে বলেন। কিন্তু শিশু দুটো দেখলো আগের দিন তারা বাড়ির কম্পাউন্ডে ঢুকতে পারলেও পরেরদিন বাইরের গেটও বন্ধ করে দেয়া হয় এবং ভেতরে কুকুর ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর আমরা আবার পুলিশকে জানাই। কিন্তু পুলিশ বললো- আমরা কিছু করতে পারবো না, আপনারা কোর্টের আশ্রয় নেন।’

তিনি আরও জানান, বাড়িটি এখনও কেএস নবীর নামে। সেদিক থেকে দেখলে ওই শিশু দুটিও ওই বাড়ির অংশীদার।

মেহরীন আহমেদ অভিযোগ করেন, ‘শিশুদের বাবার মৃত্যুর পর তার ব্যাংক-ব্যালেন্স দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারই বড় ভাই রেহান নবী।’

ঘটনাটি নিয়ে শনিবার রাত ১২টায় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। এসময় শিশু দুটির সঙ্গে তাদের ফুফু, সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ভার্চুয়ালি টিভি আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি প্রচারকালে মাঝরাতে বিষয়টি নজরে আসে বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের। এরপর প্রচারিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে তিনি মাঝরাতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে আদেশ দেন।

আদেশের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আমি বাচ্চা দুটির অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে লাইভে যুক্ত ছিলাম। ওই লাইভ অনুষ্ঠান চলাকালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ বিষয়ে আদেশ দেন। পরে আদেশের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। আদালত তার আদেশে ওই দুই শিশুকে তাদের বাসায় (দাদা বাড়ি) রাখার ব্যবস্থা করতে ধানমণ্ডি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আদেশ বাস্তবায়ন করে সকালে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলে আদালত আদেশ দিয়েছেন বলেও জানান এই আইনজীবী।

আরও পড়ুন: এমসি কলেজের ঘটনায় অনুসন্ধান কমিটি করে দিলেন হাইকোর্ট

ভয়েস টিভি/এসএফ

You may also like