Home জাতীয় মে দিবস ও শ্রমিকদের করোনা চ্যালেঞ্জ

মে দিবস ও শ্রমিকদের করোনা চ্যালেঞ্জ

by Newsroom


আনজাম খালেক: সায়েদাবাদে মালামাল টানার শ্রমিক জাকির মিয়া এক ঝুড়ি ফল নিয়ে ফুটপাতে বসেছেন। পাশে ১০ বছরের সন্তান। ছেলেকে মাস্ক পরিয়ে বসিয়ে রেখেছেন। তার কাজ পুলিশ আসছে কিনা দেখা। পুলিশের গাড়ি দেখলেই ঝুড়িটি নিয়ে পাশের গেটে ঢুকে পড়বেন। গত ১৫ দিন ধরে এটা তার কাজের অংশ। করোনার জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও বাড়ির বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশ জারির পরে প্রথম কয়দিন তিনি বের হননি বাড়ি থেকে। পুলিশেরও কড়া পাহারা ছিল সেই সময়ে। এরপর ১৫ দিন যাওয়ার পরে টাকা ধার করে নেমে গেছেন ফুটপাতে, ভিন্ন পদ্ধতিতে নেমেছেন পাড়ার মধ্যে ঝুড়িতে ফলের ব্যবসা নিয়ে। ইমারত নির্মাণ শ্রমিক কবির হোসেন। শেষ কাজ করেছেন গত ২৭ মার্চ। যে বাসার কাজ করছিলেন তারা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় মাথায় হাত পড়ে তার। এক সপ্তাহের মজুরির টাকা হাতে ছিল। এখন চলার মতো অবস্থা নেই। স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। মাল টানা শ্রমিক, ইমারত নির্মাণ শ্রমিক কিংবা যেকোনও দিনমজুরের জন্য আবারও এসেছে মে দিবস, মজুরি ও শ্রমঘণ্টার অধিকারের কথা বলার দিন। কিন্তু এবার পকেটে টাকা নেই, হাতে কাজ নেই, কবে আসবে তাও জানেন না তারা। এমনকি তাদের যে সংগঠনগুলো আছে তারা বলতে পারছেন না, কবে লকডাউন শেষ হবে। কবে দিনচুক্তির শ্রমিকরা আবার কাজে ফিরে দুশ্চিন্তা মুক্ত হবেন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, দক্ষতা অনুযায়ী দিনে চারশ থেকে সাতশ টাকায় কাজ করেন ইমারত শ্রমিকরা। গত একমাস ঘরে বসা। সবকিছু এখন খুলে দিলেও সবাই কাজ পাবেন না। দিন চুক্তির মজুর, নির্মাণ শ্রমিকদের কাছে এই করোনাকালটি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা তাদের কাছে মুখ্য না। জীবন ও জীবিকা বড় বিষয়। সরকারি ওয়াদা অধিকাংশের কাছে পৌঁছেনি। ফলে মে দিবস এবার যে পরিপ্রেক্ষিতে, এরা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত, অবহেলিত। এদের এ অবস্থার মধ্যে রেখে বাকি সমাজ নিরাপদে থাকবে বলে মনোভাব কাজ করছে সমাজে।  তবে উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তদের সঞ্চয় আছে বলে লকডাউনে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছেন, কিন্তু শ্রমিক শ্রেণি সেটি পারছে না। মে দিবস শ্রমিকদের অধিকারের, সংহতির, ঐক্যবদ্ধতার এবং নতুন করে প্রেরণার দিবস। কিন্তু এই সময়ে তা ছাপিয়ে মহামারিতে কতোটা টিকতে পারবে, তাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

You may also like