Home জাতীয় রাজস্ব ঘাটতি এখনও দুই লাখ কোটি টাকার বেশি

রাজস্ব ঘাটতি এখনও দুই লাখ কোটি টাকার বেশি

by Mesbah Mukul

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রতি মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে গড়ে ২১ হাজার কোটি টাকার মতো। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে প্রতি মাসে গড়ে অন্তত ৩৪ হাজার কোটি টাকা করে আদায় করতে হবে। বাজেটের তথ্য অনুযায়ী পুরো অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এনবিআরকে আগামী ছয় মাসে ২ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি থাকবে প্রায় লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার সামান্য একটু বেশি রাজস্ব আদায় হলেও অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি থাকবে অনেক। তিনি বলেন, করোনা যেভাবে বিস্তার ঘটাচ্ছে, এটা যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এনবিআর। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এই ছয় মাসে ১৭ হাজার ৮১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা পিছিয়ে এনবিআর।

এনবিআরের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এক লাখ ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় এক লাখ ২৬ হাজার ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৮ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ৮৩.২৮ শতাংশ অর্জন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

আরও পড়ুন : বেনাপোলে ৩ হাজার ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতি

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলছেন, এনবিআর থেকে যেসব সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বেড়ে যাবে।

জানা গেছে, ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের প্রধান তিন খাত আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি-রফতানি শুল্ক কোনও খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি, বরং রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত ভ্যাটে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে আছে পাঁচ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকার বেশি। তবে বেশি পিছিয়ে আছে আমদানি ও রফতানি শুল্কে। এ খাতে সাড়ে ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ঘাটতি সাত হাজার ৯৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সবচেয়ে কম ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। এ খাতে ঘাটতি প্রায় চার হাজার ৯১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ।

অবশ্য শুধু ডিসেম্বর মাসের হিসাবে তিন খাত মিলিয়ে পিছিয়ে আছে চার হাজার ২৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ২৯ হাজার ৯১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক আহরণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ২৯৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বিপরীতে এনবিআরের সংগ্রহ ৪০ হাজার ২০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ৮৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। এছাড়া ভ্যাট বাবদ আয়ের ৫২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এনবিআর সংগ্রহ করেছে ৪৬ হাজার ৫৮৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ছয় মাস শেষে পিছিয়ে আছে পাঁচ হাজার ৮৯৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ খাতে প্রায় ৮৮.৭৭ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এদিকে আয়কর বাবদ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এনবিআর আদায় করেছে ৩৯ হাজার ৪২১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যদিও এ খাতে সবচেয়ে বেশি ৮৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে এনবিআর।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, করোনার ধাক্কা থেকে অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছিল। এখনও এই গতি অব্যাহত আছে। যদিও করোনা আবারও বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড করের আওতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টা কিছুটা সফল হচ্ছে। বাকি সময় নির্ভর করছে ওমিক্রন বা করোনার প্রভাব কেমন পড়ে সেটার ওপর।

ভয়েসটিভি/এমএম

You may also like