Home জাতীয় জিয়া আমাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন: রাষ্ট্রপতি

জিয়া আমাকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন: রাষ্ট্রপতি

by Newsroom
রাষ্ট্রপতি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদকে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদ তৎকালীন সময়ে ছাত্র নেতা ও তরুণ সাংসদ ছিলেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া রেকর্ডকৃত এক সাক্ষাৎকার থেকে এ তথ্য জানা যায়। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি মো.আব্দুল হামিদ নিজেই এ কথা জানান।

প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আমি ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করি। তখন বক্তৃতায় আমি বলেছিলাম, হিটলার-মুসোলিনি থেকে শুরু করে কোনও স্বৈরাচারই টেকেনি, এদেশেও স্বৈরাচার টিকবে না । এসময় তিনি জেলখানায় দুর্বিসহ কষ্টের ইঙ্গিত দেন।

তৎকালীন ছাত্র নেতা ও তরুণ সাংসদ হামিদ আরও বলেন, এই অপরাধেই বোধহয় কিছুদিন পর আমি গ্রেফতার হই। জেলখানার ভেতরেই জিয়াউর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠান। বলা হয়েছিল, প্রস্তাবটি না মানলে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। জীবনভর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে তার আদর্শ আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছি।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আমি তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি শোকাহত চিত্তে আরও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাঁর তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ শহিদদের প্রতি যাঁরা ১৯৭৫ সালের এ দিনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। ১৫ আগস্ট জাতির ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়।

আবদুল হামিদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তারা শুরু করেছিল বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির পালা। ইতিহাসের নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘাতকচক্র কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি আইন’পাশ করে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৫ আগস্ট বর্বরোচিত ঘটনা কেবল বাঙালির ইতিহাসের নয়, পৃথিবীর ইতিহাসেও বিরল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা বিরোধী চক্র পরাজিত হলেও দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত কখনও থেমে থাকেনি। স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ঘাতকচক্রের চক্রান্তের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশই হচ্ছে ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকাণ্ড।

আবদুল হামিদ ততকালীন সময়ের কথঅ উল্লেখ করে বলেন, ১৪ আগস্ট রাতে নানা জায়গায় আড্ডা দিয়ে এমপি হোস্টেলে ফিরি। ৩টা-৪টার দিকে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও একাধিক আওয়াজ শুনেছি। ভেবেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ-উল্লাস হচ্ছে, পটকা ফুটছে। সকাল ৭টার দিকে পাশের রুমের খন্দকার নুরুল ইসলাম (রাজবাড়ীর এমপি) এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলেন। রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছি তাই বেশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই তার মুখে শুনলাম ‘সর্বনাশ হয়ে গেছে’। তিনি দৌড়ে রেডিও নিয়ে এলেন। সেখানে বারবার বাজছে, ‘আমি মেজর ডালিম বলছি…’।

এর পরের কথাগুলো আমি আর শুনতে পারি না। আমার কান বন্ধ হয়ে আসে। মাথা ঘুরতে থাকে। আমার নেতাকে, আমার বঙ্গবন্ধুকে, বাঙালির জাতির জনককে ওরা মেরে ফেলেছে, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আমরা চেয়ে দেখি এমপি হোস্টেলের বাইরেও ট্যাঙ্ক ঘুরছে। অনেক এমপি এবং নেতাকে ফোন করি, অনেককেই পাই না। এমপি হোস্টেলে হামলা হতে পারে এই আশঙ্কার মধ্যেই বের হই। স্যান্ডেল পায়ে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেটে যাই। তারপর সেখান থেকে মহাখালীতে এক আত্মীয়ের বাসায়। কিশোরগঞ্জে গিয়েছি আরও পরে।

তিনি বলেন, আমি অধিষ্ঠিত হতে পেরেছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনেও। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া বাকি নেই। আমি শুধু চাই, এ দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরঞ্জীব থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি এই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এ জন্য তাকে বহুবার কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।

ভয়েস টিভি/টিআর

You may also like