Home জাতীয় লজ্জার দিন ১৫ই আগস্ট

লজ্জার দিন ১৫ই আগস্ট

by Amir Shohel

জাতির পিতাকে হত্যা। এ বড় লজ্জার। যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে। টিকে থাকবে বাঙালি জাতি। ততোদিন এ লজ্জা ও শোক বইতে হবে। বর্ণাঢ্য জীবন ছিল জাতির পিতার। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বাঙালি ও বাংলার নেতা। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি অধিকার বঞ্চিতদের প্রদীপ। জ্বলন্ত শিখা। বিশ্ব মানচিত্রে জাতি-ভূ-খণ্ড প্রতিষ্ঠার মহানায়ক। তাঁকেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। এই ঘৃণ্যদের বাঙালিয়ানায় বাস করার অধিকার নেই। তাদের কোনো পরিচয় নেই। জাতির পিতা বাঙালিদের পরিচিত করেছেন। অধিকার ও ভূখণ্ড দিয়েছেন। জাতি হিসেবে মর্যাদাও তারই দেয়া। অথচ সেই ঋণ শোধ করেনি তারা। মর্যাদা দিতে পারেনি। তাদের জন্যে এই বাংলা নয়। তারা বাঙালি নয়।

যে ক্ষত বাঙালি বয়ে বেড়াচ্ছে। তা গুটি কয়েক ঘৃণ্যদের জন্যে। তাদের ব্যক্তি স্বার্থের জন্যে। আক্রোশের নীল ক্ষত কখনই মুছে যাওয়ার নয়। রাজনীতি গণমানুষের জন্যে। সংগ্রাম অধিকার আদায়ের জন্যে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন জনগণের জন্যে। জেল জুলুম হুলিয়া মাথায় নিয়ে ঘুরেছেন সারা বাংলা। সবাইকে এনেছিলেন এক স্রোতে। যার ফল বাংলা ও বাংলাদেশ। তাঁর প্রতিটি ভাষণ গণমানুষের। তিনিও তাই। রাজনীতিতে তিনি তীব্র স্রোত হয়ে ছুটেছেন। আর ঢেউয়ের তালে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

এমন মহান নেতা বিশ্বে ক’জন আছেন। রাষ্ট্রীয় বাসভবন ছেড়ে নিজের বাড়িতে থেকেছেন। কোনো ভয় শঙ্কা কখনই তার মাঝে বাসা বাধতে পারেনি। বাঙালি কখনও তার বিপক্ষে দাঁড়াতে পারে না। বাঙালিদের কেউ তার দিকে অস্ত্র তাক করতে পারে বিশ্বাস করেননি। যে পাকিস্তানিরা সাহস করেনি। সেখানে বাঙালির হৃদস্পন্দন তিনি। যা বঙ্গবন্ধু সবসময় মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। সেই বাঙালি সেনা জান্তাদের বুলেট বিদ্ধ হবেন। তা ভাবনারও বাইরে থেকেছে সবসময়। যার মানচিত্রের চেয়েও বিশাল হৃদয়। তাঁর এমন ভাবনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। অথচ এই বিশালের বুকে বুলেট ছুঁড়েছি আমরা।

মাথা নত না করার চেতনা শিখিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠ। শোষিত মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ। দুর্বার আন্দোলন। কেবলই একটি দল নয়। পুরো জাতিকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সাহায্য করেছে। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বন্ধুপ্রতীম দেশ জনগণ এবং শুভকাঙ্খিদের। তাদের ধন্যবাদ দেননি, যারা বাঙালিদের বুকে রক্ত ঝরিয়েছে। বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধীতা করেছে, প্রকাশ্যে তাদের নাম উচ্চারণ করেছেন। এমন সাহসী উচ্চারণ কেবল শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। তিনি যৌক্তিক অবস্থানে থেকেছেন সবসময়। রাজনীতিতে কোনো ভুল তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। একারণে পাকিস্তানি জান্তারা বঙ্গবন্ধুকে ভয় পেয়েছে। তিনি কখনও ভয় পাননি।

একটি জাতির পিতা সবাই হতে পারে না। একদিনেও সম্ভব নয়। শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব-কৈশোর থেকে সেই ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন। দলের হয়ে মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। নিজে দল গঠন করে ছুটেছে মানুষের কাছে। আস্থা-বিশ্বাসে তিনি হয়ে উঠেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালি জাতির একমাত্র নেতা। যার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল জনগণকে নিয়ে। সেভাবেই আওয়ামী লীগও পরিচালিত হয়েছে। তার সব নির্দেশনা পৌঁছে গেছে মানুষের ঘরে ঘরে। পৌঁছে গেছেন তিনিও।

সেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রায় সপরিবারে হত্যা, বাঙালি হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। ১৫ই আগস্ট লজ্জার দিন। সেইসব দানবদের প্রতি ঘৃণার দিন। বাঙালির গৌরবে যারা আঘাত করেছে। চেতনা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাদের প্রতি ঘৃণা। বাঙালি হিসেবে আমরা লজ্জিত হে বঙ্গবন্ধু…

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
rizvynca@gmail.com

You may also like